দি কাশ্মীর ফাইলস

”দি কাশ্মীর ফাইলস” ম্যুভিটি, ”দি বাংলাদেশ ফাইলস” বা ”দি বাংলাদেশ হিন্দু ফাইলস” ম্যুভি তৈরীতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।

”দি কাশ্মীর ফাইলস” ম্যুভিটি, ”দি বাংলাদেশ ফাইলস” বা ”দি বাংলাদেশ হিন্দু ফাইলস” ম্যুভি তৈরীতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।

 

ম্যুভি না বলে এটিকে ডক্যুমেন্টারি বলাই ভালো। ভেবেছিলাম ঘন্টা দেড়েকের ছবি, না, পৌনে তিন ঘন্টা। হলে মানুষ বেশি ছিলো না, তবে পিনপতন নিস্তব্ধতা ছিলো।

 

মনে হলো সবাই ভারাক্রান্ত, যা টের পাওয়া যায় ম্যুভি শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, কারো মুখে কোন কথা ছিলোনা। আমাদের ইচ্ছে ছিলো, বাইরে ডিনার সেরে আসার, হলোনা, সরাসরি বাড়ী চলে আসি। আমাদের যেমন ২৫শে মার্চ ১৯৭১, কাশ্মীরি পন্ডিতদের তেমনি ১৯শে জানুয়ারী ১৯৯০।

 

আমাদের ১৯৭১ সালের অনেক ঘটনার সাথে কাশ্মীরি পন্ডিতদের দু:খজনক ঘটনার অনেক মিল। ১৯৭১ সালে হিন্দুদের টার্গেট করে হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো, কাশ্মীর পন্ডিতদেরও টার্গেট করে হত্যা ও বিতাড়ন করা হয়েছিলো। সেই কাফের, হিন্দু খেদাও!–ম্যুভিটি দেখতে দেখতে আমার মাথায় প্রথমে যে প্রশ্নটি এলো, এটি কি করে সম্ভব?

 

দিল্লিতে তখন কংগ্রেস ক্ষমতাসীন, পশ্চিমবঙ্গে বাম-রা। –ভারতের একটি রাজ্যে ইসলামী মৌলবাদীরা কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতদের মেরে-কেটে ঘরছাড়া করলো, প্রকাশ্যে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মারলো-কাটলো, কাশ্মীর রাজ্য সরকার নাহয় জ্বিহাদীদের সহায়তা করেছে, দিল্লির কংগ্রেস সরকার ‘কোন কথা বললো না’ -তা কি করে হয়? খট্কা থেকেই গেলো। ‘রালিভ গালিভ ইয়া চালিভ’ এ তিনটি আন্দোলনের শ্লোগান ছিলো, যার ইংরেজী ‘কনভার্ট, রান অর ‘ডাই’ অর্থাৎ বাংলায় ‘ধর্মান্তরিত হও, পালাও বা মর’?

 

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে তো প্রায় একই শ্লোগান ছিলো? –পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার নামে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজাকার হয়েছিলো; কাশ্মীরেও একই শ্লোগান ‘কাশ্মীর শুধু মুসলমানদের জন্যে’।–কাশ্মীর কি শুধুই মুসলমানের?

 

ইতিহাস তা বলেনা। কাশ্যপ মুনি’র নামানুসারে কাশ্মীর। ভূস্বর্গ কাশ্মীর। একটি হিন্দু পন্ডিত পরিবারের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হলেও ম্যুভিটি কাশ্মীরের প্রকৃত চিত্র, জ্বিহাদী সন্ত্রাসীদের মুখোশ খুলে দিতে পেরেছে।

 

আমি ম্যুভি ক্রিটিক নই, ইতিহাসের আলোকে কাশ্মীরি পন্ডিতদের সাথে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বর্বরতার ব্যাপক সাযুজ্য দেখতে পেয়েছি।

 

বাংলাদেশে এটি ঘটিয়েছিলো পাকিস্তানী সৈন্য ও দেশীয় রাজাকার। কাশ্মীরেও স্বাধীনতার নামে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো জ্বিহাদীরা, দু’টোই ধর্মের নামে? ম্যুভিটি দেখে সামাজিক মাধ্যমে একজন প্রশ্ন করেছেন, বাংলাদেশ বা ভারতে যারা এখন ইউক্রেনের সমর্থনে সোচ্চার (যা হওয়া উচিত), তাঁরা কি কাশ্মীরি পন্ডিতদের জন্যে সোচ্চার হবেন?

 

আমাদের দেশে শর্ষীনার পীর দুইবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পেয়েছেন, অথচ তিনি খাঁটি রাজাকার, নিজহস্তে মানুষ খুন করেছেন। কাশ্মীর ফাইলসে হুজুরের চরিত্রটা একই; বাড়ী দখলের চিত্রও হুবহু। ছবিটি স্পষ্টত: বলেছে স্বাধীনতা দাবির পিছনে ছিলো ‘পবিত্র জ্বিহাদ’।

 

ছবির নায়ক জেএনইউ’র কানহাইয়া কুমারের মত ভ্রান্তপথে চললেও শেষে সঠিক রাস্তায় আসে, কারণ সে সত্যিটা জানতে পারে যে, তাঁর পিতামাতা ও খুদে বড় ভাইকে জ্বিহাদীরা নিষ্ঠূরভাবে হত্যা করে। অথচ সে জানতো পালাবার সময় তাঁরা দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

 

আমাদের ইয়ংরা এমনি অনেক ভুল তথ্য জানে, তাদের সঠিক ইতিহাস জানা দরকার।–ম্যুভিতে একটি মাত্র গণকবর দেখানো হয়েছে, আমাদের গণকবরের সংখ্যা অগুনতি। ভারতে কাশ্মীরি পন্ডিতদের জন্মভূমি ত্যাগকে অনেকেই অস্বীকার করছেন।

 

তাঁদের বক্তব্য ওঁরা এমনিতেই কাশ্মীর ছেঁড়ে চলে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের দেশত্যাগকে অনেকেই, এমনকি তথাকথিত প্রগতিশীলরা তা-ই বলে থাকেন। কেউ স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করেনা, একথা ফিলিস্তিনীদের জন্যে যেমন সত্য, হিন্দুদের জন্যেও তা সত্য। আপনি একটি মানবেন, অন্যটি অস্বীকার করবেন, এ কেমন কথা?

 

ভেবে অবাক হই, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে এটি কি করে সম্ভব হলো? –কাশ্মীরি জ্বিহাদীদের পেছনে কাঁদের ইন্দন ছিলো? কারা এ জেনোসাইডকে বিশ্বকে জানতে দেয়নি? একটি সুবিধাবাদী মহল এ ম্যুভিকে ‘হিন্দুত্ববাদীদের’ অপপ্রচার বলতে চাইবে, অস্বীকার করতে চাইবে একটি গণহত্যাকে, এদের থেকে সাবধান!

 

–সেই ১৯৯০ সাল থেকে কাশ্মীরি পন্ডিতদেড় দাবি ছিলো, ৩৭০ ধারা বাতিল হোক, মোদী সরকার সেটি করেছেন। এই ম্যুভি স্যুপার হিট হবে। এটি একটি চরম সত্য প্রকাশ করেছে। সদ্য নির্বাচনে ৪টি রাজ্যে জয়ের পর এই ম্যুভি বিজেপি রাজনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনী’র নির্মমতা, বিশেষত: হিন্দুদের টার্গেট করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সবাই ভুলে থাকার চেষ্টা করলেও এই ম্যুভি ‘দি বাংলাদেশ ফাইলস’ বা ‘দি বাংলাদেশ হিন্দু ফাইলস’ অথবা ‘দি ১৯৭১ হিন্দু জেনোসাইড’ ম্যুভি তৈরীতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

 

বাংলাদেশ সরকার পারেন এমন একটি মহৎ উদ্যোগ নিতে। কাশ্মীরি পন্ডিত জেনোসাইড কাহিনী প্রকাশ্যে আসতে সময় লেগেছে ৩০ বছর।– আমাদের ৫০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, ১৯৭১ সালে সংঘঠিত জেনোসাইড সামনে আসা উচিত।

 

সত্য চাপা থাকেনা, আজ হোক কাল হোক তা বের হবেই। মৌলবাদী গোষ্ঠী ‘সানি লিওন’-কে নিয়ে ব্যস্ত থাক, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সত্য প্রকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। —

 

শিতাংশু গুহ, 
১২ই মার্চ ২০২২, নিউইয়র্ক।।

[email protected]; 646-696-5569

দি কাশ্মীর ফাইলস দি কাশ্মীর ফাইলস দি কাশ্মীর ফাইলস দি কাশ্মীর ফাইলস দি কাশ্মীর ফাইলস দি কাশ্মীর ফাইলস

 

 

আমাদের পাশে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।-ধন্যবাদ

আর পড়ুন….