সনাতনি সমাজ ব্যবস্থা এবং“মনু সংহিতা, বর্ন প্রথা ”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
(১) প্রথম পরিচ্ছেদ
দেশ বা সমাজ আগে না সেই দেশের সংবিধান বা সমাজ ব্যবস্থা আগে? ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হবার পর আমরা সংবিধান পেলাম প্রায় ২ বছর পরে। তাহলে আমাদের সংবিধান আমাদের দেশকে তৈরী করলো না দেশ তৈরী করলো সংবিধান???
মনু সংহিতা সনাতনি সমাজ তৈরী করেনি, সনাতনি সমাজই তৈরী করেছিলো তার সংবিধান। সনাতনি সমাজ এবং তার সমাজ ব্যাবস্থাও হাজার হাজার বছরের পুরানো। সেই জন্যই খুব স্বাভাবিক ভাবে যুগে যুগে বহু সাংবিধানিক (নিয়মের শ্রষ্টা) রা নানা পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করেছেন। এই পরিবর্তন যে সর্বতো ভাবে সব সময় সুষ্ঠ হয়েছে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। সনাতনি প্রথায় সমস্ত চিন্তা সব সময় নতুন প্রথা বা ভাব গ্রহন করেছে (সদা নতুন= সনাতন)। কোনো একজনের কথা বা মত কে সর্ব কালের সেরা মত বলে উদভ্রান্তের মতো লাফা লাফি করেনি। সেই সুযোগ নিয়ে অনেক অসনাতনি কথা ,স্বার্থান্বেষি চিন্তা এনং নিয়মের ঠাই হয়েছে ,শুধু মনু সমহিতায় নয় আরো নানা সনাতনি ধর্ম শাস্ত্রে।
বিচার করে, নিজের অনুভুতি দিয়ে বুঝতে হবে কোনটা ঠিক, সেটা গ্রহন করবেন। যেটা বুঝবেন মানুষের মংগলের জন্য নয় সেটা অবশ্যই বর্জন করবেন। তাই বলে পুরো ব্যাবস্থাটাই বর্জনীয় সেটাও মুর্খামি ছাড়া আর কিছুই নয়। জ্ঞানীরা রাঁজহাসের মতো থাকেন। আসল টুকু নেন আর নকল টুকু বর্জন করেন।
আমাদের দেশে সনাতনি শাস্ত্র না বুঝে না জেনে তার সমালোচনা করা এবং সেই শাস্ত্র মতে যারা চলার চেষ্টা করে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এক শ্রেনীর হিন্দুরা এবং বিধর্মীরা/অধার্মিকরা সতত ব্যস্ত। আর যারা হিন্দু ধর্ম এবং সনাতনি আধ্যাত্মিকতা ভালোবাসেন তারা ধরেই নিয়েছেন যে ধর্ম নিজেই নিজেকে রক্ষা করবে। ধর্মের প্রয়োজন মানুষের জন্য তাই তাকে রক্ষা করার দ্বায়িত্ব ও মানুষের। হিন্দুরা যদি নিজেদের ধর্ম নিজেরা পালন না করে, একাগ্র চিত্তে তার রক্ষা এবং শ্রী বৃদ্ধির জন্য কাজ না করে, তাহলে বিধর্মীরা তো তাকে গ্রাস করার চেষ্টা করবেই। এর জন্য দ্বায়ী কে????????
(২) দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
______________________________________________
“মনুবাদ”
‘বাদ’ অর্থ্যাত ‘মত’,আর ‘বাদী’ মানে যে বা যারা কোন মতের সমর্থক। সাম্রাজ্যবাদ-সাম্রাজ্যবাদী, সমাজবাদ-সমাজবাদী ইত্যাদি।
আমি বেশ কিছু এই ‘বাদ’ এবং ‘বাদী’র খবর রাখি । একমাত্র ভারতীয় লেখা লেখি ছাড়া বিশেষ কোথাও ‘মনুবাদ’ বা ‘মনুবাদী’ শব্দ দুটো দেখিনি পড়িনি। মনু সমহিতার ওপর বিদেশীদের লেখা অনেক ভাষ্য আমি পড়েছি, কিন্তু কাউকে এটা বলতে শুনিনি যে “মনু” একটা মতবাদ প্রচার করেছিলেন, যা কিনা ভারতের হিন্দুদের সর্বনাশ করে ছেড়েছে।
“মনুবাদ এবং মনুবাদী” নিয়ে সমালোচনার ঝড় একেবারে আধুনিক এবং এর পিছনে মুল হোতা কিছু বিশেষ বামপন্থী বুদ্ধিজীবি লেখক সম্প্রদায়। ব্রাহ্মন্যবাদ এবং ব্রাহ্মন্যবাদী শব্দ দুটোর প্রতিষ্ঠাতাও এই বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায়। সাধারনত, এরা মনুবাদকেই বলেন ব্রাহ্মন্যবাদ আর তার সমর্থকদের বলেন ব্রাহ্মন্যবাদী—দুটোই সমার্থক।
এই বামপন্থীরা তাদের এই তত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ‘মনু সমহিতা’ নামক হিন্দুদের এক বহু প্রাচীন গ্রন্থকে দ্বায়ী করেন।
অনেক ভাবনা চিন্তা এবং পড়ার পর আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, এই প্রচেষ্টা খুব সুক্ষ্ম ভাবে পরিকল্পিত এবং বেশ সুন্দর ভাবে ভারতের জন গন মনে প্রতিষ্ঠা করা হয়ে গেছে।
ফলে তৈরী হয়েছে এক ‘মনু বিরোধী’ মনু সমহিতার আদ্যশ্রাদ্ধকারী সম্প্রদায়। যেহেতু, সনাতনি ধ্যান ধারনায়,সমাজ ব্যবস্থায় বেদ এবং গীতার পরেই ‘মনু সমহিতার স্থান, আর বেদ এবং গীতা হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ, সুতরাং হিন্দুদের মধ্যেই এক বিশাল গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে যাদের একমাত্র কাজ এবং জীবিকা হিন্দুদের মধ্যে ঝড়তি পড়তি কিছু মানুষ কে দিনরাত গালি দেওয়া। আর এদের মুখ্য শত্রু ওই ব্রাহ্মন বংশীয় মানুষেরাই যারা প্রায় মাদাগাষ্কারের ডো ডো পাখির মতো উধাও হবার পথে।
সাম্প্রতিক কালে, এই মনুবাদী(???????) দের গাল দেওয়ার জন্য একটী রাজনৈতিক দলের ও সৃষ্টী হয়েছে, যার বর্তমান নেত্রী ক্ষমতা লাভ করার আশায় সেই (অসাধু???) ব্রাহ্মন শ্রেনীর সাহায্য নিতে দ্বিধা করেন না। দিন রাত দলিত দলিত করে গলা ফাটিয়ে নিজে দিল্লির ওপরে এক প্রাসাদোপম বাড়ীতে থাকেন এবং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তার জন্ম দিন পালন করেন এবং সেই সংগে নিজের নানা কু কর্মের হাত থেকে বাচার জন্য, সি বি আই কে ঠেকিয়ে রাখার জন্য, দিল্লীতে ক্ষমতাসীন দলের পায়ে তৈল মর্দন করেন।
এছাড়া সম্প্রতি বাঙ্গালীদের মধ্যেও একটি বিশেষ গোষ্টী, যারা একটি পরিবার কেন্দ্রিক ‘ধর্ম মত’ প্রতিষ্ঠায় ব্যাস্ত (যার অন্যতম উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ফায়দা তোলা), তারাও সভা সমিতি করে “উচ্চ বর্নের হিন্দু (যারা সংখ্যায় মাত্র সামান্য কিছু ঝড়তি পড়তি আছেন) দের গালাগাল করেন অত্যন্ত ঘৃন্য ভাষায় (যা একজন হিন্দু হিসাবে শোনা কষ্টকর)।
আমার মতে ‘মনুবাদ’ এবং মনুবাদী তত্ব’ আর কিছুই নয়, শুধু মাত্র ন্যুব্জ হয়ে পড়া ( আরবী/তুর্কি দখলদারীদের ধর্মমত প্রতিষ্টার জন্য শিক্ষাগুরুদের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া) ব্রাহ্মন বংশীয়দের বলির পাঠা করে, সেই পাঠার মাংস রান্না করে মৌজ করে রষনা তৃপ্তি করা।———————-
(ক্রমশ চলবে)