'বঙ্কিমচন্দ্র' সিনড্রোম : বাঙালি মুসলমানের চুলকানি

‘বঙ্কিমচন্দ্র’ সিনড্রোম : বাঙালি মুসলমানের চুলকানি
———————————————————

বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যিক বঙ্কিম চন্দ্রকে নিয়ে চুলকানি বহুদিনের, আজও চলছে । বঙ্কিম মুসলমান বিদ্বেষী-এই প্রচারটা তথাকথিত প্রগতিশীল বাঙালি মুসলমান মিথ করে ফেলেছে । সাহিত্যে কোনওপ্রকার বিদ্বেষ আছে নাকি ? মাপকাঠি হতে পারে, সাহিত্যিক পলিটিক্যালি কারেক্ট কিনা । আচ্ছা পাঠক, শেক্সপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ লেখায় ইহুদী বিদ্বেষ পাওয়া যায়না ? আসলে বঙ্কিমকে খুন না করলে তো ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বন্দেমাতরমের অবদান মোছা যায়না ! ভারতীয় উপমহাদেশে বহিরাগত, আগ্রাসনকারী লুটেরা,ধর্ষক মুসলমানদের দ্বারা ধর্মান্তরিত বাঙালি মুসলমান নিজেদের ঠিক কবে বাঙালি ভাবতে শুরুই করেছে ? বঙ্কিমের সমসাময়িক মুসলমান নিজেদের কি বাঙালি ভাবতো ?

আমাদের সদা পরিচিত, প্রগতিশীল বাঙালি মুসলমানের বঙ্কিমকে নিয়ে এই মিথ মিথ্যাচারের ঢাকনা সরালে বেরিয়ে আসে যে,বঙ্কিম মুসলমান বিদ্বেষী ছিলেন না। বঙ্কিম ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসে লিখেছিলেন :  ‘মুসলমান হলেই খারাপ হয় না, হিন্দু হলেই ভালো হয় না। পক্ষান্তরে, হিন্দু হলেই খারাপ হয় না, মুসলিম হলেই ভালো হয় না ।’ আবার  বঙ্কিমের ‘সীতারাম’ উপন্যাসে বঙ্কিম বলেছেন, হিন্দুধর্ম সমস্ত আধ্যাত্মিকতাকেই সম্মান দেয়, আর তার সাথে এটাও বলেছেন যে মধ্যযুগীয়  ইসলামিক শাসনের মধ্যে যে আগ্রাসী প্রবণতা আছে তার বিরোধিতা করতে গেলে ইসলাম বিদ্বেষী হতে হয় না ! বঙ্কিমের সাহিত্যে মুসলমান একদম পিন পয়েন্টেড, কোয়ালিফায়েড আগ্রাসনের
মেটাফর, তাই কন্টেক্সটের বাইরে গিয়ে বঙ্কিমকে ইসলাম তথা মুসলমান বিদ্বেষী বলাটা নিপাট মিথ্যাচার । পাঠক, সত্য হলো বঙ্কিমচন্দ্রকে সকল সময়েই উভয়মুখী  আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। হিন্দুয়ানির রক্ষাকর্তারা বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে পেয়েছে অহিন্দু মনোভাবের প্রকাশ, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমান তার লেখায় পেয়েছে   মুসলমান বিদ্বেষ !

‘আনন্দমঠ’ ও অন্যান্য বঙ্কিম উপন্যাস নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা বহুবার নিষিদ্ধ হয়েছে, ‘আনন্দমঠ’ পোড়ানো হয়েছে বহু জায়গায়, বহুবার । কলকাতায় ‘আনন্দমঠ’ পোড়ানোর উৎসব করেছিল মুসলিম লিগ ১৯৩৮ সালে । এই ঘটনা নিয়ে রেজাউল করীম বলেছিলো :
‘সভ্য-জগৎ স্তম্ভিতচিত্তে দেখিল, ভারতের একটি সুবৃহৎ নগরে, বহু শিক্ষিত ও সাহিত্য সেবকের সম্মুখে ও সম্মতিক্রমে এমন একটি অনাচার হইয়া গেল, যাহা বর্বরতায় মধ্য-যুগের ধর্মান্ধ জ্ঞানবৈরীদের সমস্ত অত্যাচারকে ম্লান করিয়া দিল। সাহিত্য-সেবক, কবি ও লেখকগণ, সাহিত্যামোদী পাঠকগণ কিরূপ মত্ত উল্লাসে করতালি দিতে দিতে এই বহ্নি-উৎসব উপভোগ করিলেন, তাহা দেখিবার বস্তু বটে।’   পাঠক, ‘আনন্দমঠ’ এর উপরে বাঙালি মুসলমান এত খাপ্পা কেন, জানতে ইচ্ছে হয়না ? বলি শুনুন :

বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’ এ আমরা ‘বন্দে মাতরম’ সংগীত পাই । প্রগতিশীল বাঙালি মুসলমানের বন্দেমাতরমের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল : বন্দেমাতরমে এক জায়গায় বলা হচ্ছে, “তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে”। ধর্মান্ধ আপাত প্রগতিশীল বাঙালি মুসলামানের পক্ষে কোনো রকমের বুতপরস্তি (পৌত্তলিকতা)মেনে নেওয়া সম্ভব নয় ! মানলে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি । বাঙালি মুসলমানের জন্য, ‘বন্দেমাতরম’ শব্দযুগলেই রয়েছে শির্ক্। এই বাঙালি মুসলমান ধর্মান্ধদের আল্লার কোনও অংশীদারী হয় না, এমনকি দেশমাতৃকাকে ইবাদত করা, বা  নিজের মাকে ইবাদত করাটাও ইসলাম অনুযায়ী শির্ক । অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত আপাত প্রগতিশীল বাঙালি মুসলমান বুঝতেই অক্ষম : এই ‘বন্দেমাতরম্’ সঙ্গীত যা সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়, তা দেশজননী দেশমাতৃকার বন্দনা । সন্তানের কাছে মায়ের চেয়ে বড়ো কে? ভারতবর্ষের প্রতিটি সন্তানের জননীই তো ভারতমাতা ।

পাঠক, অপরিবর্তনশীল, মধ্যযুগীয় ইসলাম যে বর্বর, আগ্রাসী এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতির পরিপন্থী তা বোঝার জন্য ইসলাম বিদ্বেষী হওয়ার প্রয়োজন নেই । চেনামুখ, আপাত প্রগতিশীল বাঙালি মুসলমানের বঙ্কিমকে ‘মুসলমান’ বিদ্বেষী বলার আগে এটা মাথায় উচিত……………………..!