ধরেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন বললেন, আল্লার ইচ্ছা ছিল বলেই আজকে আমি আর্টিস হতে পেরেছিলাম। কথাটা শুনেই কানের মধ্যে খট করে লাগবে না? কিন্তু গণেশ পাইন যদি একই কথা এভাবে বলেন, ভগবানের ইচ্ছাতেই তিনি ছবি আঁকেন… কথাটা কি ঠিক কানের মধ্যে গিয়ে লাগে? এই দুজন শিল্পীর কেউই জীবনে এমন কথা বলেননি। তাদের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস কি জানি না। তবে যখন কোন গায়ক শিল্পী সাহিত্যিক কবি অভিনেতা ‘আল্লার ইচ্ছা’ বলেন তখন সঙ্গে সঙ্গে যে পাল্টা প্রশ্নটা চলে আসে, আল্লাহ কি গান, ছবি, সিনেমা করার অনুমতি দেন? ভগবান, জিহোবা, গড এদের এই মাধ্যমগুলোর প্রতি কোন বিদ্বেষ বা নিষেধাজ্ঞার কথা শোনা যায় না।
বিসমিল্লাহ খাঁ সানাই বাজাতো বিশ্বনাথ মন্দিরে। তার ধর্ম বিশ্বাসটা ছিল উদ্ভট। তিনি একই সঙ্গে আল্লা এবং বাবা বিশ্বনাথের পুজারী। কিন্তু সৌদি আল্লায় বিশ্বাস করে নৃত্য গান অভিনয় করে তার জন্য সবটুকু আল্লার উপর ক্রেডিট দেয়া ছলনা নয় কি? মুসলমান শিল্পীদের ধর্ম বিশ্বাস প্রকটভাবে তাদের শিল্পী সত্ত্বাকে সাংঘর্ষিক করে তোলে। পাপ বোধ তাদেরকে শিল্পী হতে দেয় না শেষতক। এটা তো অন্য ধর্মালম্বী শিল্পীদের হতে হয় না। এমনকি তাদেরকে বিসমিল্লাহ খাঁ’র মত নিজের মত করে একটা ধর্ম তৈরি করে নিতে হয় না। এসব কারণেই গায়ক তাহসান হজ করে এসে মিউজিক ভিডিওতে কোন নারীর সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ হলেই ট্রলের শিকার হোন। ভারতের অনেক মন্দিরে তো নাচকে নৈবেদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় শুনেছি। গির্জাতে বড় বড় শিল্পীদের আঁকা মানুষ জীবজন্তুর ছবি শোভা পায়। পক্ষান্তরে মসজিদ?
যখন একজন গায়িকা শরীয়া শাসন চাই বলে মত দিয়েছিল তখন সবাই তাকে প্রশ্ন করেছিল, শরীয়া আইন চালু হলে আপনি গান গাইবেন কেমন করে? এই প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছে নেই। আদর্শিকভাবে আসলে তারা পঙ্গু। এই পঙ্গুত্ব কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও প্রকট। সেক্যুলারবাদীদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানো এক শ্রেণীর কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী যাদেরকে অনেকে ‘হেফাজতী বুদ্ধিজীবী’ বলেন তাদের ব্যক্তিগত জীবন হেফাজত ইসলামের ১৩ দফার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলামী শাসন অনুযায়ী এদের অনেককেই তথাকথিত ‘ব্যভিচারের’ অভিযোগে রজম (পাথর) ছুড়ে হত্যা করতে নির্দেশ দেবার কথা। কোনদিন এই নির্দেশ ইসলামপন্থিরা দিলে তার বিপক্ষে দাঁড়াবে আবার সেই সেক্যুলাররাই…।