November 15, 2020

আদি-শংকরাচার্য
Bangla Blog, ইতিহাস, বৈদিক সভ্যতা, ব্যক্তিত্ব

সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক আদি শংকরাচার্য-দূরর্ম…….।।।

শংকরাচার্য  সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক আদি শংকরাচার্য। ভারতের ইতিহাসবিদ ও দার্শনিকদের প্রায় সবাই মনে করেন আচার্য শংকর বা শংকরাচার্য ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তাঁর জন্মকাল নিয়ে কিছুটা মত পার্থক্য আছে। যেমন ভেঙ্কটেশ্বর মনে করেন, শংকরের জন্ম ও মৃত্যু যথাক্রমে ৮০৫ এবং ৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ৯২ বছর বেঁচে ছিলেন। তবে যাঁরা মনে করেন যে, শংকরের জন্ম ও মৃত্যু যথাক্রমে ৭৮৮ ও ৮২০ খ্রিস্টাব্দে তাদের সমর্থক শুধু অধিকাংশই নয়, বলা যেতে পারে, প্রায় সবাই। এঁদের মধ্যে আশুতোষ ভট্টাচার্য, আর জি ভান্ডারকার, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। শংকরাচার্য ভারতের কেরালা প্রদেশের ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শিবগুরু এবং মাতার নাম বিশিষ্টা। অতি অল্প বয়সেই ধর্ম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিদ্যায় তিনি পারদর্শী হন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি আচার্য গোবিন্দপাদের নিকট সন্যাস গ্রহণ করেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১২ বছর পর্যন্ত বেদ-উপনিষদ ও ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র  অধ্যয়ন করেন।     শংকরাচার্যের মতে একমাত্র ব্রহ্মই সত্য এবং এ জগৎ মিথ্যা ও মায়াময়। শংকরের দর্শন অনেক নামে পরিচিত। এ নামগুলো: বিশুদ্ধ অদ্বৈতবাদ, কেবল অদ্বৈতবাদ, বিবর্তনবাদ, মায়াবাদ, অনির্বাচ্যবাদ এবং নির্বিশেষবাদ। তাঁর বক্তব্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সাংখ্য বিবর্তনবাদ, বৌদ্ধ ক্ষণিকত্ববাদ, জৈন স্যাৎবাদ, বৈশেষিক পরমাণুবাদ ইত্যাদি মতবাদ খন্ডন করেন। অদ্বৈত বেদান্তের সিদ্ধান্তকে পূর্ণরূপ দেওয়ার জন্য তিনি ব্রহ্মসূত্র-ভাষ্যের ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুন্ডক, মান্ডূক্য, ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক এই দশটি উপনিষদের ভাষ্য এবং গীতা-ভাষ্য, বিষ্ণু সহস্রনাম-ভাষ্য প্রভৃতি ভাষ্যগ্রন্থ রচনা করেন। ভাষ্যগ্রন্থ ছাড়াও তিনি আত্মবোধ, বিবেকচূড়ামনি, উপদেশসাহস্রী প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। শংকরাচার্য মাত্র ৩২ বছর বেঁচে ছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে এতগুলো ভাষ্য এবং গ্রন্থ রচনা করেন এ কথা ভেবে অনেকে বিস্মিত হন। সে কারণে কেউ কেউ (যেমন ভেঙ্কটেশ্বর) মনে করেন যে তিনি ৯২ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু ভেঙ্কটেশ্বরের বক্তব্য কোনো মহলেরই সমর্থন পায়নি। শংকর মনে করেন, ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা  জীবো ব্রহ্মৈব নাপর: অর্থাৎ একমাত্র ব্রহ্মই সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর মতে একমাত্র ব্রহ্মেরই সত্তা আছে। ব্রহ্ম ছাড়া অন্য কোনো কিছুর সত্তা নেই। ব্রহ্ম নিত্য-শুদ্ধ, নিত্য-বুদ্ধ এবং নিত্য-মুক্ত। ব্রহ্ম দেশ কালাদি ভেদশূন্য। সেখানে তিন ধরণের ভিন্নতা লক্ষণীয়: সমজাতীয় ভিন্নতা, অসমসত্ত্ব ভিন্নতা ও অভ্যন্তরীণ ভিন্নতা। কিন্তু ব্রহ্মের অনুসারিরা এরূপ পার্থক্যের উর্ধ্বে। তাঁর মতে ব্রহ্মই শুদ্ধ অভিন্নতার একমাত্র উদাহরণ। ব্রহ্ম নির্গুণ। অজ্ঞানতার কারণে নির্গুণ ব্রহ্মকে সগুণ মনে হয়।     শংকরের মতে ব্রহ্মই সত্য তাঁর এই মত প্রমাণ করতে তিনি সত্যের সন্দেহাতীত মানদন্ডের কথা বলেছেন। যেমন; ১. সত্য সব রকম পরিবর্তনের উর্ধ্বে ২. সত্য অবশ্যই প্রত্যক্ষণযোগ্য ৩. সত্য অবশ্যই যেকোনো অসঙ্গতির উর্ধ্বে। তিনি মনে করেন, ব্রহ্মের চেয়ে কোনো কিছুই পরিবর্তনের উর্ধেব নয়, কোনো কিছুই নিজ অস্তিত্বের উর্ধ্বে নয় এবং কোনো কিছুই কোনো অসঙ্গতির উর্ধ্বে নয়। একারণে ব্রহ্মই একমাত্র সত্য। আবার জগতের অসত্যতা প্রমাণ করতে শংকর অনেকগুলো যুক্তি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে দুটি যুক্তি প্রধান। (১) যা কিছু পরিবর্তনশীল তা সত্য নয়। জগতের সব কিছু পরিবর্তনশীল। তাই জগতের কোনো কিছু সত্য নয়। (২) যা কিছু প্রত্যক্ষণযোগ্য, তাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। জগৎ প্রত্যক্ষণযোগ্য। তাই জগতের সব কিছু ধ্বংসযোগ্য। আবার যা কিছু ধ্বংসযোগ্য, তা সত্য নয়। জগতের সব কিছু ধ্বংসযোগ্য। কাজেই জগতের কোনো কিছুই সত্য নয়।   অনেকে শংকরের বক্তব্যকে সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন যে, শংকর জগতের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছেন। এ বক্তব্য সঠিক নয়। শংকর বলেছেন জগৎ মিথ্যা। কিন্তু জগৎ অস্তিত্বহীন অর্থাৎ জগতের কোনো অস্তিত্বই নেই এ কথা তিনি কোথাও বলেননি। অন্যদিকে তিনি বলেন, বন্ধ্যা নারীর সন্তান প্রসব অবাস্তব বা অস্তিত্বহীন। বন্ধ্যা নারী সন্তান প্রসব করেছে- এমন কথা কেউ দাবী করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এটা  যৌক্তিকভাবে পরস্পরবিরোধী। তাঁর এই যুক্তি প্রমাণ করতে তিনি সত্যের পক্ষে মত দিয়েছেন। সত্যকে তিনি দুই ভাগে ভাগ করেছেন: ব্যবহারিক সত্য এবং পারমার্থিক সত্য। পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে একমাত্র ব্রহ্মই সত্য। শুধুমাত্র ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে জগৎ সত্য।   জাদুকরের ইন্দ্রজালের উদাহরণ দিয়ে শংকর ব্রহ্মের স্বরূপ বোঝাবার চেষ্টা করেছেন। যারা অজ্ঞ কেবল তারাই যাদুকরের ইন্দ্রজাল প্রত্যক্ষ করে অভিভূত হয় এবং জাদুসৃষ্টিকে সত্য বলে মনে করে। জাদুকরের ফাঁকি তাদের চোখে পড়েনা। অন্যদিকে যারা বুদ্ধিমান তারা কিন্তু জাদুকরের ফাঁকি বুঝতে পারে এবং জাদুকরের জাদুসৃষ্টিকে মিথ্যা বলে উপলব্ধি করতে পারে। অজ্ঞ ব্যক্তিরাই জগৎ ও ঈশ্বর উভয়কে সত্য বলে মনে করে। কিন্তু যারা বিজ্ঞ তারা বুঝতে পারেন, জগৎ অবভাস মাত্র এবং প্রকৃতই কোনো জগৎ-স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই।   শংকরের দর্শনকে অনেকে মায়াবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ তাঁর মতে জগৎ মায়ার সৃষ্টি। এই মায়ার স্বরূপ সম্পর্কে শংকর বলেন, মায়া এক অনির্বচনীয় শক্তি। মায়া অনির্বচনীয় কারণ মায়া সৎ নয়, আবার অসৎও নয়। মায়া সৎ নয় কারণ তত্ত্বজ্ঞানীর কাছে ব্রহ্মই সত্য, জগৎ নয়। মায়া অসৎও নয়। কারণ মায়ার দ্বারা সৃষ্ট এ জগৎ সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যক্ষের বিষয়। তাই শংকর দাবী করেন, যা সৎও নয় আবার অসৎও নয় তাকে অনির্বচনীয় ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না। তিনি বলেন, ঈশ্বর ও মায়া একান্তই অভিন্ন। আগুনের দাহিকা শক্তিকে যেমন আগুন থেকে পৃথক করা যায় না তেমনি ঈশ্বরের মায়া শক্তিকেও কোনোভাবে ঈশ্বর থেকে পৃথক করা যায় না।   ভারতীয় দর্শনের নয়টি সম্প্রদায়ের মধ্যে চার্বাক ছাড়া বাকী আটটি সম্প্রদায় (সাংখ্য, যোগ, বৈশেষিক, ন্যায়, বেদান্ত, মীমাংসা, বৌদ্ধ ও জৈন) মনে করে এ জগৎ দুঃখময়। তাদের মতে, অজ্ঞানতাই এই দুঃখের কারণ। বৌদ্ধ ছাড়া অন্য সাতটি সম্প্রদায় মনে করে, আত্মা বন্দি অবস্থায় আছে বলেই আমরা দুঃখের মাঝে নিপতিত। এই বদ্ধদশা হতে মুক্তি লাভের উপায় কী? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শংকর  বলেন, আত্মজ্ঞানের উদয় হলে অজ্ঞানতা দূর হয়। এর ফলে জীব আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। জীব যে স্বরূপত: ব্রহ্ম এ উপলব্ধি জন্মায়। ফলস্বরূপ জীব যখন বুঝতে পারে যে, জীবাত্মা ও পরমাত্মা অভিন্ন তখনই জীবের মোক্ষ লাভ ঘটে। অর্থাৎ আত্মজ্ঞানই মুক্তির পথ নির্দেশক। শংকরের মতে আত্মজ্ঞান লাভের জন্য চার প্রকার সাধনার প্রয়োজন যথা- (১) নিত্য ও অনিত্য বস্ত্তর ভেদাভেদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা, (২) ইহলোক ও পরলোকের ফলভোগে অনাশক্তি, (৩) অন্তরিন্দ্রিয় ও বহিরিন্দ্রয় সংযম এবং (৪) মুক্তি লাভের ঐকান্তিক ইচ্ছা। এই চার প্রকার সাধনার ফলে জীব বুঝতে পারে যে,  তাতে এবং ব্রহ্মতে কোনো পার্থক্য নেই। তার উপলব্ধি ঘটে যে, সব কিছুই ব্রহ্মময় বা সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম। তার ধারণা স্পষ্ট হয় তিনি ভাবেন: ‘সোহ্হম’ অর্থাৎ আমিই নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-সত্য স্বভাবরূপ পরমানন্দ অদ্বয় ব্রহ্ম এবং জীব তখন মোক্ষ লাভ করে। [কাজী নূরুল ইসলাম] লেখক- অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়,ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক। দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত ভূরাজনীতি ও অযৌক্তিক ভারত বিদ্বেষ – কৃত্তিবাস ওঝা বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের লুঙ্গি খুলে দিয়েছিলো। আইএস জিহাদীরা কি সুরা নিসার ২৪ নং আয়াত বাস্তবায়ন করেছে? ‘হিন্দু’ নোবেল পেয়েছে এরকম লিস্ট করা হলে আমরা এই বঙ্গবাসীরাই নির্ঘাৎ তাকে সাম্প্রদায়িক বলব। আরো একবার প্রমাণ হলো বাংলার নিজস্ব্ যা তার সবই ‘হিন্দুয়ানী’

৪৭ এর দেশ বিভাগ
Bangla Blog, ইতিহাস

৪৭ এর ধর্ষিত মায়েদের সন্তানরা কি সেকুলাঙ্গার ?-দূরর্ম

৪৭ এর ধর্ষিত মায়েদের সন্তানরা কি সেকুলাঙ্গার? ভারত হল ইসলামি জেহাদীদের অভয়ারণ্য, একদম নিরাপদ স্বর্গ । পাঠক, এর  প্রধান কারণ ? কারণ হলো ভারতের আনুমানিক ২০ কোটির বেশি মুসলমান যাদের বাপ  দাদারা ১৯৪৬ থেকেই ‘হাত মে বিড়ি, মু মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’  স্লোগান তুলে অবিভক্ত ভারতে ভিন্নধর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পরেছিল দেশ ভাগ করে  মুসলমানের দেশ পাকিস্তান কায়েম করতে আর এইসবের পরেও এরা আজ বিভক্ত ভারতে  রয়ে গেছে হৃদয়ে পাকিস্তানকে লালন করে । এখানেই শেষ নয় পাঠক, এদের হাত মজমুত  করেছে বিভক্ত ভারতের সেকুলাঙ্গার, তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষ জোট। পাঠক, একটা  উদাহরণ দিই তাহলে কেন এইগুলো লিখছি বুঝবেন । ১৯৯৩ সাল। বম্বেতে ধারাবাহিক  বিস্ফোরণ ঘটানো হলো । মারা গেল প্রায় তিনশর বেশি মানুষ আর আহত হলো তার  দ্বিগুণের বেশী। হ্যা, পাঠক আপনাদের মনে করিয়ে দিই মহারাষ্ট্রে তখন  কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী সুধাকর নায়েক আর ভারতের কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার।  প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও এবং ঠোঁট ব্যাঁকা শারদ পাওয়ার  প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এই ভয়ংকর জেহাদী হামলার নায়ক দাউদ ইব্রাহিম তখন বহাল  তবিয়তে পাকিস্তানে আর ভারতে জেহাদী নাশকতার দায়িত্বে ছিল তার ভাই ইয়াকুব ।   পাকিস্তানের Defence Joumal, জানুঃ-ফ্রেব্রুঃ-১৯৯০, Jehad Syndrome শীর্ষক  নিবন্ধে বলা হয়েছিল : ‘বিশ্বব্যাপী ধর্মযুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের  মিত্র হল সেদেশের কয়েক কোটি মুসলমান। তেমনি আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ভারতের  বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান সহায় ভারতের ১৫ কোটি মুসলমান’ (The Jan-Feb, 1990  issue of the Defence Journal of Pakistan under “Jehad Syndrome” says in a  global role vis-a-vis the USSR. our allies are the millions of Muslims  in the USSR Similarly in the regional role vis-avis India, our allies  are 150 millions Indian Muslims our greatest asset is the Muslims to  destabilise these two countries-Writes wing commander, Amar Jutshi-The  Stateman 18.7.90)।   এই ১৫ কোটি আজ বেড়ে ২০ কোটির উপরে আর এদের মাথার উপরে  রয়েছে ভারতের সেকুলাঙ্গারদের সহায়তার হাত । আজকের এই ভারতের আলিগড়ের  মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য তুলে ধরি আপনাদের সামনে :”যদিও মুসলমানের  সংখ্যা ২০ শতাংশ কিন্তু সরকারি অফিসে মুসলমানের সংখ্যা ২ শতাংশ (2% Muslims  in Govt. jobs, even as the minority Community makes up 20% of the total  population Hindustan Times-l6.7.2004) মুসলমান দাবি করে ভারতে তাদের  সংখ্যা ২০ কোটি আর সরকার থেকে প্রচার করা হয় ১৫ কোটি। ১৯৪৭ সালের ন্যায়  হিন্দুকে রক্ত দিয়ে এই মিথ্যা প্রচারের মূল্য দিতে হবে।” রেফ: K. K.  Aziz-The Murder of History ।   না পাঠক, অবাক হবেন না ! এটাই সত্য  যে, ১৯৯৩ সালের সেই ভয়াবহ জেহাদি নাশকতা পরিকল্পনাকারী মেমন ঘটনার পরদিন  সপরিবারে বিমানে ভারত ত্যাগ করে । এবারে বলুন তো আপনাদের আম-জনতার বুদ্ধিতে  কি বলে : কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যােগসাজস ব্যতীত এই পালানো কিভাবে সম্ভব  হয়েছিল ? এখানেই শেষ নয় । ২০০৬ সালের ১১ই জুলাই সন্ধ্যায় মুম্বাই রেল  স্টেশনে পরপর তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। নিহত ২০০, আহত ৬০০, তারপর ২৬/১১ তো  রীতিমত বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ! FBI-র থেকে আগাম সতর্কবার্তা পেয়েও  এদেশের কংগ্রেস সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেন ? আজমল কাসভের নাটক ছাড়া কেন  একজনও মূল জিহাদি পরিকল্পনাকারীদের ধরা গেল না ? ধরা হবে কেন? জেহাদীদ  বন্ধুদের মাথায় তো তখনের কেন্দ্রের কংগ্রেস কমুনিষ্টদের আপাত ধর্ম  নিরপেক্ষ, সেকুলাঙ্গার সরকার ছিল, যারা ১৯৪৭ এর দেশভাগের কলকাঠি নেড়েছিলো  সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগের সাথে হাত মিলিয়ে ।   আনন্দবাজার পত্রিকার  (১৫.৭.২০০৬) :“সন্ত্রাসে পাক-মদত প্রশ্নে ভারত কতটা সরব হবে, তা নিয়ে  একেবারেই দ্বিধা বিভক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। নেতারা জানেন, পাকিস্তানকে  কাঠগড়ায় তুলে সুর চড়ালে মুসলিম ভােটের আশা পুরাপুরি ছেড়ে দিতে হবে।  মন্ত্রীসভার বৈঠকে তীব্র পাক বিরােধিতার প্রশ্নটি তুলে সরব হয়েছেন অর্জুন  সিং, এ. আর. আন্তুলের মত বর্ষীয়ান সদস্যরা …… অর্জুন সিং বলেন, আসলে  হিন্দুরাই মুসলমান সেজে এসব করাচ্ছে। অর্জুন সিংকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয়  সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী এ. আর. আস্তুলেও বলে ওঠেন, মুসলিম সংগঠনগুলিকে  অকারণেই টানা-হেঁচড়া করা হচ্ছে।”আচ্ছা পাঠক, ধর্মনিরপেক্ষতার অভিধান  অনুসারে ভারতে বসবাসকারী ২০ কোটির বেশি মুসলমান তাে ভারতীয়। তবে  পাক-বিরােধীতায় মুসলমান কেন বিরূপ হবে আর তাই নিয়ে স্বাধীন ভারতের  রাজনীতিকরা কেন চিন্তিত হবে ?   এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ২০.৯.২০০৬ এ  CPIM নেতা বিমান বসু সম্মন্ধে এক বাম নেতার বক্তব্য : ‘বিমানবাবু কোন ভাবেই  মুসলিম সন্ত্রাসবাদের কথা মুখে আনতে রাজি নন।’ ১৯৭১ এ বাংলাদেশের  মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নরপিশাচ নিয়াজি পাকিস্তানী সেনাদের বেশি করে বাঙালি  রমনীদের ধর্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছিল । নিয়াজির লজিক ছিল : ধর্ষণের ফলে যে  সন্তানরা জন্মাবে তারা হবে সাচ্চা মুসলমানের বাচ্চা আর সাচ্চা মুসলমান কখনও  তার বাপের বিরুদ্ধে যায়না । ‘৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়ে অবিভক্ত ভারতের  মুসলমানদের দ্বারা অগুনতি হিন্দু ও অন্যান্য ভিন্নধর্মের নারী ধর্ষিত  হয়েছিল । ধর্ষণের ফলে বহু নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছিল । আজকের ভারতের  সেকুলাঙ্গার রাজনীতিক ও বুদ্ধুজীবীরা কি তাহলে সেই ‘৪৭ এর ধর্ষিত মায়েদের  সাচ্চা মুসলমান সন্তান……?   আরো দেখুন রাজা রামমোহন রায় : ভারতীয় রেনেসাঁর জনক-দূরর্ম রাশিয়ার পক্ষে কেন সম্ভব নয়, চীনের সঙ্গে সামরিক জোট গঠন করা – কৃত্তিবাস ওঝা ভারত-মিয়ানমার মিলিটারি টাইজ, বনাম চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব – কৃত্তিবাস ওঝা দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত ভূরাজনীতি ও অযৌক্তিক ভারত বিদ্বেষ – কৃত্তিবাস ওঝা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি………..!!! প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ ভারতীয় যুদ্ধবিমান। রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।।-দূরর্ম পৃথিবীর বর্বর পশু কুরবানী, নারীর প্রতি অমানবিক শরীয়া আইন কি মানুষের ধর্মীয় অধিকারের পর্যায়ে পড়ে হে লিবারাল? কন্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর আজ দয়ালের ডাকে সত্যি সত্যি সাড়া দিয়েছেন। ৭৪ বছর পর, ১৯৪৬ এর নোয়াখালীর হিন্দু নিধনযজ্ঞ নিয়ে লিখতে বসেছি। পাকিস্তান আমলে কি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পরাধীন ছিলো?

প্রতাপাদিত্য
Bangla Blog, ইতিহাস

বাঙালির গৌরব মহারাজা প্রতাপাদিত্য-দূরর্ম

বাঙালির গৌরব মহারাজা প্রতাপাদিত্য ——————————————————-                   ।তৃতীয় পর্ব। আব্দুল লতিফ নামক একজন পর্যটকের লিখিত বিবরন হতে জানা যায়, “যশোহর অধিপতি প্রতাপাদিত্য বঙ্গদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বগুণে শ্রেষ্ঠ রাজা। তাঁর যুদ্ধসামগ্রীতে পূর্ণ সাতশত নৌকা, ২০ হাজার পদাতিক সৈন্য এবং  রাজ্যের রাজস্ব আয় ১৫ লক্ষ টাকা।”   মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সভাসদগণের মধ্যে সূর্যকান্ত ও শংকর অত্যন্ত প্রতিপত্তিশালী ছিলেন। সুপণ্ডিত, ধীরস্থির কর্তব্যপরায়ন এবং ব্রাহ্মনোচিত প্রতিভা সম্পন্ন শংকর চক্রবর্তী রাজস্ব ও রাজ্য শাসনের ব্যাপারে পরিদর্শন করতেন। মহাযোদ্ধা, অসমসাহসী, সর্বশাস্ত্র বিশারদ এবং লোক পরিচালনায় অদ্বিতীয়, ক্ষমতাশালী সূর্যকান্ত রাজত্বের প্রথম ভাগে রাজ্যের প্রধান সেনাপতি ছিলেন। তিনি সৈন্য রক্ষণ, যুদ্ধব্যবস্থা ও বলসঞ্চয়ের দায়িত্ব পালন করতেন। শঙ্কর চক্রবর্তী দেওয়ান ও মন্ত্রণা বিভাগের কর্তা এবং সূর্যকান্ত সৈন্যবিভাগের অধ্যক্ষ। প্রতাপাদিত্য  হিন্দুরাজা হলেও পাঠান ও পর্তুগীজদের  সৈন্য-বাহিনীতে নিযুক্ত করতেন। প্রতাপাদিত্যের সেনাবাহিনীতে ন’টি ভাগ ছিল। প্রধান সেনাপতির অধীনস্থ পৃথক পৃথক কমান্ডে সৈন‍্যরা পরিচিত হতো। সেনাবাহিনীতে ঢালি বা পদাতিক সৈন্য, অশ্বারোহী সৈন্য, তীরন্দাজ সৈন্য, গোলন্দাজ সৈন্য, নৌ সৈন্য, গুপ্ত সৈন্য, রক্ষী সৈন্য, হস্তী সৈন্য, পার্বত, কুকী সৈন্য, এই নয় বিভাগে বিভক্ত ছিল। যুদ্ধে ঢাল, তলোয়ার, শড়কী, বল্লম, লেজা, কামান, বন্দুক, বর্শা, তীর প্রভৃতি অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহৃত হতো। প্রতাপাদিত্যের ঢালী বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন মদন মল্ল। অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান অধ্যক্ষ ছিলেন প্রতাপ সিংহ দত্ত এবং সহকারী ছিলেন মাহিউদ্দীন, বৃদ্ধ নূরউল্লা প্রমূখ। তীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান ছিলেন সুন্দর ও ধুলিয়ান বেগ। গোলন্দাজ বাহিনীর অধ্যক্ষ ছিলেন ফ্রান্সিসকো রডা। নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন পর্তুগীজ অগষ্টাস পেড্রো। সুখা নামক এক দুঃসাহসী বীর গুপ্ত বাহিনীর প্রধান ছিলেন। রক্ষীবাহিনীর প্রধান ছিলেন রত্নেশ্বর, বিজয়, রামভক্ত চৌধুরী প্রমুখ। হস্তী বাহিনীর প্রধান ছিলেন রঘুপতি। বঙ্গদেশে আধিপত্য টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে প্রতাপাদিত্য তাঁর একমাত্র কন্যা বিন্দুমতীর বিবাহ দিলেন চন্দ্রদ্বীপ(বরিশাল)-রাজ কন্দর্পনারায়ণের মহাবীর পুত্র রামচন্দ্রের  সঙ্গে। রামচন্দ্র পর্তুগীজ ও মগ জলদস্যুদের সঙ্গে বহু যুদ্ধ জেতেন, ভুলুয়ারাজ লক্ষণমানিক্যকে যুদ্ধে পরাজিত করে স্বীয় রাজধানীতে বন্দী করে নিয়ে এসেছিলেন। ভূভারতে বীরত্বের জন‍্য প্রশংসিত জামাতা রামচন্দ্র কিন্তু প্রতাপের বশ্যতা স্বীকার করেননি। জামাতা সঙ্গে আসা একজন ভাঁড়ের সামান্য বেয়াদবির মতো তুচ্ছ কারণে,প্রতাপাদিত্য ক্রুদ্ধ হয়ে রামচন্দ্রকে বন্দী করেন। স্ত্রী বিন্দুমতী এবং সম্বন্ধী উদয়াদিত্যের সহায়তায়, রামচন্দ্র শ্বশুর প্রতাপাদিত্যের চোখে ধূলো দিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং যশোহর ছাড়ার পূর্বে তোপধ্বনি করে প্রতাপাদিত্যকে তাঁর প্রস্থানের ব্যাপারটি জানিয়ে দিয়ে যান সদর্পেই। অপমানিত প্রতাপাদিত‍্য জামাতার পিছু ধাওয়া করলেও তাঁকে ধরতে পারেননি। প্রতাপাদিত্যের সমস্ত রাগ গিয়ে পুঞ্জীভূত হলো কাকা বসন্ত রায়ের ওপর ; কেননা কিছু কুচক্রী কাকা বসন্ত রায়ের বিরুদ্ধে প্রতাপাদিত্যের কান ভারী করে তুলেছিল। তাছাড়া বিভিন্ন সৎকর্মের কারণে প্রজাবৎসল মহারাজা বসন্ত রায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন – যে কারণে প্রতাপাদিত্য তাঁর কাকার উপর ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠেছিলেন। সেই সন্ধিক্ষণে, বাৎসরিক পিতৃশ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে কাকা বসন্ত রায়ের কাছ থেকে নিমন্ত্রণ পেলেন প্রতাপাদিত‍্য – যা অগ্রাহ্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।  নির্দিষ্ট দিনে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে কাকার বাড়ী পৌঁছলেন সন্দিগ্ধ প্রতাপাদিত্য। বসন্ত রায়ের ছেলে গোবিন্দ রায় সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে প্রতাপাদিত্যকে নিয়ে গেছেন পিতার কাছে। মহারাজা বসন্ত রায় ওই সময় সান্ধ্যকালীন পূজার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একজন পরিচালককে তখন নির্দেশ করছিলেন পূজার জন্য গঙ্গাজল আনতে। দুর্ভাগ্যক্রমে “গঙ্গাজল” ছিল বসন্ত রায়ের অত্যন্ত প্রিয় একটি অস্ত্রের নাম এবং এ তথ্য কাকার কোলেপিঠে চড়ে বড় হওয়া প্রতাপাদিত্যের অজানা ছিল না। সুতরাং প্রতাপ কাকার এই আদেশ শুনতে পেয়ে মনে করলেন,তাঁকে খুন করার জন্যই বুঝি কাকা ওই পরিচারককে উপরোক্ত অস্ত্র আনতে আদেশ দিয়েছেন । তৎক্ষনাৎ নিজের তরবারি বের করে বৃদ্ধ কাকাকে আক্রমণ করে বসেন প্রতাপাদিত্য। গোবিন্দ রায় যে মুহুর্তে দেখলেন পিতা বসন্ত রায় আক্রান্ত হয়েছেন; বাবাকে  বাঁচানোর জন্য তিনি নিজের অস্ত্র ছুঁড়ে মারলেন প্রতাপাদিত্যের দিকে ; কিন্তু সেই অস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। স্বভাবতই আতঙ্কিত এবং ক্রুদ্ধ প্রতাপাদিত‍্য গোবিন্দ রায়কে তড়িৎ গতিতে আক্রমণ করলেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই নিহত হলেন গোবিন্দ রায়। এক বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি হল মুহুর্তের মধ্যে। দু’পক্ষের লোকজনই সশস্ত্র হয়ে পরস্পরকে আক্রমণ শুরু করল। প্রতাপাদিত্যের তরবারির কঠিন আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল মহারাজা বসন্ত রায়ের ছিন্ন মস্তক – যে বসন্ত রায় তাঁকে পুত্রের অধিক স্নেহে মানুষ করেছেন। দেবতুল‍্য পিতৃব্য এবং ভ্রাতৃরক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল প্রতাপাদিত্যের হাত।  বসন্ত রায়ের অন্য পুত্রেরা পিতৃ ও ভ্রাতৃশোকে পাগলের মতো হয়ে প্রতাপাদিত্যকে আক্রমণ করলেন। অস্ত্রচালনায় পটু প্রতাপাদিত্য ও তাঁর রণদুর্মদ সঙ্গীদের সাহায্যে তাঁদের অতি সহজেই পরাজিত এবং একে একে হত্যা করলেন খুড়তুতো ভাইদের। বসন্ত রায়ের স্ত্রী নাবালক কনিষ্ঠপুত্র রাঘব রায়কে কচুবনে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কচুবনে লুকিয়ে প্রাণ রক্ষা করেছিলেন বলে রাঘব রায় পরবর্তী সময়ে কচু রায় নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। প্রতাপাদিত্য কচু রায়কে খুঁজে বের করে নিজের স্ত্রীর কাছে দেন, বড় করে তোলার জন্য। বসন্তে রায়ের স্ত্রী, যিনি জন্মের পরে মাতৃহীন প্রতাপাদিত্যকে কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেন নি – তিনি সহমৃতা হলেন।  বসন্ত রায়ের শোকসন্তপ্ত জামাতা রূপরাম বসু, বালক কচু রায়কে প্রতাপাদিত্যের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য বসন্ত রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিজলী–কাঁথি রাজ ঈশা খাঁ মশোন্দরীর শরণাপন্ন হলেন। হিজলী-কাঁথি রাজ‍্যের সেনাপতি বলবন্ত সিং কচু রায়কে উদ্ধার করার গুরুদায়িত্ব নিলেন। ঈশা খাঁ মশোন্দরীর তরফ থেকে প্রচুর উপহার সামগ্রী নিয়ে প্রতাপাদিত্যের কাছে পৌঁছলেন বলবন্ত সিং। ধূর্ত বলবন্ত সিং জানতেন, বলপ্রয়োগ করে কিছুই হবে না; অতএব তিনি ছলনার আশ্রয় নিয়ে প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে প্রতারণা করে কচু রায়কে উদ্ধার করে হিজলী নিয়ে এলেন। রূপরাম বসু শ‍্যালক কচু রায়কে পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলেন; খুশি হওয়ার পালা ঈশা খাঁ মশোন্দরীরও – কেননা তিনি উদ্ধার করে দিতে পেরেছেন বন্ধুপুত্র-কে। কিন্তু ঈশা খাঁ মশোন্দরী এবং বলবন্ত সিং এ-ও বুঝলেন, প্রতারিত প্রতাপাদিত্য এত সহজে তাঁদের ছেড়ে দেবেন না; প্রতিশোধ তিনি নেবেনই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা যুদ্ধপ্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেন। এবং বাস্তবে ঘটলও তাই। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জল এবং স্থল দু’দিক থেকে হিজলী আক্রান্ত হল। বিশাল নৌবহরের সাহায্যে জলপথে হিজলীর ওপর আক্রমণের ছক সাজালেন নৌসেনাধ্যক্ষ পর্তুগীজ ফ্রান্সিসকো রডা। আর ডাঙায় আক্রমণের নেতৃত্ব দিলেন বিচক্ষণ শঙ্কর চক্রবর্তী , সূর্যকান্ত, মদন মল্ল ও রঘুপতি। স্বয়ং প্রতাপাদিত্য থাকলেন আক্রমণের পুরোভাগে। এ আক্রমণ সহ্য করার ক্ষমতা ঈশা খাঁ মশোন্দরীর ছিল না। তবুও তিনি লড়লেন সাধ্যমত। আঠের দিনের মাথায় প্রতিপক্ষের একটি গোলার আঘাতে তিনি প্রাণ হারালেন। সমগ্র হিজলী তখন অবরুদ্ধ ; ফ্রান্সিসকো রডার ক্রমাগত গোলার আঘাতে হিজলী দুর্গ বিদ্ধস্ত। ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর সেনাপতি বলবন্ত সিং প্রাণ হারালেন। ভেঙে পড়ল সমস্ত অবরোধ। নির্মম ভাবে লুণ্ঠন করা হল হিজলী। কিন্তু হায়! যে কচু রায়কে পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতাপাদিত্য এই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধ লড়লেন, সেই কচু রায়কে কিন্তু তিনি উদ্ধার করতে পারলেন না। দুরদর্শী রূপরাম বসু, প্রতাপাদিত্যের আক্রমণের শুরুতেই শ‍্যালক কচু রায়কে নিয়ে দিল্লীর দিকে রওয়ানা হয়ে যান। আসলে তিনি আগেই অনুমান করেছিলেন যে, এই যুদ্ধের কি পরিণাম হতে চলেছে। হতাশ প্রতাপাদিত্য অগত্যা দু’জন উচ্চপদস্থ কর্মচারীর হাতে হিজলী – কাঁথি রাজ্যের শাসন ও রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করে, সসৈন্যে যশোহর ফিরে এলেন। এই যুদ্ধে দক্ষিণবঙ্গের একটি বড় অংশ

Scroll to Top