ঊনবিংশ শতাব্দী র নবজাগরণ র আলোকে বঙ্গভূমি তে উদ্ভাসিত হয়েছিল দেশাত্মবোধ, সৃষ্ট হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, যবন শক্তি র বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম র প্রজ্ঞা – ঘোষিত হয়েছিল এক রণধ্বনি – দেশমাতৃকা কে শৃঙ্খলমুক্ত করার জন্য আত্মত্যাগ র, স্বীয় রক্তস্রোত র মাধ্যমে মাতা র পূজার – জননী জমভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী। কবি র ভাষায় বেজে উঠলো তার অন্তর্নিহিত আকুতি – এসেছে সে এক দিন/ লক্ষ পরাণে শঙ্কা না জানে। না রাখে কাহারো ঋণ/জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন। এতদ সত্ত্বেও ১৯৩০ র দশকে বাংলার মাটিতে বেজে উঠলো বিচ্ছিন্নতাবাদের, মজহাব র আড়ালে, সুর – সমগ্র বাংলাকে আসন্ন পাকিস্তানে যুক্ত করার এক নারকীয় প্রচেষ্টা। হিন্দু স্বার্থ ধুলিস্যাত করার জন্য, হিন্দু বোধ কে চিরতরে অস্তমিত করার সেই নারকীয় প্রচেষ্টা র বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছিল হিন্দু বাঙালী। নেতৃত্বে এক ব্যক্তি – শ্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।…..তাঁর অনন্য কৃতিত্বের মধ্যে পড়ে তত্কালীন বঙ্গ কংগ্রেস কে আসন্ন বিপদ সম্বন্ধে অভিহিত করা, এক যুক্ত সংগ্রাম গড়ে তোলা দিল্লীর গান্ধী-নেহেরু গোষ্ঠীর নির্দেশ কে অগ্রাহ্য করে। তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, ব্রতী সমিতি প্রমুখ দলের বিপ্লবীরা। কি সেই সংগ্রাম – কি তার বজ্রসম প্রতিধ্বনি, কি তার প্রতিরোধ যা মুসলিম লীগ ও ব্রিটিশ সরকার কে করলো তটস্থ, স্তম্ভিত। ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট খণ্ডিত, স্বাধীন ভারত র অন্তর্ভুক্ত পশ্চিমবঙ্গ হয় উঠলো এক মরুদ্যান সম। কিন্তু কালের গতিতে আততায়ীর পরিকল্পনায় নিহত হলেন শ্যামাপ্রসাদ। তাঁর মৃত্যু র সঙ্গে অবসান হল একটি সম্প্রদায় ও তার যাবতীয় আশা, আকাঙ্খা র – হিন্দু বাঙালী সম্প্রদায় র। গত ৭০ বছরে যার অধঃপতন অব্যাহত আর আজ তাকে হত্যা করতে সর্বদিক থেকে আততায়ীরা উদ্যত। ইতিহাস র এই ক্রন্তিকালে যখন বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায় র বিনাশ বা পুনরভ্যূত্থান একমাত্র ভবিষ্যত র গর্ভেই নিহিত, স্মরণ করি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কে আজ তাঁর জন্মের পুণ্যতিথিতে। “তোমার আসন শূন্য আজি, হে বীর পূর্ণ করো……..” তাঁর সেই আদর্শ কে বজ্রভীষণ মনোবল, লৌহদৃঢ় মাংসপেশী আর ইস্পাত-কঠিন স্নায়ু নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার দ্বায়িত্ব আমাদের ওপরেই বর্তায়। ইতিহাস সাক্ষী – হিন্দুরা সংগ্রামে, বীরত্বে সদাই আগুয়ান। স্বঙ্গচ্ছদংসংবদং সংবোমনাংসিজানতাম দেবভাগং যথা পূর্বে সংজাননা উপাসতে। সমান মন্ত্রসমিতি, সমানাভি এ মন্ত্রয়ে।
হে বীর, প্রণাম লহ। দন্ডবত।