আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে সুফিরা নৃত্য গীতের মাধ্যমে যদি আল্লা রাসূলের নাম নিতে পারে তাহলে ইসলামে গান বাজনা নিষিদ্ধ হয় কি করে? সুফিরা কি কুরআন হাদিস জানত না?
আপনাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, না, তারা কুরআন হাদিস জানত না! সুফিদের জন্মের আড়াইশো বছর পর হাদিসের জন্ম হয়েছে। এমনকি মাযহাব প্রতিষ্ঠার এক – দেড়শো বছর আগে সুফিদের প্রথম পুরুষ ঘর ছেড়েছিল জিহাদের জন্য পাগল হয়ে!
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর খিলাফত বিস্তৃত করতে মুজাহিদরা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখনও হাদিস সংকলিত হয়নি। মাহযাব তৈরি হয়নি। মক্কা থেকে কুফার মুসলমানের মধ্যে বড় রকমের তফাৎ দেখা যেতো। যেমন হযরত ওমরের সময় কিছু লোক কুফা থেকে সফর করে এসে ওমরকে জানায় সেখানকার মুসলমানরা কুরআনের এমন কিছু আবৃত্তি করেছে যা তারা আগে কোনদিন শুনেননি! (পড়ুন মুহিউদ্দিন খানের অনুদিত বাংলা কুরআন) ।
কুফার মুসলমানদের সঙ্গে যদি মক্কা মদিনার মুসলমানদের এত তফাৎ থাকে তাহলে আরব সাগর পাড়ি দেয়া মুসলমানরা যারা কুরআন সংকলনের আগেই দেশ ছেড়েছিল, যারা আরবের শেষ সীমান্তে বছরের পর বছর তাবু খাটিয়ে জিহাদের নির্দেশের আশায় জীবন পাড় করে দিয়েছিল তাদের ইসলাম কেমন ছিলো অনুমান করুন।
যোগাযোগ ব্যবস্থার সেই আদিম যুগে এই সব গৃহত্যাগী জিহাদীদের হাদিস সংকলনের আড়াইশো বছরের মধ্যে কয়েক প্রজন্ম তৈরি হয়ে যায়। এরা হয়ে উঠে সন্নাসী। বিয়ে সংসার না করে আল্লার দ্বিন কায়েম করতে এরা জীবনের একমাত্র ব্রতী ঠিক করে নেয়। দূর প্রবাসে মক্কার প্রভাব মুক্ত আরেক ইসলামের জন্ম নেয়। হাদিস সংকলনের পর যেখানে দেখা যায় বিয়ে সংসার ফরজ সেখানে বড় বড় সুফিরা স্ত্রী বিবর্জিত সন্নাসী ফকির দরবেশ!
স্বাভাবিকভাবে নামাজ এদের আল্লার দিদার লাভের একমাত্র পন্থা হয়ে উঠে না। তবে কাফেরদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জিহাদ ঠিকই তড়িকা হিসেবে থেকে যায়। সুফিদের মধ্যে বিভাজন বৃদ্ধি পায় গুরু কেন্দ্রিক সিলসিলা প্রতিষ্ঠিত হবার পর যেখানে কিছু সুফি একমাত্র তাবলীগের মাধ্যমে ইসলাম ছড়ানোকে সহি পথ মনে করেন। ইসলাম শান্তির ধর্ম এই অপভ্রংশ এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে এসে পৌঁছায়।
গোল বাঁধে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সভ্যতার উন্নতির ফলে। ইসলামী খিলাফত বিস্তৃত হবার পর হাদিস মাহযাব ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ভারতবর্ষে হাজি শরীতুল্লাহ তিতুমীর হজ করে আসার পর শরিয়তী মুসলমানের বিস্তার লাভ করে। এর আগে হিন্দুর কীর্তনে মুসলমান কৃষকের উপস্থিতি ছিলো স্বাভাবিক ব্যাপার। মুসলমানের নামও হতো দেশী হিন্দুয়ানী রীতিতে। পোষাক পরিচ্ছেদ হত দেশী সংস্কৃতিতে। “সহি মুসলমানের” চর্চা শুরু তিতুমীর শরীয়তুল্লাহদের কাছ থেকে।
খোদ হযরত মুহাম্মদ কেমন মুসলমান ছিলেন সেটা ইসলামের চার মাযহাবের ভিন্নতা ও হাদিসের পরস্পর সাংঘর্ষিকতা থেকে বুঝা যায় আজকের সহি ইসলাম থেকে কোন একটাকে বেছে নিলে তাকেই কাফের বলবে অপর তড়িকার মুসলমান!
পরিশেষে এটা বলা যায়, মক্কা মদিনার বাইরের মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে ভিন্নতা ছিলো প্রকৃতি সম্মত। ভাষা যেমন নদী পাড় হবার পর বদলে যায়, ধর্ম তেমন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইমাম বুখারী, ইমাম ইবন কাসিরের মত ইসলামিক ব্যক্তিত্বরা তাদের সারাজীবন ব্যয় করেছিলেন মুহাম্মদের সহচরদের থেকে পরম্পরায় পাওয়া হাদিস সংগ্রহ করে।
এছাড়া চার ইমাম যাদের ছাড়া ইসলাম অচল, তারা সকলেই বলেছে, ইসলাম হচ্ছে গান বাজনা বাদ্যযন্ত্র বিরোধী এক অসুর ধর্ম! জিহাদ রক্তপাত গনিমতের মাল লুন্ঠনকারী এক ফ্যাসিস্ট ধর্ম। শরিয়ত বয়াতী ও তার মত যারা মুসলমান হয়ে গান বাজনার লাইন ধরেছে তাদের সকলেই কম বেশি নবী মুহাম্মদের ইসলামের হাতে
নাযেহাল হতে হয়েছে যুগে যুগে …।
নাযেহাল হতে হয়েছে যুগে যুগে …।