মাদ্রাসার তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক শিক্ষা।।

মাদ্রাসার তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক শিক্ষা
©মুফতি মাসুদ
এক বাবা তার ছেলেকে সহবাসের উপকারিতা বোঝাচ্ছিলেন। সহবাস করলে কেমন আরাম পাওয়া যায়, সহবাস স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো, তাছাড়া নিয়মিত সহবাস করলে দীর্ঘজীবী হওয়া যায় ইত্যাদি সবকিছুই শেখাচ্ছিলেন। সহবাসের উপকারিতা নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকা, আর্টিকেল ও সহবাসের উপর নির্মিত মুভি, ভিডিও ইত্যাদি বাবা দেখাচ্ছিলেন তার ছেলেকে।

এক বছর যায়, দু’বছর যায়, চার বছর যায় আট বছর যায়…… ছেলে শুধু সহবাসের ফায়দা ও উপকারিতা শিখেই যাচ্ছিল। বাবাকে সে ক’দিন পরপরই প্রশ্ন করে – বাবা, শুধু তো বই পড়ছি, শুধু তো ফাজায়েলে সহবাস পড়ছি; কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল কবে হবে? আমার তো এখন সহবাস করতে মন চাইছে। বাবা বললেন – না, এটা হতে পারে না। সহবাস করতে চাইলেই তোকে কিন্তু গুলি করবো! সহবাস করতে চাইলেই তোকে ঘরের ভেতর তালা মেরে আটকে রাখবো! সহবাস করতে চাইলেই তোকে ফাঁসিতে ঝোলাবো!
ছেলে নেট ঘেঁটে দেখে, অন্যান্য মানুষ কত সহবাস করে! কি আরাম করে সহবাস করে! তারা সারাদিন সহবাস করার ফজিলত ও উপকারিতা বই থেকে পড়ে না, তবুও তারা সহবাস করে। ছেলেটা তাঁর বাবার উপর খুব বিরক্ত হয়। বাবাকে বারবার প্রশ্ন করে, আমাকে সহবাস করতে দেবে কবে? এত বছর হয়ে গেল, শুধু থিউরি আর থিওরি…..প্র্যাকটিক্যাল কই? বাবা বোঝাচ্ছে ছেলেকে – দেখো বাছাধন, একদিন সারা পৃথিবী জুড়ে সহবাসের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। সেদিন পৃথিবীজুড়ে অনাবিল সুখ আর শান্তি প্রবাহিত হবে। সেদিন তুমি সহ দুনিয়ার সবাই সহবাস করতে পারবে। তুমি একটু ধৈর্য ধরো, সহবাসের খেলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করো। খুব বেশি অসুবিধা হলে হলে ওটাকে স্কচটেপ দিয়ে হাটুর সাথে বেঁধে রাখো!

আমাদের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও দেশের অফিসারগণ তাদের আধ্যাত্মিক সন্তানদের (মাদ্রাসার শিক্ষার্থী) সারাদিন মূর্তি ভাঙ্গার ফজিলত ও উপকারিতা পাঠদান করেন। দশ বছর, বারো বছর ধরে মাদ্রাসার গৃহে আবদ্ধ থেকে আধ্যাত্মিক সন্তানেরা মূর্তি ভাঙ্গার ফজিলত, জিহাদ করার ফজিলত, কাফের মারার ফজিলত, নাস্তিক মারার ফজিলত ও নারী নির্যাতনের ফজিলত শেখে। তারা মাদ্রাসায় পাঠ্যপুস্তক থেকে থিওরিক্যালি শেখে যে, মূর্তি ভাঙলে, মানুষ মারলে ও নারী নির্যাতন করলে খুবই আরাম পাওয়া যায়। সাধারণ সহবাসের চেয়েও বেশি আরাম পাওয়া যায়। কারণ এসব কাজ করলে বেহেশতে গিয়ে বাহাত্তরটা অতি নরম ও কোমল অপ্সরীর সাথে লাগাতার সহবাস করা যাবে।
এমন শিক্ষা লাভের পর যখনই তারা মূর্তি ভাঙতে যায়, কাফের মারতে যায়, নাস্তিক মারতে যায়, বউ পেটাতে চায় তখনই তাদের আব্বারা (রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সেলিব্রেটি ও সুশীলরা) তাদেরকে বাধাদান করে। এই ভন্ডামি আর কত বছর করবেন মাননীয় আব্বাগণ? আপনি সাংবাদিক হয়ে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ছাত্রদের মূর্তি ভাঙ্গা শেখাবেন, আর কেউ মূর্তি ভাঙলে তার নিন্দা করে নিউজ ছাপাবেন এমন ভন্ডামি কেন? আপনি পুলিশ অফিসার হয়ে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার ছাত্রদের কাফের ও নাস্তিক কোপানোর আর্ট শেখাবেন, আর তাদের কেউ এই শিক্ষার প্র্যাকটিক্যাল রূপ দিতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করবেন এমন ভন্ডামি কেন?
আপনি রাজনীতিবিদ হয়ে মাদ্রাসা বানিয়ে ছাত্রদের বউ পেটানোর উপকারিতা শেখাবেন, আর তাদের মধ্যে কেউ বউ পেটালে তার নিন্দা করবেন এমন ভন্ডামি কেন?
হে দেশনায়িকা ও দেশনায়কেরা! যখন দেখলেন মাদ্রাসার ছেলেরা তাদের শিক্ষার প্রাক্টিক্যাল রুপ চাচ্ছে তখন তাদেরকে আরও বেশি বন্দী করে ফেললেন। তাদের মুখে ও মনের পুরুষাঙ্গে স্কচটেপ লাগিয়ে দিলেন। এতে কি কোনো লাভ হয়েছে? মাদ্রাসার হুজুরদের স্কচটেপ প্যাঁচানো পুরুষাঙ্গ কি উত্থানরহিত হয়ে গেছে?
না হয় আপনারা আপনাদের কৌশল বদলালেন, কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হয়েছে? না হয় আপনারা ঘোড়ার লেজ নিয়ে গাধার পেছনে লাগালেন, কিন্তু তাতে কি গাধা ঘোড়া হয়ে গেছে?
না হয় আপনারা নর্থসাউথ এবং ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েদের দিয়ে মূর্তি ভাঙ্গা এবং কাফের মারার কাজগুলো হুরের লোভ দেখিয়ে করিয়ে নিলেন, কিন্তু এ কাজের সবচেয়ে বেশি হকদার কি মাদ্রাসার হুজুররা নয়?
https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/2019/10/13/15845/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A7%AD%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%B0/
Scroll to Top