সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে এসে কোন খেলা দেখিয়ে গেলেন, সেটা তো সময় বলে দেবে। রমনা কালী মন্দির তৈরি করে দেওয়ার পেছনে বিজেপি’ র উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে।
কিন্তু সেটা কি?
আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই রমনা কালী মন্দির বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে আসছেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ, ৭২ সালে রমনা কালী মন্দিরের সম্পত্তি দখলের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটে। শুধু দখল করেই ক্ষান্ত হননি, সে জায়গায় পার্ক তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা দাঙ্গার প্রধান নায়ক সোহরাওয়ার্দী’ র নামে।
অতীতে রমনা কালী মন্দির নিয়ে অনেক কথা বলেছি। নতুন করে বলার আর কি আছে? তবে এই মন্দির নিয়ে বিএনপি কিন্তু সহমত পোষণ করেছেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় মুজিব সরকারের কাছে দুটি দাবি রাখে। এক – শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করে হিন্দুদের সম্পত্তি হিন্দুদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া আর ঢাকার রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রমকে পুনরায় স্ব-স্হানে নির্মাণ করার অনুমতি দান করা। যে কালী মন্দির পাক সৈন্যরা পঁচিশে মার্চ কালো রাত্রিতে ট্যাংকের গোলায় ভেঙ্গে দিয়েছিল। হত্যা করেছিল মন্দিরের পুরোহিতসহ সকল কর্মচারীকে।
দেশ স্বাধীনের পর মুজিব সরকারের কাছে মন্দির সংস্কারের জন্য হিন্দুরা গিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন মুজিব সরকার সেখানে মন্দির নির্মাণে বাধা প্রদান করে। তখন মুজিব হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বলেছিল, মন্দির কেরাণীগঞ্জের কোন এক জায়গায় যেন সরিয়ে নেওয়া হয়। মন্দির আগে যেখানে ছিল সেখানে হবে না। সেখানে পার্ক, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি স্হাপন হবে। তখন হিন্দুরা বলেছিল, কেরাণীগঞ্জে কালী মন্দির হলে সেটা তো হবে কেরাণীগঞ্জ কালী মন্দির, সেটা তো আর রমনা কালী মন্দির হবে না।
যদি সে সময় মুজিব সরকার মন্দির নির্মাণে বাধা না দিতো, তাহলে পরবর্তী সরকার রমনা কালী মন্দির নির্মাণে কোন রকমের বাধা দিতো না। এবার ক্ষমতায় আসে জিয়া সরকার, একই পরিস্হিতি বজায় রাখে মুজিব সরকারের দোহাই দিয়ে।
এরপর এরশাদ সরকার ক্ষমতায়, হিন্দু সংগঠনগুলি সেখানে যায় মন্দির
নির্মাণ করতে। এরশাদের কুত্তা পুলিশ বাহিনী বারংবার লাঠিচার্জ করে, যারা তৎকালীন সময়ে সেখানে মন্দির নির্মাণ করতে গিয়েছিল।
যাই হোক, এবার ৯১ তে খালেদা সরকার আসলে ক্ষমতার শেষ সময়ে খালেদা সরকারই সেই স্হানে পূজা করার অনুমতি দেয়। কিন্তু মন্দির স্হাপন করার অনুমতি খালেদা সরকার দেয়নি। এর পরবর্তীতে ৯৬ তে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসলে আশ্চর্যজনক ভাবে খালেদা সরকার সে স্হানে পূজা ও মন্দির নির্মাণের চরম বিরোধীতা করা শুরু করলো, ফলে হাসিনার আমলে হিন্দুরা সেখানে কোন পূজা করতে পারে নাই।
সর্বশেষ ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে হিন্দুরা সেখানে পূজা করার অনুমতি পেয়ে যায়। অস্হায়ী ভাবে মন্দির নির্মাণ করারও অনুমতি পেয়ে যায়। এছাড়া বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একদল জাতীয়তাবাদী হিন্দু নেতা সেখানে বিশাল আকারে মন্দির নির্মাণে প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিল এবং গয়েশ্বরই রমনা কালী মন্দিরের অনেক সম্পদ সে নিজে উদ্ধার করে দিয়েছিল। জাতীয়তাবাদী হিন্দু নেতারা বিশাল আকারে মন্দির নির্মাণ করতে গেলে মন্দিরের স্হান ও সীমানা নিয়ে আদালতে মামলা থাকে, তখন তারা আর মন্দির করতে পারে নাই। চলে আসে হাসিনা সরকার, মন্দির আর হলো না। রমনা কালী মন্দিরে পূজা করার অনুমতি, অস্হায়ী মন্দির এবং মন্দিরের অনেক সম্পত্তি উদ্ধার, এই সব কিছু বিএনপি আমলেই হয়েছিল। যা করেছিল গয়েশ্বরের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী
হিন্দু নেতারা।
যে রমনা কালী মন্দির আওয়ামী লীগ কোন দিন চাননি, নতুন করে মন্দির হোক। অথচ সেই মন্দির আওয়ামী লীগের সামনেই করতে যাচ্ছেন বিজেপি সরকার। খেলা কেমন জমে দেখতে থাকুন।