১৯৮৪ সালে ভারত সরকার অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে এটা স্থির করলেন এখন থেকে স্কুলে সংস্কৃত ভাষা কে ঐচ্ছিক করে দেওয়া হোক, কারণ এটা নাকি মৃত ভাষা আর তাই এর থেকে ছেলে মেয়েদের শিখবার কিছু নাই। তার বদলে ঐচ্ছিক ভাষা রূপে ফ্রেঞ্চ, জার্মান, উর্দু এর সাথে ঐ মরে যাওয়া ভাষা কেও স্থান দেওয়া হলও। আর বাবা মা এরা মাথা খাটিয়ে দেখলেন মৃত ভাষা পড়িয়ে লাভ নাই তাই তাঁরা তাঁদের ছেলে মেয়ে দের বাকি সব জীবিত ভাষা শিখাতে পাঠালেন। এর ফলে বহু সংস্কৃত শিখক তাঁদের জীবিকা হারালও … তাঁদের মধ্যে এক মূর্খ বামুন সুপ্রিমকোর্টে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন, যতদূর মনে পড়ছে তক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান জাজ ছিলেন কি এক ‘রঙ্গনাথন’, তা তাঁর রিটায়ারমেন্ট খুব কাছেই ছিলও, আর তিনি ছিলেন খুব বুদ্ধিমান, বেকার মৃত ভাষার জন্য লড়াই করে পেনশনের পারক্স কমাতে চাইলেন না। তাই তিনি ঐ মামলা হস্তান্তর করে দিলেন তাঁর পরে যিনি প্রধান জাজ হবেন তাঁর কাছে, অর্থাৎ ‘জাস্টিস কুলদিপ সিং’ বুঝতেই পারছেন মূর্খ পাঞ্জাবী ঐ সব ভালো মন্দ বুঝবার ক্ষমতা খুব কম।তা সেই মূর্খ সর্দার জী নিলেন কেসটা আর ডেট দিলেন ছয় মাস পরে, ভাবছেন এই ছয় মাস তিনি কি করলেন ? আর বলবেন না, যাতা কাণ্ড , তিনি এই ছয় মাস ধরে তিনি কুলাঙ্গার বেদজ্ঞ বামুন দের কাছে ব্যাকরণ, ছন্দ,নিরুক্ত ও বেদ এই সব গভীর পড়াশুনা শুরু করলেন।তিনি ব্যানারস ইউনিভার্সিটির সাহায্য নিয়ে বৈদিক চিন্তন ও মনন এই সবের উপর যে সব প্রখ্যাত ইংরাজি গ্রন্থ আছে সেইগুলিও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে ফেললেন।
আর যথারীতি ছয়মাস বাদে নির্ধারিত দিনে কোর্টে হাজির হলেন, আর তিনি শুরু করলেন অদ্ভুত ভাবে, তিনি বললেন “ ১৭৮৬ শালে ইংল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্টে ভাষা নিয়ে একটা বিচারে রায় দেবার সময় প্রধান জাজ বলেন সংস্কৃত হলও ইন্দো-ইউরোপিয়ান সমস্ত ভাষা গুলির মা সমান, কারণ একমাত্র আইসল্যান্ডিক ভাষা ছাড়া আর সব ভাষায় এর প্রভাব লক্ষণীয়। আর আজ প্রায় ২০০ বছর পরে এই ভারতবর্ষে আমার কাছে এলো এই মামলা, যাতে বলা হচ্ছে ঐ বৈদিক ভাষা মৃত অসাড় ও তার থেকে কিছুই শিক্ষণীয় নাই। তিনি বললেন এই কৃষ্টি কে রক্ষা করতে হবে।” আর সেটা সমর্থন করতে তিনি জহরলাল নেহেরুর একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন “ As long as India has Sanskrit India is safe, it’s culture is safe.”
তিনি বললেন “ সংস্কৃত শুধু ভাষা বললে মুর্খামি হয়ে যাবে, এটা ভারতবর্ষের চিন্তন,মনন ও কৃষ্টির বাঙময় রূপ।” অ্যাডভোকেট তুলসী , অ্যাডভোকেট মীলন ব্যানারজি তখন তাঁকে বললেন, কেনও সংস্কৃত শুধু তাহলে লেপচাও পড়ানো হোক । যাই হোক এই সব অবান্তর কথা শুনে জাস্টিস কুলদিপ সিং অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন আর কনক্লুড করেন এক অপূর্ব স্পিচ দিয়ে “বলেন পারস্য দেশে সংস্কৃত পড়ানও হয় ? ফ্রান্সে সংস্কৃত পড়ানও হয় ? কেনও ? কারণ এটা তাঁদের ভাষা কোনও দিন ছিলোনা । কিন্তু জার্মানিতে পড়ানও হয় , কেনও কারণ এটা তাঁদের আদি ভাষা। তাহলে আমাদের হটাত কি হলও যে নিজেদের আদি ভাষা কে ভুলে যাবো ,কারণ এটা মৃত ভাষা?কিন্তু এতো শুধু আমাদের ভাষা নয় এটা আমাদের কৃষ্টি আমাদের জীবনদর্শন তাই সংস্কৃত পড়ানও হোক এটা আমাদের ছেলে মেয়েদের শেকড় দেবে যা তাঁদের এই দেশ, এর পরম্পরা ,জীবন দর্শন ও এই দেশের বিচার বোধের সাথে একাত্ম হতে সহায়তা করবে, না হলে পরের প্রজন্ম এই দেশে বেড়ে তো উঠবে, কিন্তু তাঁরা হবে পরগাছার মতো, শিকড় বিহীন , সুযোগ সন্ধানী, অসভ্য দুই পেয়ে জীব।”
চলবে ……