কেন সনাতন ধর্ম পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট মানবিক ধর্ম ? হিন্দু তথা সনাতন ধর্ম সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে এমন একটি ধর্ম বা বিশ্বাস যা মানুষকে সেই পরম সত্যের কাছে নিজেকে তুলে ধরার জন্য চরম উচ্চমার্গ বা দর্শন।
বর্তমান এই ভোগবাদী বিশ্বে সনাতন তথা হিন্দু সংস্কৃতি বোঝার মতন সেই উচ্চমার্গ সম্পূর্ণ মানুষের সংখ্যা খুবই সামান্য পশ্চিমা যে সমস্ত দর্শনগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে তার মূল থিওরি টি হল বস্তুবাদী দর্শন অর্থাৎ ভোগ-বিলাসী মধ্যেই সেই লক্ষ্য এবং পথকে খুঁজে বের করা।
কিন্তু সনাতনী তথা ভারতীয় সংস্কৃতি ঠিক এর উল্টোটা, এখানে একজন ব্যক্তি কিভাবে তার নিজস্ব চিন্তা-ধারা দিয়ে সেই পরম শক্তির সাথে আধ্যাত্মিকতার সত্যতার সাথে মিলিত হবে সেই শিক্ষা দিয়ে থাকে। যাতে ভোগবাদী চিন্তাধারার বিন্দুমাত্র সুযোগ নাই, এই কারণে ভারতীয় সভ্যতাতে আমরা দেখতে পাই এখানে ধর্ম ব্যক্তি এবং ব্যক্তির মুক্তির দর্শন।
অন্যদিকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে সমষ্টিগত ভাবে বস্তুবাদী, ভোগবাদী চিন্তা ধারা প্রতিফলন করার এক অন্যতম মাধ্যম হিসেবে। আজকে মূলত আমরা এই লেখায় আলোচনা করব একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যক্তির কিছু চিন্তা ভাবনা যা তিনি সনাতন হিন্দু সংস্কৃতি থেকে পেয়েছেন। এবং যার জন্য তিনি সনাতনী সভ্যতা এবং ভারতীয় দর্শনকে তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা করেন।
এই লেখাটির মূলত মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ভাইয়ের ফেসবুক ওয়াল থেকে তার অনুমতি ক্রমে এখানে শেয়ার করা হয়েছে, আশা করি আপনারা এই লেখাটির মাধ্যমে ভারতীয় তথা সনাতনী বৈদিক সভ্যতার অনেক অজানা তথ্য জেনে সমৃদ্ধি হতে পারবেন।
পূজা ও ভাবনা
ছোটবেলা থেকে আমার জাতভাইদের থেকে আমাদের ধর্ম প্রচারকদের থেকে প্রতিমা পূজারীদের সম্পর্কে অনেক আজবাজে ও নেগেটিভ অর্থহীন কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। সেই সাথে আমাদের ধর্মীয় পুস্তক পড়েও ঘৃনা এসেছিল একটা সময় প্রতিমা পূজারীদের প্রতি যা ছিল স্বাভাবিক। আমাদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থটাও ও প্রতিমা পূজারীদেরকে ঘৃনা করতে শিখিয়েছিল আমাকে।
কিন্তু শেষ পযর্ন্ত প্রতিমা পূজারীদের প্রতি ও সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আমার ঘৃনা বা বিদ্বেষ টিকে থাকেনি বরং তাদের প্রতিমা পূজা ও ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সেগুলোর কারন জানতে গিয়ে উলটো প্রতিমা পূজারীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা চলে আসে এবং মুসলমান ঘরের সন্তান হয়েও আমিও হয়ে উঠি কিছু কিছু বিষয়ে সনাতনীদের মতো পূজারী, কেন? সেই কথাই বলবো আজ।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজায় যে প্রতিমা তৈরি করা হয় সেগুলোর বেশিরভাগ নারী মূর্তি এবং বিভিন্ন পশুপাখি ও প্রানীদের মূর্তি। তারা যুগযুগ ধরে বিশ্বাস করে মানুষের মধ্যেই ভগবান বিদ্যমান।
মানুষের সেবার মাধ্যমেই সেই কল্পিত ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা যায়। ঈশ্বরের খুশি, সন্তুষ্ট করা বলতে তারা বোঝায় মানুষের সাথেই ভালো ব্যাবহার করে মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে মানুষের সেবার মাধ্যম দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া। মানুষকে বাদ দিয়ে ঈশ্বর নেই।
তাই তাদের কল্পিত নির্মিত পূজায় ভগবানদের মূর্তিগুলোর হাত-পা-মুখ-অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মানুষের মতো দেখতে।
এছাড়াও আরো অসংখ্য পশুপাখি গাছপালার মূর্তিও দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন পূজা মন্ডপে।
তারা বিশ্বাস করে শুধু মানুষকে ভালোবাসলে মানুষের সেবা করলেই ভালোবাসার সেই ভগবানকে পাওয়া যাবে এমন না ; ভালোবাসতে হবে পশুপাখিদেরও। তাই তারা অসংখ্য প্রানী আছে তাদের হত্যা করেনা যেমন ইদুর সাপ ও প্রকৃতির বিভিন্ন প্রানী।
সনাতনীরা বিষাক্ত সাপকে পযর্ন্ত পূজা করে। মনসা পূজা বলে যেটাকে। আজ আধুনিক যুগে সভ্য ইউরোপিয়ান ও আমেরিকানরা সহ পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশেই বন্য প্রানী শিকার নিষিদ্ধ ও আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তারা আজ উপলব্দি করেছে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য শুধু মানুষকে বাচিয়ে রাখলে হবে না; ভালোবাসতে হবে সংরক্ষণ করতে হবে বন্য প্রানীদেরও।
তাদেরকেও টিকিয়ে রাখতে হবে এই পৃথিবীতে। অথচ দেখুন আজকের সভ্য ভদ্র ইউরোপিয়ানরা ধরনীকে টিকিয়ে রাখতে পশুপাখিদের ও বিভিন্ন প্রানীদের টিকিয়ে রাখতে বলছে অথচ এই ভারতীয় উপমাদেশে হাজার হাজার বছর আগেই সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা পশুপাখিদের গুরুত্ব বুঝতে পেরে বন জঙ্গলের বিষাক্ত সাপ পানির ভয়ংকর হিংস্র কুমির ও বনের বাঘকেও তারা পূজা করে। পূজা মন্ডপে মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাদের সন্মান জানায় হাজারো বছর ধরে।
শুধু কি মানুষ আর পশুপাখিদের বাচিয়ে রাখলে পৃথিবী বাচবে! না। ধরনীকে টিকিয়ে রাখতে বৃক্ষদেরও ভালোবাসতে হবে সংরক্ষণ করতে হবে বনাঞ্চলও। পূজা মন্ডপ ছাড়াও আমি ছোট থেকে দেখে আসছি আমাদের অত্র অঞ্চলে বিশাল বিশাল বটবৃক্ষ ও পাকুড় গাছকেও তারা পূজা করে ভগবানরুপে।
সত্যিই তো গাছ আমাদের সাক্ষাৎ ভগবান। গাছ না বাচলে আমরা অক্সিজেন পাবো কোথা থেকে? বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে। কয়েকদিন পানি পান না করলেও মানুষ বাচে। কিছুদিন খাবার না খেলেও মানুষ বাচে। কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া আমরা বাচতে পারবো না কয়েক মিনিট ও।
গাছের গুরুত্ব আজ বিজ্ঞানীরা উপলব্দি করেছে। পরিবশবীদরা কি বলছে গাছ সম্পর্কে? অথচ দেখুন এই উপমহাদেশের সনাতনীরা কতোদিন ধরে বৃক্ষপূজা করছে। তারা পাকুড় গাছ ও বটবৃক্ষ পাশাপাশি থকলে বিয়ে দেয়। আনন্দ করে। অনুষ্ঠান করে পূজা করে।
মূলত হিন্দু ধর্মটা চর্চা হয় প্রকৃতিকে কেন্দ্র করেই। প্রকৃতি সেবা বাদ দিয়ে হিন্দু ধর্মকে কল্পনা করা যায় না। তাদের কিছু কুসংস্কার ও নারীদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য কিছু অলিখিত নিয়মকানুন বাদ দিলে সনাতন ধর্মটা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট মানবিক ধর্ম এবং পৃথিবীকে বাচাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সনাতনী তথা হিন্দু ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
কি বলেন আপনারা? সনাতন ধর্ম সনাতন ধর্ম
আর পড়ুন…..