“আমার লেখার সোর্স”- খুলনার দাঙ্গা, আর্য্য এবং সরস্বতী নদী। আমার সাম্প্রতিক লেখা গুলো পড়ে অনেকে প্রশ্ন করেছেন আমার সোর্স গুলো কি? দেখুন খুলনার দাংগার আগের দিন আমি আমার গ্রাম থেকে গিয়েছিলাম খুলনা শহরে স্কুলে ভর্তি হতে।
পরদিন পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রী খান আব্দুল সবুর খান পরিকল্পনা মাফিক এই “হিন্দু নিধন যজ্ঞ” শুরু করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের আদেশে, যা চলেছিলো ২১ দিন যাবত সারা পুর্ব পাকিস্তানে। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এ নিয়ে আজো অবধি কেউ কোনো নামী দামী লেখক লেখেন নি। হিন্দুদের আসল এবং সত্য ইতিহাস কার্পেটের তলায় মিথ্যার ঝাটা দিয়ে লুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছেন বামপন্থী ঐতিহাসিকেরা এবং লেখকেরা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন প্রতিথ যশা লেখক। তার লেখা আমি শ্রদ্ধার সংগে সেই ছোট বেলা থেকে পড়ে এসেছি (নীললোহিতের চোখের সামনে),বাড়ি ছিলো গোপালগঞ্জে।। তার পরিবারও পুর্ব পাকিস্তানের দাংগায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো। তিনি ও লেখেন নি। উনি ভাবতেন ঐ সব লিখে কি লাভ? আমার লেখা বেরুনোর পর ব্যাঙ্গালোর থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করে আমাকে সেই একই প্রশ্ন করেছিলেন “এই সব কেনো লিখছেন। ভুলে যান”।
পিঠে যে পোড়া দাগ নিয়ে সারা জীবন ঘুরে বেড়ালাম তা কি করে ভুলি??? আমি সাম্প্রদায়িক মোটেই নই। কিন্তু আমার সারা জীবনটাই যে নষ্ট এবং ছন্নছাড়া হয়ে গেলো। আমার ইচ্ছা, স্বপ্ন, পারিবারিক জীবন ভেঙ্গে গেলো। এমনকি “আহাম্মুখ উদবাস্তু” নাম ঘোচাতে কেটে গেলো জীবনের যৌবন কাল এখানে ওখানে, তা কি করে ভুলি? আর আমি নিজে যা দেখেছি ভুগেছি তাই লিখেছি। সোর্স কি করে বলি???? বিদ্যালয়ের এবং কলেজের পরীক্ষা যা অনেক গুলো পাশ করেছি, তাতে প্রথম হতে অন্যের লেখা টোকাটুকি বা নকল করতে হয়নি। আজো তাই নিজের দেখা ঘটনা লিখতে ছলনার আশ্রয় নিতে হয় না।
আর্য্য দের নিয়ে যা লিখেছি তা আমার সারা জীবনের পড়া শুনা করার ফসল, আমার বিশ্বাস এবং ধারনা ( বিশ্বাস নিয়ে নিয়ত ধ্যান করলে= ভাবলে, সেই বিশ্বাস অন্তরে গেথে যায়। অন্তরের গাথা ভাবনা যদি ১২ বছর ধরে মনের মধ্যে ধরে রাখা যায় তাহলে একটি “ধারনা” তৈরী হয়। এটাই যোগী রাজ পতঞ্জলি লিখে রেখে গেছেন)। পন্ডিতেরা কতো কিই তো বলেন। শ্রীকষ্ণ কোনোদিন ছিলেন না এবং তাকে নিয়ে কতো গাজাখুরি সমালোচনা। অথচ এই সেদিন সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যাওয়া দ্বারকা নগরী খুজে পাওয়া গেলো। সবাই এখনো স্বীকার করেনি কিন্তু একদিন করবেন।
হোমার এর লেখা “হেলেনের ট্রয়” নগরী নিয়ে কতো পন্ডিত হাসা হাসি করেছেন। বলেছেন”সম্পুর্ন কল্পনা প্রসুত”। তা ২০১৩ সালের জুলাইতে যখন তুরষ্কের ট্রয় দেখে এলাম, কি দেখলাম?? পন্ডিতেরা পি এইচ ডি করার জন্য যা লেখেন তা সব কি সত্য? না ,কখনোই না। ( ঐ রোমিলা থাপার যা লিখেছেন, তার বেশীর ভাগই হিন্দু বিরোঢী তত্ত্ব) ভ্রান্ত পন্ডিতের অভাব নেই।
আমি যদি বলি ‘মহাভারতের যুদ্ধ” কুরু এবং পাঞ্চালের যুদ্ধ == দুটি প্রাচীন জনপদের যুদ্ধ। শ্রীকৃষ্ণ এবং গীতা তার অনেক আগেকার, কেউ কি আপনারা বিশ্বাস করবেন? তবে এও আমার বিশ্বাস শ্রী কৃষ্ণ ছিলেন এবং তার প্রচারিত “ভাগবত ধর্ম” ই তাকে ঈশ্বরত্ব দিয়েছিলো। সেই সময় আজ থেকে প্রায় ৮০০০-৯০০০ বছর আগেকার।। ১২০০০ বছর আগে শেষ “তুষার যুগ” যখন শেষ হলো তখন বরফ গলতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে সারা পৃথিবীর উপকুল ভাগ জলের তলায় তলিয়ে গেলো। শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা গুজরাটের উপকুলে, মহাবলীপুরমের তিন মাইল দূরে সমুদ্রের তলে তলিয়ে যাওয়া শহর, আজ থেকে প্রায় ৯০০০ বছর আগেই সমুদ্র গ্রাস করেছে।
৫২ হাজার ঋষি মুনি বেদব্যাসের নেত্তৃত্বে ১২ বছর, বর্তমান বিহারের “নৈমিষারন্য” নামক জায়গায়, (তখন অরন্য ছিলো) অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের বেদ,উপনিষদ, গীতা, দর্শন, ১২০ খানা পুরান এবং মহাভারত সংকলিত করে রেখে গেছেন”। সেই মহাভারত (ইতিহাস) পান্ডবদের নাতি ‘রাজা জন্মেজয়ের’ সভায় সৌতি মুনি প্রথম বর্ননা করেন। তার আগে কেউ জানতো না। সেই থেকে, ১০০০০ শ্লোকের”কুরু পাঞ্চালের যুদ্ধ” বহু হাত ঘুরে আজ এক লক্ষ শ্লোক হয়েছে। তারা, অর্থ্যাত , এই ভুতুড়ে লেখকেরাই মহাভারতের মধ্যে ৭০০ শ্লোকের গীতা ঢুকিয়ে দিলেন যা “বেদব্যাস” এবং তার সহ যোগীরা সংকলিত করে রেখে গেছেন অনেক আগে।
সেই অসভ্য ভুতুড়েরা যা লিখেছেন রসালো করে, (শ্রীকৃষ্ণের ১৬০০০ স্ত্রী, গোপী ইত্যাদি) আমরা তাকেই “বেদবাক্য” বলে গ্রহন করেছি। ভাবুন ৮০০০ -৯০০০ বছর আগেকার এক মহাপুরুষের প্রেম কথা লিখছেন উনবিংশ শতাব্দীতে (প্রায় ১১০০০ বছর পর) কবি ‘জয়দেব’, সেদিনের কবি চন্ডীদাস।। এরা সবাই পন্ডিত এবং ভক্ত অবশ্যই। কিন্তু এদের কথা ইতিহাস বলে ধরে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ব্যংগ বিদ্রুপের সুচনা এই দুই মহান কবিই করে দিয়ে গেছেন।
“কালে কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জল, এ তাজমহল” লিখে রবীন্দ্রনাথ অসভ্য শাহজাহানকে মহান প্রেমিক বানিয়ে দিয়ে গেছেন। লম্পট সিরাজদৌলাকে মহান দেশপ্রমিক বানালেন “যাত্রা সম্রাট দুর্গাদাস বন্দোপাধায়্য। কবিদের কাজই এই। কল্পনা কল্পনা কল্পনা। কল্পনা এবং সত্য এক নয়। এই ভাবেই আসল সত্য চাপা পড়ে গেছে।
এই যে বৈদিক সভ্যতা নিয়ে কতোজনে কতো কিই তো লিখলেন। ‘মন্টিমার হুইলার’ বিশেষ পন্ডিত ব্যাক্তি। তিনি ১৯৫৩ সালে বললেন, সিন্ধু সভ্যতা ধংস করেছিলো হিন্দু আর্য্যদের দেবতা ইন্দ্র। ১৯২২ সালে রাখাল দাশ বন্দোপাধায় হরপ্পা আবিষ্কার করলেন। তারপর শুরু হলো দেশ বিদেশের পন্ডিত দের আনাগোনা খোড়াখুড়ি। তত্ব কি, এই হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীন তম সভ্যতা। কি আপদ!! ওই মেহেড় গড়ের কথা তো জানতাম না।
ওটা তো প্রায় ৬০০০ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দের শহর। আরে যা বলেছি ভুল বলেছি। হ্যা, ওই মেহেড়্গড় অর্থ্যাত ৮০০০ বছরের পুরানো সভ্যতাই খাটী। আবার একি বিপদ, ভারতের গুজরাটের উপকুলে ক্যাম্বে উপসগরে আবার খুজে পেলাম সমুদ্রের তলার এক শহর, যা কিনা ৩ মাইল চওড়া, ৭ মাইল লম্বা এবং ক্যম্পুটার বলে দিচ্ছে ৯০০০ বছরের বেশী বয়ষ ঐ শহরের। তা ওই নোংরা লোকগুলো তো কবে থেকে বলছে শ্রীকৃষ্ণ নাম একজন ওই অঞ্চলে ছিলেন। আচ্ছা ঠিক আছে ৯০০০ বছরের পুরানো শহর আছে ঠিক আছে তা কার তা স্বীকার করার কি দরকার ?
তাহলে এই সব সময়কার লোক গুলো, (৯০০০-৫০০০), যারা মহেঞ্জোদারো হরপ্পার আগেই ছিলো তারা কারা?????? ওদের ই তো ভারতীয়রা ‘আর্য্য’ বলে এবং বেদে এক নদীর কথা বার বার বলা আছে (নদীতমা–কোথাও কোথাও ২২ মেইল চওড়া) অনেক সুক্তে, তার নাম সরস্বতী,যার অন্তসলিলা নাম আছে তার গতি পথ ও তো ঐ স্যাটেলাইট ধরে ফেলেছে। এখন কি হবে? এই যুগে তো আর স্যাটেলাইট বন্ধ করা যাবে না। তাহলে তো স্মার্ট ফোন ও অফ হয়ে যাবে।
আরে বলে দে, মন্টিমার হুইলার কোনো পন্ডিত ই না। আর্য্যরা ওই ভোলগা থেকে আসেনি এই ভারত বর্ষের পুন্য ভুমিতেই ওদের ঊৎপত্তি ৯০০০-৮০০০ বছর আগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে, সরস্বতী নদী শুকিয়ে যাবার পর তারা ছড়িয়ে পড়লো, মেসোপটেমিয়া,
বর্তমান সিরিয়া, ইজরায়েল,মিশর, ইঊরোপ, রাশিয়াতে। অনেকে পরে ফিরলো ( Return of the Aryans- Bhawan S Gidhowani-ex- IAS officer) কানাডার মন্ট্রিয়লে বসে ২০ বছর ধরে যে বই টা লিখলেন সেটা পড়ে দেখবেন।) তারপর এলো, আরবী বর্বরেরা। শধু ধংস নয়, পুড়িয়ে দিলো সব লিখিত ইতিহাস। আর আজ তাদের সাকরেদ বামপন্থীরা সেই সুযোগে হিন্দুদের নানা ভাবে অপমানিত করার চেষ্টায় ঊঠে পড়ে লাগলো। তাতে যগ্য সঙ্গত দিলেন রোমিলা থাপার আর ইরফান হাবিব।
হ্যা ,আমি তাই বিশ্বাস করি, সেটাই আমার ‘ধারনা’। তাই লিখি,কিন্তু যা আমি আমার সারা জীবনের অধীত স্বল্প জ্ঞান দিয়ে জেনেছি, লিখি, তার সোর্স কি করে জানাই। এই বয়ষে আমি রোজ ৮ ঘন্টা রোগী দেখি, ৩ ঘন্টা পড়ি (যা পাই তাই পড়ি), ২ ঘন্টা লিখি, ৬ ঘন্টা ঘুমাই,আর বাকী সময় খাই দাই ঘুরে বেড়াই, কিছু অকাজ করি (একজনের সংগে গল্প করা-যা আমি সেই ছোট বেলা থেকে করে আসছি।
তাই আমার লেখার সোর্স জিজ্ঞাষা করবেন না। পছন্দ না হলে পড়বেন না। মিথ্যা বলে ঊড়িয়ে দেবেন। আমি তো পি এইচ ডি চাই না। সত্য খুজে বের করার চেষ্টা করি মাত্র।
লেখক-ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ