বাংলাদেশে হিন্দুদের এথনিক ক্লিনজিং হয়েছে, এবং কি আশ্চর্য, আমরা সেকুলার, বামপন্থী, প্রগতিশীল বলে আমাদের প্রতিবাদ করা হয়নি। পায়ে ব্যথা তাই চিঠি লিখতে পারব না, সেই মোল্লা নাসিরের রসিকতা মনে পড়ে যায়, কিন্তু সেটা অন্তত ঢের যুক্তিসঙ্গত ছিল, এটা নিছক আত্মহত্যা হয়েছে। এদিকে ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্বাস্তু বা অভিবাসী বাঙালিকে অন্য একপ্রকার এথনিক ক্লিনজিং এর শিকার হতে হয়েছে, তার দ্বিতীয় প্রজন্মকে অবাঙালি হতে হয়েছে। উড়িষ্যার বা ছত্তিসগড়ের দণ্ডকারণ্যের বাঙালিকে কে দেখবে? যাদবপুরের বা জে এন ইউয়ের বাঙালি তো কিউবা আর প্যালেস্তাইন নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
বাঙালিকে এই যে বিশ্বমানব বা বিশ্ববিপ্লবী বানিয়ে ফেলা হল, ফলে বাঙালি আর বুক ঠুকে বলতেও পারে না, যে পূর্ববঙ্গ থেকে উদ্বাস্তু যদি আসে, পূর্ববঙ্গের জমিও সেই সঙ্গে আমাদের চাই, না দিলে গায়ের জোরে ছিনিয়ে নেব। খুলনার মত হিন্দুপ্রধান জেলাকে আমরা মরতে দিয়েছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের একপাল হায়নার সামনে ছেড়ে রেখেছি। আমরা বিশ্বমানব না হলে ভারত রাষ্ট্রের শক্তিকেন্দ্রে আমাদের কব্জির জোর থাকত, আজ পাঞ্জাবি বা তামিল বা মারাঠির মত ভারত রাষ্ট্রে বাঙালির নিজস্ব শক্তিবলয় থাকত। সেসব আটকানোর জন্য আমাদের আইডিওলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটাসগুলো সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। বাঙালির মগজ ধোলাই করে তাকে বোঝানো হয়েছে জাতীয়তাবাদ খুব খারাপ জিনিস। তার জায়গায় একটা হাস্যকর ভাষাবাদের বেলুন ফোলানো হল, বাংলাভাষাবাদ।
ইসলামিক স্টেটও নিজের প্রোপ্যাগ্যান্ডার জন্য বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে পারে এবং ইদানীং শুনছি করছেও। বাংলা ভাষাতে চমৎকার হনুমান চালিসা লেখা হয়ে থাকে। ভাষা তো মাধ্যম। উর্দু ভাষার ইতিহাস বইতেও সম্রাট শশাঙ্কের গৌরবগাথা অনুবাদ করে দিতে পারি, তাতে তো উর্দু ভাষা বাঙালির হয়ে যাবে না। বাংলা অক্ষরে বিসমিল্লাহি রহমানির রহিম (যা দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান শুরু) লিখলে কি সেই শব্দবন্ধটি বাঙালির নিজস্ব হয়ে যায়? বাংলা ভাষার জন্য যারা কবীর সুমনের মত হন্যে এবং আকুল হলেন, তারা বাঙালি জাতির শেকড়, বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় এগুলো একটু বোঝার চেষ্টা করলে ভালো করতেন, কিন্তু তা আর হওয়ার নয়। মগজ ধোলাই বড় বিষম বস্তু।