হিন্দুর মৃতদেহ শ্মশানে দাহ হতে দেয়নি রমজানের পবিত্রতা রক্ষার অজুহাতে।

লিখেছেন Susupto Pathok

সিলেটের লোক যুগ যুগ ধরে ‘সহি ইসলামের’ চর্চা করে আসছে। সিলেটীরা প্রচন্ড ধর্মান্ধ। অনেক বছর আগে প্রথম সিলেট বেড়াতে গিয়ে শুক্রবার হোটেলে শুয়েছিলাম, হোটেলের বয়রা এসে দরজা ধাক্কিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য তাগাদা দেয়া দেখে অবাক হয়েছিলাম। এরকম অভিজ্ঞতা দেশের অন্য কোথাও হয়নি। এবারের রমজান মাসে সিলেটী হুজুররা রাস্তায় নেমে প্রকাশ্যে চায়ের দোকানগুলো বন্ধের হুমকি দিয়েছিলো। তারা বলেছিলো, এটা শাহজালালের দেশ! এখানে এসব চলবে না…।

কথাটা সত্যি নয়। শাহজালাল বহিরাগত হানাদার ছিলো। এই গোটা বাংলাই ছিলো ‘হিন্দুদের দেশ’। এখনো একশ হাত মাটির নিচে আপনি ‘হিন্দুয়ানী’ খুঁজে পাবেন। এই ‘হিন্দু’ শব্দকে আপনি ধর্ম হিসেবে নিতে পারেন, আবার ভূমিপুত্রদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় হিসেবেও নিতে পারেন। শাহজালাল হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলো। এখানে দরগা বানিয়ে ইসলাম কায়েম করার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলো। এই সুফিদের দরগায় গরু জবাই করে তবারক বানিয়ে উৎসব করে খাওয়া হতো। গরু হিন্দুদের কাছে মাতৃসম জেনে সুফি দরগার লোকজন গরুর হাড়, নাড়িভূরি হিন্দু বাড়িতে ফেলা হতো। গরুর রক্ত হিন্দু মন্দিরে ছিটিয়ে দেয়া হতো…। সিলেটীরা ঐতিহ্যগতভাবে তাই অমুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পেয়ে এসেছে। এবার রোজায় তারা একজন হিন্দুর মৃতদেহ শ্মশানে দাহ হতে দেয়নি রমজানের পবিত্রতা রক্ষার অজুহাতে। সেই ঘটনায় যিনি প্রতিবাদ করেছিলেন তার বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়ে শান্তির ধর্মের অনুসারীরা হামলা চালিয়েছে। এর আগে তারা ইসলামের অন্যতম অস্ত্র তাকিয়া বা দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার পন্থাকে কাজে লাগিয়েছে। প্রতিবাদকারী পরিবারের এক সদস্যের নামে ভুয়া ফেইসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে ইসলামের নবীর নামে ইসলামের নামে নোংরা কথাবার্তা লিখে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। তৌহদী জনতা হিন্দুদের পিটিয়ে ভারতে পাঠিয়ে, তাদের বাড়িঘর বউঝি দখল করে গণিমতের মাল করার যে গুপ্ত বাসনা লালন করে তা এই ক্ষুব্ধ সময়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এসব বলতে বলতেই তার ঈদের নামাজ পড়ে হামলা চালায় সেই ‘হিন্দু বাড়িতে’।

সাধারণ মুসলিমরা জঙ্গি নয়। তারা সবাই আইএসে যোগ দেয় না। তবে তারা নামাজ পড়ে দলবেধে হিন্দু বাড়িতে হামলা চালায়!

Scroll to Top