বাংলা সাহিত্যের সমস্ত দিকপালদের জন্ম পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশে। বাংলা ভাষার বেশিরভাগ বিদগ্ধ পন্ডিত গবেষক জ্ঞান তাপসের জন্মও এখনকার বাংলাদেশে। দেশভাগ না হলে তাই ব্রাত্য রাইসু, আসিফ নজরুলরা কলা বেচে খেত!
দেশভাগ না হলে এরশাদ জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর চাকরি শেষে পেনশনের টাকা তুলে সংসার চালাত। দেশভাগ মেধার যে সংকট পূর্ববঙ্গে করে দিয়েছিল তাতে বহু মূর্খ জাতির ইন্টেলেকচুয়াল সাজতে পেরেছে।
আমার কথায় রাগ হতে পারে সবাই। কিন্তু যদি আপনি পাকিস্তান থেকে আজকের বাংলাদেশ পর্যন্ত এদেশের রাজনীতিবিদ, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের কথা কাজ পর্যালোচনা করেন তাহলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, বাজারের বাতিল মাল এখানে বিকিয়েছে কারণ ‘বাঘ নাই বনে শিয়ালই রাজা”!
আহমদ ছফা এই চুতিয়া গ্রুপের লিডার। ষাটের দশকের সেকুলার সংস্কৃতিমুখি বুদ্ধিজীবী উত্থান যা ধর্মবিহীন বাঙালি জাতীয়তাবাদ নাম পেয়েছিল, দেশ স্বাধীনের পর ছফা আর আবদুর রাজ্জাক সেটাকে মুসলমানের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি নির্মাণের চেষ্টা করে প্রতিহত করেছিলেন। দ্বিজাতিতত্ত্ব দ্বারা যে দেশের মানুষ মাত্রই নিমজ্জিত ছিলো তাদের কাছে ধর্মভিত্তিক জাতি পরিচয় তাদেরকে ফান্ডামেন্টালিস্ট পথে নিয়ে যাবে কিনা এই ভাবনা তাদের ছিলো না।
এখন আমরা দেখি শুক্রবার ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করতে বলছে একজন। দেশে মেধার দৈন্যদশা কতখানি যে এরকম কিছু বলছে কোন মোল্লা নয় বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! ধর্মগ্রন্থের সমালোচনা করা যাবে না – ছফার চুতিয়া শিষ্যরা এসব বলে সমাজে মৌলবাদীদের রাস্তা প্রশস্ত করে দিচ্ছে। এটা একটা আইডিয়োলজিকে সামনে রেখে সলিমুল্লাহ খান, রাইসু, আসিফ নজরুল, ফরহাদ মজহাররা নিয়মিত বলে যাচ্ছে। ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির চিহ্ন মুছে দিতে এরা সরব হয়েছিল। এগুলো করতে চাওয়ার অর্থ বাঙালির হাজার বছরের পরম্পরার অস্বীকার করে কৃত্রিম এক মুসলিম বাংলার ইতিহাস সৃষ্টি করা। ছফা এটা করতে চেয়ে দেশে এই রকম ডানপন্থী বুদ্ধিজীবী কাল্টদের সৃষ্টি হতে জায়গা করে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার মানুষের সঙ্গে ধর্মের বিরোধই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, ব্রুনো সবার কাজেই ধর্মের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল। আইনস্টাইন বলেছিলেন, বাইবেল তার কাছে শিশুতোষ মনে হয়। বিদ্যাসাগর রামমোহন এঁদের সকলের কাজই ছিলো ধর্মগ্রন্থের বিরুদ্ধে। অথচ এখন এই দেশে, বাঘ নাই বনের দেশে শিয়ালরা ধর্মের নামে, সোজাসুজি বললে ইসলামের নামে হুক্কাহুয়া দিচ্ছে!