কাশ্মীর এবং ৩৭০ – অহল্যার শাপ মোচন
*******
আমি বহুদিন থেকেই লিখে আসছি কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবেই গ্রহণ করতে হবে। নইলে সমস্যা আরো বাড়বে। এক্ষেত্রে মোদি-শাহ ভারতের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করেছেন।
(১) সীমানা রুদ্ধ করা – ব্যবসা বাণিজ্যে দেওয়াল তুলে দেওয়াতে আখেরে সেই দেশেরই ক্ষতি হয়। ট্রাম্প যে এখন চারিদিকে “প্রোটেক্টিভ” টারিফ বসাচ্ছে চীনকে বাঁশ দেওয়ার জন্য, তাতে ক্ষতি বেশী আমেরিকার। এটি মার্ক্স এবং ক্যাপিটালিজম- সবার স্বীকৃত তত্ত্ব। কাশ্মীরে ৩৭০ এর জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বা জমি কিনতে পারত না। তাহলে কাশ্মীরের টুরিজম শিল্প উন্নতির জন্য ইনভেস্টমেন্ট কোথা থেকে আসবে? সেখানে আরো অনেক ভাল এয়ারপোর্ট, হোটেল দরকার। শিল্পের জন্য ইনভেস্টমেন্ট কি করে আসবে?
বাস্তবে যা হচ্ছিল, ৩৭০ র জন্য ভারত কাশ্মীরে প্রচুর সাবিসিডি দিচ্ছিল। টাকাটা যাচ্ছিল কিছু নেতার হাতে, যারা আবার এই বিচ্ছিন্নতাবাদি আবহটা টেকাচ্ছিল, নিজেদের স্বার্থে।
মোদ্দা কথা এর ফলে কাশ্মীরে শিল্পের বিকাশ আটকে রয়েছে- অধিকাংশ লোকজন দরিদ্র- আর কিছু নেতা ভারতেরই টাকা খেয়ে, ভারত বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়।
টোটাল লস- লস কেস। কাশ্মীরের জনতা, ভারতের জনতা-ক্ষতি দুই দিক থেকেই। এই রাহুমুক্তি ঘটল। এত আনন্দে দিন উভয় পক্ষের!
(২) পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আছে, বা দেশের লোক আছে-যে দেশটা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তৈরী হয়েছে কোন বিতর্ক, রক্তপাত ছাড়া?
কোন বাঙালী দেশভাগ চেয়েছিল? কোন পাঞ্জাবী তা চেয়েছিল? দেশ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। সেই বেলায় “জোর করে” চাপিয়ে দেওয়ার তত্ত্ব ওঠে না কেন?
তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল কংগ্রেস-মুসলিম লীগের ক্ষমতাঅন্ধ নেতারা। কাশ্মীরের মুসলিম লোকেদের তাও ভাগ্য ভাল যে দেশ-জমি ছাড়তে হয় নি। পন্ডিতদের তাড়িয়ে দিয়েছে কিন্ত!
সব দেশের সীমানা নিয়েই বিতর্ক আছে, সব দেশের জন্মের সাথেই কিছু না কিছু গন্ডোগল। ওই পারফেক্ট এথিক্যাল দেশ বলে কিছু হয় না। ভারতও পারফেক্ট নৈতিক দেশ হতে চাইলে, দেশটাই উঠে যাবে। কারন দেশকে টিকিয়ে রাখতে কিছু অনৈতিক বল প্রয়োগ, মাসল টুইস্টিং থাকবেই।
(৩) দেশের মধ্যে আরেকটা আধা দেশ থাকাটা – অর্ধেক দেশের পক্ষেই ক্ষতিকর। যেটা গাজা স্ট্রিপ আর ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হয়েছে। ৩৭০ এর জন্য কাশ্মীর ভারতের গাজা স্ট্রিপে পরিনত হতে চলেছিল। কিন্ত যদি ওটা দেশেরই একটা অংশ হয়, কাশ্মীর গাজা স্ট্রিপ হওয়ার থেকে বাঁচবে।
আমি একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্যালেস্টাইনবাসিদের নিয়ে। তাদের অনেকেই বলছে দেখ, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ইলিগ্যাল সেটলাররাও আমাদের থেকে কত ভাল থাকে। কারন ওদের একটা সরকার আছে। যারা দেখাশোনা করে। আমাদের ইস্রায়েলি নাগরিকত্ব দিলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়!
(৪) কাশ্মীরের লোকেদের অনুমতি নিয়ে যেমন কাশ্মীরকে ভারতে ঢোকানো হয় নি, তেমন বাঙালীদের অনুমতি না নিয়েই হিন্দু বাঙালীদের পশ্চিম বঙ্গে, মুসলমান বাঙালীদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেলা হয়েছিল। সেই সময় অত নৈতিক ভাবে দেশভুক্তি সম্ভব ছিল না। দেশভাগের জন্য মাত্র দেড়মাস সময় দেওয়া হয়েছিল মাউন্টব্যাটেনকে , রাডক্লিফকে। ফলে যে অনায্য দেশভাগের দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাসের ভাগী আমদের বাবা-জেঠারা- সেটা আরো খারাপের দিকে যেত যদি না সর্দার প্যাটেল কঠোর ভাবে ভারত ইউনিয়ানে “জোর” করে সবাইকে ঢুকিয়ে শক্তিশালী ভারত তৈরী না করতেন। এই “জোর” করে সর্দার প্যাটেল সবাইকে ভারতে ঢুকিয়েছিলেন বলেই ভারতে ইথিওপিয়া বা সার্বিয়া- আলবানিয়ার মতন গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয় নি। হ্যা একটা গরীব রাষ্ট্র ছিল- কিন্ততাতে পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি ছিল বলেই আজ ভারত পাকিস্তান না। চন্দ্রযান পাঠাচ্ছে। পৃথিবীর আরন্ডি ব্যাক হাউস হয়েছে। এগুলো হয়েছে পলিটিক্যাল স্টেবিলিটির জন্যই। আর পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি সম্পূর্ন এথিক্যাল উপায়ে কেউ অর্জন করতে পারে না-তাতে কিছু আর্ম টুইস্টীং লাগবেই। সর্দার প্যাটেল মেকিয়াভেলিয়ান পথেই তা অর্জন করেছেন। এবং যার জন্য ভারত ইউ এন প্রেসার অগ্রাহ্য করে কাশ্মীরে প্লেবিসাইট করে নি।
(৫)
কাশ্মীরিয়তের কি হবে???
গত বৃহস্পতিবার আমার উবের ড্রাইভার ছিল এক পাকিস্তানী পাঞ্জাবী। কথাপ্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম পাকিস্তানে পাঞ্জাবী সাহিত্য সংস্কৃতির হাল। সে বললো ওসব আর নেই। পাঞ্জাবী সংস্কৃতি এখন শুধু ভারতেই আছে। পাকিস্তান সরকার শুধু উর্দুর পেছনেই খরচ করে।
ভারতীয় সংবিধানে বাঙালী, মারাঠা, তেলেগু সব সংস্কৃতিই নিজেদের ধরে রেখেছে। কাশ্মীরের কি সমস্যা?
সব থেকে বড় কথা কোন বাঙালী বাঙালিয়ানাতে বিশ্বাসী?
যাদের ইলিশ মাছ কেনার ক্ষমতা আছে। তাদের সংখ্যাটা ১০% না। বাকী ৯০% বাঙালী একটু উপায় করার জন্য গুজরাট, ব্যাঞালোরে। ব্যাঙ্গালোরের প্রতিটা হোটেল, রেস্টুরেন্ট বয় এখন বাঙালী।
বাঙালীয়ানা , কাশ্মীরিয়ত -এসবই ওই ১০% পরজীবিদের দাবী। বাকীরা একটু ভাল থাকতে চায়। কাশ্মীরে ব্যবসার সম্প্রসারন সম্ভব হলে, তবেই সেটা সম্ভব।
(৬) বিশ্ব জনমত?
চীনে উঘের প্রদেশের মুসলমানদের ধর্মাচারনের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেটা আবার পাকিস্তান সমর্থন করে! কারন চীনের টাকা ছাড়া তাদের চলবে না।
ভারতের মার্কেট বিশ্বের সব বড় শক্তির দরকার। রাশিয়া, আমেরিকার সব থেকে বড় অস্ত্র মার্কেট ভারত। চাইনিজ ফোনের সব থেকে বড় মার্কেট ভারত।
একসাথে থাকার ফলে ভারতের যে বৃহৎ মার্কেট তৈরী হয়েছে, সেটাই ভারতের আসল শক্তি।
তাছাড়া ইসলামিক বিচ্ছিন্নবাদি সন্ত্রাসবাদিদের সাপোর্ট করবে এমন ভদ্রদেশ পৃথিবীতে কে আছে?
সৌদি আরব? আমেরিকা এখন তেল কেনে না। ভারত তেল কেনা বন্ধ করলে দেশটাই লাল না হলেও হলুদ বাতি জ্বলবে। সেই জন্য সৌদি রাজকুমার কাশ্মীর নিয়ে সর্বদাই চুপ!
কাশ্মীরের জন্য ভারত আন্তর্জাতিক চাপ খাবে -অবান্তর কল্পনা।
আন্তর্জাতিক ত দূরের কথা ৫১ টা মুসলিম দেশের সংগঠন আই এমওতে কাশ্মীরের জন্য কেউ এক ফোঁটা জল ফেলবে না । পাকিস্তান ছাড়া।
(৭)
ভারতের বাম লিব্যারালদের ৩৭০ বিরোধিতা প্রমান করল, কেন ভারতের জনগন তাদের আস্তকুড়ে ফেলেছে।