ইতিহাস নিয়ে ঘাটা ঘাটি করি, সিরাজ নারী লোলুপ, মদ্যপ এবং সেই সংগে অত্যচারী নবাব ছিলো সেটা যারা আসল ইতিহাস পড়া শুনা করেন তারা ভালোই জানেন। সিরাজ কে বিখ্যাত করেছেন কিছু ইতিহাস বিদ এবং অভিনেতা ও নাটক লেখক দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সিরাজ দৌলা নামে একটি নাটক তিনি লিখেছিলেন এবং সিরাজের ভুমিকায় অভিনয় ও করেছিলেন। পারলে সেই নাটক পড়ে নেবেন, দেখবেন কি নাটুকে পানা।
সিরাজের সেই হীরাঝিল এখনো আছে, প্রমোদ শালা অবশ্যই আছে।
সুপ্রিয় ব্যানার্জী যে লেখা টা লিখেছে আর বাংলাদেশী যে বামপন্থী লেখকের সিরাজ সমন্ধে জানিয়েছে, সেটা আমার অজানা ছিলো।
তবে, সিরাজ, নাটোরের রাজার বিধবা রানী – রানী ভবানীর ১৬ বছরের (বিধবা) অপরুপ সুন্দরী কন্যাকে পাবার জন্য যে কু কর্ম টি করেছিলো তার বিবরন আমি জানি। লিখিনি কারন, অনেক “ভাই দরদী” রা অসন্তুষ্ট হবেন।
সিরাজের লাম্পট্য, বিশেষ করে হিন্দু মেয়েদের প্রতি যৌন আকর্ষন, সেই জনিত প্রচুর অপরাধের ফল স্বরুপ তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়। সেই চক্রান্তে জগৎ শেট মুখ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন, এটাও অতি সত্য।
অত্যচারী শাসকের বিরুদ্ধাচারন করা ন্যায় এবং ধর্মীয় কর্তব্য। বিকৃত ইতিহাস পড়ে পড়ে বাংলা তথা ভারতের হিন্দুরা কোনোদিন জানতেই পারলো না আসল অত্যচারী কারা ছিলো, ইংরেজ না ওই আরবী/ তুর্কি অসভ্য,বর্বরেরা।
তাই আমাদের হিন্দুদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুধু ইংরেজের বিরুদ্ধে। আরব, তুর্কী দের বিরুদ্ধে নয়। তারা আমাদের “ভাই” ।
ধন্যবাদ সুপ্রিয় ব্যানার্জী।
সিরাজ মহান। বাংলার নবাব। বাংলার সমৃদ্ধিতে নিবেদিত প্রাণ। আর যে ক’জন তাকে ‘ষড়যন্ত্র’ করে পরাজিত ও হত্যা করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম জগৎ শেঠ। ছোটোবেলা থেকে কমিউনিস্ট প্রভাবিত শিক্ষার ফলে এটাই জেনেছেন। এবার প্রবীণ বাংলাদেশী কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক শ্রীযুক্ত আবুল খায়ের মহাশয়ের লেখাটা পড়ুন।
…………..
বাংলার শুধু নয় “জগৎশেঠ” উপাধি প্রাপ্ত মহতাব রায়, ফতে চাঁদ প্রমূখ বণিকগণ ছিলেন ভারতবর্ষের প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্কার, প্রসিদ্ধ অর্থলগ্নীকারী। কেবলমাত্র সর্বভারতীয় বাণিজ্যেই তাঁরা পরাক্রমশালী অবস্থানে ছিলেন এমন নয়। জগৎশেঠ কোম্পানীর খ্যাতি ছিল দুনিয়াব্যাপী। মুঘল সম্রাটগণ রাজকার্যের ব্যয় নির্বাহে প্রায়শই জগৎশেঠজীর দ্বারস্থ হয়ে ঋণ গ্রহণ করতেন। সারা বাংলার কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য-দ্রব্যাদি উৎপাদনে শস্য বেচাকেনায় শেঠজীর ছিল একাধিপত্য। জৈন মতাবলম্বী জগৎশেঠ পরিবার সুনামের সাথেই কয়েক পুরুষ ধরে এ ব্যবসায় রত। মুঘল দরবারে তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এমনই ছিল যে, জগৎশেঠের সুপারিশের ভিত্তিতেই মুঘল সম্রাটগণ বাংলার নবাবীর সনদটি হস্তান্তর করতেন। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয়ের সাথে জগৎশেঠের যে কাহিনী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বিকৃত অবস্থায় আছে, তার অপনোদনে সত্য ইতিহাসটি তুলে ধরছি।
…………..
বাংলার শুধু নয় “জগৎশেঠ” উপাধি প্রাপ্ত মহতাব রায়, ফতে চাঁদ প্রমূখ বণিকগণ ছিলেন ভারতবর্ষের প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্কার, প্রসিদ্ধ অর্থলগ্নীকারী। কেবলমাত্র সর্বভারতীয় বাণিজ্যেই তাঁরা পরাক্রমশালী অবস্থানে ছিলেন এমন নয়। জগৎশেঠ কোম্পানীর খ্যাতি ছিল দুনিয়াব্যাপী। মুঘল সম্রাটগণ রাজকার্যের ব্যয় নির্বাহে প্রায়শই জগৎশেঠজীর দ্বারস্থ হয়ে ঋণ গ্রহণ করতেন। সারা বাংলার কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য-দ্রব্যাদি উৎপাদনে শস্য বেচাকেনায় শেঠজীর ছিল একাধিপত্য। জৈন মতাবলম্বী জগৎশেঠ পরিবার সুনামের সাথেই কয়েক পুরুষ ধরে এ ব্যবসায় রত। মুঘল দরবারে তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এমনই ছিল যে, জগৎশেঠের সুপারিশের ভিত্তিতেই মুঘল সম্রাটগণ বাংলার নবাবীর সনদটি হস্তান্তর করতেন। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয়ের সাথে জগৎশেঠের যে কাহিনী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বিকৃত অবস্থায় আছে, তার অপনোদনে সত্য ইতিহাসটি তুলে ধরছি।
বহিরাগত তুর্কী বংশোদ্ভূত সিরাজ ছিলেন দুশ্চরিত্রবান, বেহিসাবী এবং লম্পট চরিত্রের অধিকারী। নবাব আলীবর্দী খাঁ তাঁর এই আদুরে নাতিটিকে নবাবীর আসনে অভিষিক্ত করবার অভিপ্রায়ে একবার বাংলার খাজনালব্ধ এক লক্ষাধিক স্বর্ণমুদ্রা সমেত মুঘল দরবারে প্রেরণ করেন। আদুরে নাতি সিরাজ লক্ষ্ণৌ গিয়ে তথায় সমূদয় অর্থ জুয়া, মদ আর বাঈজী নৃত্যের পেছনে উড়িয়ে তৎকালের সেরা বাঈজী ফৈজীকে ক্রয় করে মুর্শিদাবাদে প্রত্যাগমন করেন এবং মুর্শিদাবাদের সন্নিকটে প্রমোদ প্রাসাদ হীরাঝিলে তার থাকার বন্দোবস্ত করেন। এদিকে বাংলার কৃষকের খাজনার টাকা এভাবে উড়িয়ে দেওয়ায় আলীবর্দী মনোক্ষুণ্ন হলেও তা চেপে যান এবং জগৎশেঠের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে তা পুনরায় দিল্লী পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন।
আলীবর্দীর মৃত্যুর পর সিরাজ নবাবীর মসনদে আরোহণ পূর্বক যথেচ্ছাচার শুরু করেন। কথিত আছে, নারী লোলুপ সিরাজের অত্যাচারে মুশির্দাবাদের পুকুরঘাটে কোন রমণী স্নান করতে পারতেন না। “অসামান্যা” নামে জগৎশেঠের পরমাসুন্দরী কন্যার প্রতি সিরাজের নেক নজর পড়ে। সিরাজ বাহক মারফৎ জগৎশেঠের কাছে সংবাদ প্রেরণ করে দাবী করে যে, অসামান্যাকে একরাতের জন্য তার প্রাসাদে পাঠতে হবে। জগৎশেঠ সম্মত না হওয়ায় সিরাজ তাঁকে প্রসাদে তলব করেন এবং দরবার হলে সর্বসম্মুখে জুতাপেটা করেন। এরপর একদিন গণকের ছদ্মবেশে সিরাজ জগৎশেঠের অন্তপুরে প্রবেশ করে অসামান্যার হাত দেখে ভাগ্য গণনা করার অজুহাতে শেঠ তনয়ার শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান। অসামান্যার চিৎকারে শেঠ জামাতা ছুটে এসে ছদ্মবেশধারী সিরাজকে উত্তম-মধ্যম দেন। সিরাজ সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এরপর একদিন নবাবের দরবার থেকে শেঠজীর নিকট লাল গিলাফে ঢাকা উপহার আসে। গিলাফ সরাতেই দেখা যায় সেখানে রাখা আছে শেঠ জামাতার কর্তিত মস্তক। এবংবিধ জঘন্য মানসিকতা সম্পন্ন সামন্ততান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামোর সাথে আপোষ করে কোন বণিক-ই তার অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে জগৎশেঠের পক্ষেও তা সম্ভব হয় নি। ফলে, বাংলা তথা ভারতবর্ষের বণিকদের প্রতিনিধি হিসেবেই জগৎশেঠ শ্রেণীগত উপলব্ধি থেকে ইংরেজ বণিকের সাথে মৈত্রীর ভিত্তিতে সিরাজকে উৎখাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দীর্ঘকাল ধরে একটি বিপুল জনগোষ্ঠীর মাথার’পর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে থাকা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অবসানে জগৎশেঠের এই বৈপ্লবিক ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইতিহাস বিস্মৃত ও বিকৃতকারী জাতি হিসেবে অদ্যাবধি আমরা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের খলনায়ককে নায়ক আর নায়ককে বিপরীত রূপে চিত্রায়িত করে আসছি। এটা নিঃসন্দেহে দূর্ভাগ্যজনক!