হিন্দুয়ানী

হিন্দুয়ানী: হিন্দুরা গোস্তকে “মাংস” ও গোসলকে “স্নান” কেন বলে?

হিন্দুয়ানী: হিন্দুরা গোস্তকে “মাংস” ও গোসলকে “স্নান” কেন বলে? পৃথিবীর যে কোনো সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার সঙ্গে ইসলামের বিরোধ একটি অনিবার্য ঘটনা। হিন্দুয়ানী

 

এই প্রশ্নটা হওয়া উচিত মুসলমানরা মাংসকে “গোস্ত” ও স্নানকে “গোসল” বলে কেন?

কেন এরকম হওয়া উচিত? হওয়া উচিত কারণ ‘মাংস’ ও ‘স্নান’ তৎসম শব্দ, বাংলা ভাষায় তৎসম ও তদ্ভব শব্দের ব্যবহারটাই স্বাভাবিক। তার মানে এই নয় যে বাংলা ভাষায় বিদেশী শব্দের ব্যবহার অস্বাভাবিক। দীর্ঘ দিন ইসলামী শাসন ও ব্রিটিশ শাসনে থাকায় বাংলা শব্দ ভান্ডারে অসংখ্য আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শব্দ আছে এবং স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়। বাংলা শব্দ ভান্ডারে প্রচুর পর্তুগিজ, ফরাসি ও চিনা শব্দও আছে এবং এগুলো স্বাভাবিক ভাবেই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তৎসম শব্দের মধ্যে হিন্দুয়ানীর গন্ধ পাওয়া এবং সচেতন ভাবে সেগুলো কে পরিহার করবার প্রচেষ্টাকে কখনোই স্বাভাবিক বলা যায় না।

একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী যে কারণে রামধনুকে রংধনু বলে সেই কারণে সে মাংসকে “গোস্ত” ও স্নানকে “গোসল” বলে। রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় আপত্তি প্রর্দশন করে; নজরুলের কবিতার বিকৃতি নিয়ে আসে যেমন, ‘মহাশ্মশান’-এর পরিবর্তে ‘গোরস্থান’ লিখে স্বস্তি বোধ করে।হিন্দুয়ানী

 

পৃথিবীর যে কোনো সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার সঙ্গে ইসলামের বিরোধ একটি অনিবার্য ঘটনা। ইসলাম কীভাবে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত উপনিবেশ চালায় তা বুঝতে হলে ইসলামের রাজনৈতিক চরিত্র বুঝতে হবে। ইসলাম ‘মুসলমান’ বলে যে জাতিসত্ত্বার কথা বলে তার কোনো নৃতাত্ত্বিক বাস্তবতা নেই।

 

কোনো ভূখণ্ডে ইসলাম নিজের উপনিবেশ তৈরি করে বসত গড়ে কিন্তু সেখানে তার অনুসারীদের বাঁচতে হয় শিকড়হীন হয়ে। যে কোনো ইসলামী উপনিবেশে মুসলমান সেখানকার নৃতাত্ত্বিক ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি কে শিরক, বিদআত, জাহেলী মনে করে ঘৃণা সহকারে বিরোধিতার কথা বলে। যেমন ‘বাঙালী’ নামে পরিচিত এই জনগোষ্ঠীর মুসলমান অংশটি নিজেদের হাজার হাজার বছরের নৃতাত্ত্বিক ধারার উত্তরসূরি মনে না করে,

আরবের কাউকে নিজের পূর্বপুরুষ মনে করে। নিজের নববর্ষকে এরা শিরক মনে করে দূরে থাকে। নিজের ঐতিহ্যগত পোশাক ও সংস্কৃতি কে হিন্দুয়ানী মনে করে ঘৃণা করে।

এমনকি নিজের ভাষার তৎসম শব্দগুলো তার কাছে কুফরি মনে হয়। সে তাই স্নান করাকে গোসল বলে, হাত-পা ধোয়া কে অজু করা বলে, প্রার্থনা করাকে দোয়া করা বলে, অতিথি কে মেহমান বলে, জলখাবারকে নাস্তা বলে।হিন্দুয়ানী

শুদ্ধ সুশ্রাব‍্য বাংলা প্রতিশব্দ থাকা সত্ত্বেও সে কেন এই সব বিজাতীয় শব্দ ব‍্য‍বহার করে তা ইসলামের সাংস্কৃতিক ও জাতিগত উপনিবেশের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।

প্রত্যেক মুসলমান নিজভূমে বাস করে ইসলামের তৈরি করা উপনিবেশ। নিজের সদস্যদের চিহ্নিত করতে ইসলাম তার অনুসারীদের শুধু শরীরে ইসলামের সিলমোহর এঁকে দেয়ার নিয়ম রাখেনি, নাম শুনেই যেন নিজের সদস্যদের চিহ্নিত করা যায় তারও ব্যবস্থা রেখেছে।

ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী মুসলমানের নাম আরবিতে হতেই হবে, যদিও আরব ইসলাম আসার বহু আগেই ছিল। পৃথিবীর যেখানেই মুসলমান থাক না কেন, আগে সে মুসলমান, তারপর অন্য কিছু। তাই যাদের আন্দোলনের ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে আরবি তাদের কাছেও অতীব পবিত্র ভাষা, নিজের মাতৃভাষার চাইতেও পবিত্র।

 

তাই তারা নিজেদের আত্মজের নাম রাখে আরবিতে। আর সব থেকে মজার ব্যাপার হলো অধিকাংশ মুসলমান সেই সব আরবি শব্দের অর্থ জানে না। ব্যতিক্রম নেই তা নয়, কাজি নজরুল ইসলাম তার সন্তানদের নাম রেখেছিলেন বাংলায় কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম, সব্যসাচী আর অনুরুদ্ধ। কিন্তু ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই!হিন্দুয়ানী

 

বাংলাদেশের বাংলা ভাষীদের গর্ব করে বলে তাদের ভাষা আন্দোলনের ফলেই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে চলা আন্দোলনকে সমর্থন করে লেখালেখির মাধ্যমে সমর্থন দিচ্ছে যে পত্রিকাগুলো সেগুলোর নাম জানেন? ‘ইত্তেফাক’, ‘ইনসান’, ‘ইনসাফ’, ‘দৈনিক আজাদ‘, ‘নওবেলাল‘! বিশ্বাস করুন, বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা জাগানো সম্পাদকীয় গুলো বের হত এই সব উর্দু নামের পত্রিকাগুলো থেকে!”উর্দু ভাষা ও হিন্দি ভাষার তফাৎ জানেন?

 

একটু পড়াশোনা করে দেখুন তো এই দুই ভাষা কোথায় পৃথক? আপনি জেনে অবাক হবেন যে ভাষা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই দুটো কার্যত একই ভাষা। তফাৎ দুই জায়গায়:১. উর্দু আরবি লিপিতে লেখা হয় কিন্তু হিন্দি দেবনাগরী লিপিতে। ২. উর্দু ভাষায় আরবি ও ফার্সি শব্দের ব্যবহার অনেক বেশি কিন্তু হিন্দিতে তৎসম ও তদ্ভব শব্দের ব্যবহার বেশি।

ইসলামের প্রভাবে মুসলমানের মুখে বাংলা ভাষাটা এত পাল্টে গেছে যে শুধু আরবি লিপিতে লিখলে এটা উর্দুর মত কিছু একটা হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্বাস হচ্ছে না? বেশ তো, নীচের কবিতাটি পড়ে দেখুন তো এই কবিতাটি কি আপনি আগে কখনো পড়েছেন?

“ফজরে উঠিয়া আমি দিলে দিলে বলি
সারাদিন আমি যেন নেক হয়ে চলি
হুকুম করেন যাহা মোর বুজুর্গানে
আমি যেন সেই কাম করি দিলে জানে।

 

হিন্দুয়ানী

 

“কবিতাটি আগে পড়ে থাকলে মূল কবিতাটি থেকে এই অংশটুকু কমেন্টে লিখে জানান। যে মুসলিমরা মূর্তি পূজা কে শিরক মনে করে আর মূর্তি পূজারীদের কাফের মনে করে তারা জানেনা তাদের আসমানী কিতাবের যে আরবি অক্ষর গুলো আছে সেই অক্ষর গুলো আবিষ্কার কিন্তু ইসলাম আশার হাজার হাজার বছর আগে কুরাইশরা আবিষ্কার করেছিল।

 

সেই মূর্তি পূজারী কাফের কুরাইশদের আবিষ্কার করা আরবি অক্ষর কে তারা কখনো ঘৃণা করে নি। সেই অক্ষরে লেখা আসমানী কিতাব কে মাথায় করে রেখেছে, বাহরে কি হিপোক্রেসি।

 

বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি,আর ফুফা, খালা, তালাক, নিকাহ্, হালালা, হারাম, গোসল,জাযেস, পানি,জমিন,শোকের, দাওয়াত, আসমান,রহমত, দোয়া, রিজিক, আমিন,বিশমিল্লাহ,ইন্না লিল্লাহ, মাশাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি আরবী উর্দু ভাষা। সুতরাং বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করলে,বাংলা ভাষায় কথা বললে বাঙালি হওয়া যায় না।এক হাজার বছর আগে লুঠ করতে এসেছিল, এখন জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে সব, এমনকি বাংলা ভাষাটাও দখল করে নিয়েছে।