পশ্চিমবঙ্গে-নির্বাচন

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি।-দুর্মর

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি, ভরাডুবি ঘটতে চলেছে মমতা ব্যানার্জির…..
আজ থেকে দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সময় আমি যখন বলেছিলাম, “পশ্চিমবঙ্গে ৪২ টা আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০টি আসন বিজেপি জিতবে” অনেকেই এটাকে নিলয় চক্রবর্তীর পাগলের প্রলাপ বলেছিলেন,

অনেকেই আমার সেইসময়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বা ধারণাকে অবান্তর বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। কেউ কেউ সেসময় বলেছিলেন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ৬ থেকে ৮টি বা খুব বেশি হলে ১০ টি লোকসভা আসনে বিজয়ী হবেন।

কিন্তু উপমহাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এবং বিভিন্ন মিডিয়ার জনমত জরিপকে ভুল প্রমাণিত করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি বিজয়ী হয়েছিল ঠিক ১৮ টি আসনে।

পশ্চিমবঙ্গে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী তৃণমূল কংগ্রেস যারা বলেছিল ৪২ টা আসনের মধ্য ৪২টাই তারা জিতবে, বাস্তবে পেলো ২২টি আসন। কংগ্রেস জিতেছিল ২ টি আসনে, আর বামেরা কোন আসনেই জয়লাভ করতে পারেনি।

এবার চলে আসি মূল বিষয়ে। ইতিমধ্যে ভারতের নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছেন। সর্বমোট ২৯৪ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় আগামী ২৭ শে মার্চ থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, ৮ দফায় এই ভোটগ্রহণ চলবে ২৯ শে এপ্রিল পর্যন্ত, আর ফলাফল ঘোষণা করা হবে ২রা মে।

আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বিজেপি কিভাবে ২৯৪ টি আসনের মধ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা ১৮০ থেকে ২০০ আসনে বিজয়ী হবে??? আবেগের বশবর্তী হয়ে নয় বরং বাস্তব তথ্য উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণ করে বলছি কিভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি তথা বিজেপি মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটিয়ে বিজয়ী হতে চলেছে।

২০১৯ সাল অর্থাৎ আজ থেকে ২ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে,
শতকরা হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস সর্বমোট ভোট পেয়েছিল ৪৩.২৮%
বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৪০.২৫%
কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৫.৬১%
বামফ্রন্ট ভোট পেয়েছিল ৭.৫০%
বাকি ৩.৩৬% ভোট বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস যে ৪৩.২৮% ভোট পেয়েছিল এর অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটার। ধারণা করা হয় ৩০% মুসলিম ভোটারের মধ্যে কমপক্ষে ২৫% ভোটই তৃণমূলের দিকে গিয়েছিল, ৩% মুসলিম ভোট কংগ্রেসের দিকে আর বাকি ২% বামফ্রন্টের দিকে ।

সে হিসেবে মমতার বাক্সে হিন্দু ভোট পড়েছিল (৪৩.২৮% – ২৫%) = ১৮.২৮% মাত্র। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আর এককভাবে মুসলিম ভোটব্যাংক ধরে রাখতে পারছেনা।

পশ্চিমবঙ্গের ফুরফুরা দরবার শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী “ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট” তথা আই. এস. এফ. নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন এবং ৩০% মুসলিম ভোট টার্গেট করে ইতিমধ্যে বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

অন্যদিকে ভারতের অন্যতম মুসলিম সংগঠন আসাদ উদ্দিন ওয়েইসির “মীম” পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট টার্গেট করে তারাও একক অথবা জোটবদ্ধভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ, মমতা ব্যানার্জির মুসলিম ভোটব্যাংকও হাতছাড়া হওয়ার পথে।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি যে ২৫% মুসলিম ভোট পেয়েছিল, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে এর অর্ধেক অর্থাৎ ১২.৫% মুসলিম ভোটার এবার আব্বাস সিদ্দিকী তথা বাম – কংগ্রেস -আই.এস.এফ জোটের দিকে + আসাদ উদ্দিন ওয়েইসির “মীম” এর দিকে নিশ্চিতভাবে ভিড়ে যাবে।

সেক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের এবারের নির্বাচনে শতকরা ভোটের হার দাঁড়াবে ( ১৮.২৮% হিন্দু ভোট + ১২.৫০% মুসলিম ভোট) = ৩০.৭৮% ভোট! এই হিসাবে বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসের ভোট গত লোকসভা নির্বাচনের চাইতে বেড়ে দাঁড়াবে ( কংগ্রেসের ৫.৬১% হিন্দু + মুসলিম ভোট + বামফ্রন্টের ৭.৫০% হিন্দু + মুসলিম ভোট + আব্বাস সিদ্দিকী + আসাদ উদ্দিন ওয়েইসির মুসলিম ভোটব্যাংক ১২.৫০%) = ২৫.৬১% ভোট।
বিজেপি ২০১৯ সালের গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট পেয়েছিল ৪০.২৫%। প্রসঙ্গত, এই ৪০.২৫% এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো কোন মুসলিম ভোট বিজেপি পায়নি, প্রায় ভোটারই হিন্দু।

নিশ্চিতভাবেই এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার আরো বাড়বে, আগের চাইতেও বেশি হিন্দু ভোটার বিজেপিকে ভোট দিবে। তবুও বিজেপি বিরোধীদের তর্কের সৌজন্যে ধরেই নিলাম এর চাইতে বেশি ভোট বাড়বেনা।

অর্থাৎ, ৪০.২৫% ভোটই বিজেপির বাক্সে যাবে, এরপরও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার দাঁড়ায় ঠিক একইরকম ৪০.২৫%।

মুসলিম ভোটব্যাংকের একটা বৃহত্তর অংশ (আনুমানিক ১২.৫%) হারানোর পর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার দাঁড়ায় (৪৩.২৮%- ১২.৫% মুসলিম ভোটব্যাংক) = ৩০.৭৮%।
বাম-কংগ্রেস, আব্বাস সিদ্দিকীর আই. এস. এফ. এবং আসাদ উদ্দিন ওয়েইসির মীমের সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার দাঁড়ায় (কংগ্রেস ৫.৬১%+ বাম ৭.৫০%+ আইএসেফ এবং মীমের ১২.৫%) = ২৫.৬১% ( তৃণমূল কংগ্রেসের ১২.৫% মুসলিম ভোটব্যাংক এখানে যুক্ত হওয়ার পর)
অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার দাঁড়ায় ৩.৩৬%।

অর্থাৎ, ভোট প্রাপ্তির শতকরা হিসেবে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস সহ সকল রাজনৈতিক দলকে বিপুল ব্যবধানে পিছনে ফেলে রীতিমতো গেরুয়া সুনামী চালিয়ে এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি।

তৃণমূল বলুন বা বাম কংগ্রেস আই এস এফ, মীমের জোট বলুন, কোন অংকের হিসেবেই বিজেপিকে আর পশ্চিমবঙ্গে আটকাতে পারবেনা, কমপক্ষে ১৮০ থেকে ২০০ আসনে বিজেপির ঐতিহাসিক বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক-নিলয় চক্রবর্তী।

আরো পড়ুন…