বাঙালীর সংস্কৃতির সুমহান ঐতিহ্যের অমরগাঁথা ইতিহাসের পাতায় যে নামটি
রতœখচিত হয়ে আছে তিনি মহাত্মা শ্রী রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ। কিছু ছেঁদো
গবেষণা থেকে যতদূর জানা যায়, ১০৪৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা নয়পালের সময়ে
রাধারমণের পূর্বপুরুষ বিখ্যাত চিকিৎসক ভিষাগাচার্য চক্রপাণি দত্ত বীরভূমের
সপ্তগ্রাম থেকে শ্রীহট্টে আগমন করেন। চিকিৎসাকার্য শেষে রাজা
গোবিন্দকেশবের শত অনুরোধ সত্ত্বেও চক্রপাণি দত্ত জন্মভূমি বীরভূমে প্রস্থান
করেন এবং রাজার সম্মান রক্ষার্থে দ’ুপুত্র মহীপতি দত্ত এবং মুকুন্দ দত্তকে
সিলেট রেখে যান।
চক্রপাণি দত্ত “ চক্রদত্তনামক”,“শব্দচন্দ্রিকা”, “দব্যগুণ
সংগ্রহ এবং “চিকিৎসা সংগ্রহ” নামে চারটি বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা। এছাড়াও
‘আযুর্বেদ দীপিকা” ও “ভানুমতী” নামে চরক ও সুশ্রুতের উপর দু’খানি
টীকাভাষ্যেরও রচয়িতা তিনি। চক্রপাণি দত্তের পিতা নারায়ন দত্ত মহারাজ জয়পাল
দেবের ‘রসবত্যাধিকারী” এবং পিতামহ নরহরি দত্ত দশম শতাব্দীতে মহারাজ মহীপাল
দেবের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। “রসষড়বিংশতি গুণের অন্যতম। মধুর অম্ল লবন
কটু কথায় তিক্ত ভেদে তা ষড়বিধ। জলে ও পৃথিবীতে রস বিদ্যমান। যা পঞ্চ
তম্মাত্রের একতম। এই ষড়বিধ রস পরস্পর সংযোগে সপ্তপঞ্চাশৎপ্রকার”। চক্রপাণি
দত্ত কর্তৃক প্রণীত টীকাভাষ্যে রস সম্পর্কে এরূপ তত্ত্বাদি পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে মহীপতি দত্তের উত্তর পুরুষ প্রভাকর দত্ত ও কেশব দত্তের বংশীয়
উত্তরাধিকার শ্রী রাধামাধব দত্তের ঔরসে ও শ্রীমতি সুবর্ণা দেবীর গর্ভে ১৮৩৪
খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার
কেশবপুর গ্রামে আবির্ভূত হন রাধারমণ দত্ত। আমাদের মনের দীনতা ও নীচতা
এতটাই প্রসারিত যে, মাত্র ১৭৬ বছর আগে আবির্ভূত এই মহাপুরুষের জন্ম-মৃত্যু ও
জীবনকাল সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা আমরা অদ্যাবধি পাইনি। বৈষ্ণব
-সহজিয়া দর্শনে দীক্ষিত রাধারমণের পিতৃদেব রাধামাধব ছিলেন বাংলা ও সংস্কৃত
ভাষায় সুপ-িত। ফলে পারিবারিক আবহে লালিত রাধারমণের শৈশব ও বাল্যকালেই
বৈষ্ণব-সহজিয়া দর্শনের প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মে। রাধারমণ দত্ত সংস্কৃত
ভাষায় “ভারত সাবিত্রী” ও “ভ্রমরগীত” এবং মহাকবি জয়দেবের “গীতগোবিন্দ”
কাব্যের স-ছন্দ টীকাভাষ্য রচনা করেন। এছাড়াও তাঁর বাংলা ভাষায় রচিত গ্রন্থ
“পদ্মপুরাণ”, “সুর্যব্রত পাঁচালী”, “ গোবিন্দ ভোগের গান” এবং “কৃষ্ণলীলা
কাব্য” অন্যতম। রাধারমণের যখন মাত্র ৯ বছর তখন তাঁর মহৎ হৃদয়বান পিতৃদেব
লোকান্তরিত হন। এরপর ৩৪ বছর বয়সে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি গুণময়ী দেবীর
সঙ্গে পরিণয় (বিবাহ) সূত্রে আবদ্ধ হন। প্রায় ৮১ বছরের জীবনকালে মহাত্ম
রাধারমণ দত্ত মানবপ্রেমের নিদর্শন স্বরূপ যেসব সৃষ্টিকর্ম রেখে গেছেন তা
বিশ্ব সাহিত্যের জন্য এক অমূল্য রতœভান্ডার হিসেবে বিবেচ্য। (চলবে)
রতœখচিত হয়ে আছে তিনি মহাত্মা শ্রী রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ। কিছু ছেঁদো
গবেষণা থেকে যতদূর জানা যায়, ১০৪৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা নয়পালের সময়ে
রাধারমণের পূর্বপুরুষ বিখ্যাত চিকিৎসক ভিষাগাচার্য চক্রপাণি দত্ত বীরভূমের
সপ্তগ্রাম থেকে শ্রীহট্টে আগমন করেন। চিকিৎসাকার্য শেষে রাজা
গোবিন্দকেশবের শত অনুরোধ সত্ত্বেও চক্রপাণি দত্ত জন্মভূমি বীরভূমে প্রস্থান
করেন এবং রাজার সম্মান রক্ষার্থে দ’ুপুত্র মহীপতি দত্ত এবং মুকুন্দ দত্তকে
সিলেট রেখে যান।
চক্রপাণি দত্ত “ চক্রদত্তনামক”,“শব্দচন্দ্রিকা”, “দব্যগুণ
সংগ্রহ এবং “চিকিৎসা সংগ্রহ” নামে চারটি বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা। এছাড়াও
‘আযুর্বেদ দীপিকা” ও “ভানুমতী” নামে চরক ও সুশ্রুতের উপর দু’খানি
টীকাভাষ্যেরও রচয়িতা তিনি। চক্রপাণি দত্তের পিতা নারায়ন দত্ত মহারাজ জয়পাল
দেবের ‘রসবত্যাধিকারী” এবং পিতামহ নরহরি দত্ত দশম শতাব্দীতে মহারাজ মহীপাল
দেবের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। “রসষড়বিংশতি গুণের অন্যতম। মধুর অম্ল লবন
কটু কথায় তিক্ত ভেদে তা ষড়বিধ। জলে ও পৃথিবীতে রস বিদ্যমান। যা পঞ্চ
তম্মাত্রের একতম। এই ষড়বিধ রস পরস্পর সংযোগে সপ্তপঞ্চাশৎপ্রকার”। চক্রপাণি
দত্ত কর্তৃক প্রণীত টীকাভাষ্যে রস সম্পর্কে এরূপ তত্ত্বাদি পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে মহীপতি দত্তের উত্তর পুরুষ প্রভাকর দত্ত ও কেশব দত্তের বংশীয়
উত্তরাধিকার শ্রী রাধামাধব দত্তের ঔরসে ও শ্রীমতি সুবর্ণা দেবীর গর্ভে ১৮৩৪
খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার
কেশবপুর গ্রামে আবির্ভূত হন রাধারমণ দত্ত। আমাদের মনের দীনতা ও নীচতা
এতটাই প্রসারিত যে, মাত্র ১৭৬ বছর আগে আবির্ভূত এই মহাপুরুষের জন্ম-মৃত্যু ও
জীবনকাল সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা আমরা অদ্যাবধি পাইনি। বৈষ্ণব
-সহজিয়া দর্শনে দীক্ষিত রাধারমণের পিতৃদেব রাধামাধব ছিলেন বাংলা ও সংস্কৃত
ভাষায় সুপ-িত। ফলে পারিবারিক আবহে লালিত রাধারমণের শৈশব ও বাল্যকালেই
বৈষ্ণব-সহজিয়া দর্শনের প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মে। রাধারমণ দত্ত সংস্কৃত
ভাষায় “ভারত সাবিত্রী” ও “ভ্রমরগীত” এবং মহাকবি জয়দেবের “গীতগোবিন্দ”
কাব্যের স-ছন্দ টীকাভাষ্য রচনা করেন। এছাড়াও তাঁর বাংলা ভাষায় রচিত গ্রন্থ
“পদ্মপুরাণ”, “সুর্যব্রত পাঁচালী”, “ গোবিন্দ ভোগের গান” এবং “কৃষ্ণলীলা
কাব্য” অন্যতম। রাধারমণের যখন মাত্র ৯ বছর তখন তাঁর মহৎ হৃদয়বান পিতৃদেব
লোকান্তরিত হন। এরপর ৩৪ বছর বয়সে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি গুণময়ী দেবীর
সঙ্গে পরিণয় (বিবাহ) সূত্রে আবদ্ধ হন। প্রায় ৮১ বছরের জীবনকালে মহাত্ম
রাধারমণ দত্ত মানবপ্রেমের নিদর্শন স্বরূপ যেসব সৃষ্টিকর্ম রেখে গেছেন তা
বিশ্ব সাহিত্যের জন্য এক অমূল্য রতœভান্ডার হিসেবে বিবেচ্য। (চলবে)