কাফিরিস্তান বা নুরিস্তান- আর্য্য এবং অনার্য্য-দুরর্ম

কাফিরিস্তান বা নুরিস্তান: আজ যারা আফগানিস্তানের ‘নুরিস্তান’ (কাফিরিস্তান) প্রদেশে বাস করে , যাদের মধ্যে প্রায় ৯৫% এখন মুসলিম, এরা আসলে কারা???? এই প্রশ্নের উত্তরের সংগে জড়িয়ে আছে সারা ভারত বর্ষের ভুমি পুত্রদের (Indigenous People of Bharat) সংগে যে

অমানুষিক অত্যাচার করার হয়েছে বিগত প্রায় ২৫০০ (আলেকজান্ডার৩২৭ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে) বছর থেকে শুরু করে , বিশেষ করে বিগত ১৫০০ বছর ধরে আজ অবধি (আরবী / তুর্কি, ১০০% বহিরাগত,বিদেশী এবং বিধর্মী)।।এই প্রশ্নের উত্তর আজো কেউ লেখেনি, বলেনি, জানেনি।
কাফিরিস্তান
কাফিরিস্তান
জানলেও চুপচাপ রয়ে যায় , ধামা চাপা দেয় বা ভুল কথা শুনিয়ে অত্যাচারিত সনাতনি হিন্দুদের ঘুম পাড়িয়ে রেখে দেয়। এই ঘুম পাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে ওই বিদেশী ঐতিহাসিকদের দ্বারাই। আরবী/তুর্কি দের সংগে তাদের সাকরেদ যে লেখক রা এসেছিলো, যেমন আলবেরূনী, ফেরদৌসী,
তারা তাদের প্রভুদের জয় গাথা লিখে রেখে গেছে। সেই কাজ বাবুর (বাবুর নামা) থেকে শুরু করে আকবরের উচ্ছিষ্ট ভোগীরাও (হিন্দু লেখকেরাও এর মধ্যে আছে, আর আকবর নামা বলে আর একখানি মিথ্যার ঝুড়ি আছে) আছে। তারপর আছে ব্রিটিশের ভাড়া করা লেখক।
বর্তমানে আছে চীন, প্রাক্তন রাশিয়ার ধামা ধরা বাম পন্থী বুদ্ধিজীবি, আর সর্ব শেষ সেইজিহাদীদের মাতব্বরপেট্রো ডলারএর যোগানদার এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা দপ্তরের অনুকম্পা প্রার্থী সিনেমা পরিচালক, ‘যোধাআকবরএর গাজাখুরী প্রেম কাহিনী নিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখক এবং তার পরিচালক, সম্প্রতি মেবারের রানী পদ্মিনী এবং লম্পট, রক্ত পিপাষু বিকৃত মস্তিষ্কের আল্লাউদ্দিন খলজীযে তার নিজের কাকাকে মেরে সুলতান হয়েছিলো এবং হিন্দুদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছিলো
সারা জীবনতাকে নিয়ে প্রেম কাহিনীর স্ক্রিপ্ট লেখক তার নামজাদা পরিচালক, এক গাদা টিভি এবং সংবাদ পত্রের সাংবাদিক, Booker প্রাপ্ত লেখিকা, প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রথম সারীর নেতা নেত্রী, উচু পদে আসীন ঐতিহাসিক, সবাই মিলে বহু বছর ধরে পরিকল্পিত ভাবে সনাতনি ভারতের সত্যিকারে সৃজন শীল, বিদগ্ধ, বিজ্ঞান ভিত্তিক, যুক্তিসম্মত ইতিহাসের শ্রাদ্ধ শান্তি করে ফেলেছে।
তা করেও এদের খামতি নেই। যা কিছু এখানে ওখানে ঝড়তি পড়তি আছে তার নিকেশ করে অসভ্য, বর্বরদের ধর্ম এবং শাসন ব্যবস্থা কায়েম না করা অবধি এদের বিশ্রাম নেবার সময় আসবে না। এরা, হুইয়েনসাং, মার্কো পোলো, পানীনি, বরাহ মিহির, এমনকি প্লেটোর লেখা এবং বিবরন দুই লাইনে শেষ করে দেবে।
রামায়নে ,মহাভারতে, ১২০ খানা পুরানে সনাতনি হিন্দুদের রাজন্য বর্গের যে বংশ তালিকা আছে, কাহিনী আছে তার সব গাজাখুরি কল্প কাহিনী বলে ঊড়িয়ে দেবে এক ফুৎকারে

আলেকজান্ডারের পর যে সব বৈদেশিক আগ্রাসী দস্যু ভারত বর্ষে এসে পৈশাচিক এবং নৃসংশ অত্যাচার, লুট তরাজ করেছে তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একদল ধ্বংস ,লুট তরাজ করে চলে গেছে নিজেদের দেশে ভারত বর্ষের হিন্দুদের ধন সম্পত্তি নিয়ে।

আর একদলজিহাদীপতাকা নিয়ে এসে গেড়ে বসেছে ভারতের সমস্ত অধিবাসীকেশান্তির ধর্মেদীক্ষিত করতে। ভারতের সিন্ধু, গঙ্গা, যমুনা, কাবেরীর শ্যামলিমায় তাদের মনে কোমলতা আসেনি কিন্তু শষ্য শ্যামল ভুমির উৎপন্ন সম্পদের ভাগীদার হয়েছে। খোড়া তৈমুর আর নাদির শাহ প্রথম দলে পড়ে।

চেঙ্গিজ খান বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করলেও ভারতবর্ষে ঢোকেনি। সিন্ধু দেশ দখল করেআরবী জিহাদীরা শান্তির বানীশক্ত ভিতের অপরে দাড় করিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু আর অগ্রসর হতে সাহস পায়নি। সেই কাজ শুরু হয়েছিলো ৩০০ বছর পরে।

আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থানের দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে, জল পথ ছাড়া স্থল পথে আমাদের দেশ ঊত্তর দিক থেকে আক্রমন করতে হতে হলে উত্তুংগ হিমালয় পার হতে হবে। ভারতের উত্তর তিব্বতের মালভুমি। তা পেরিয়ে আসাও অসম্ভব। পশ্চিমে আছে হিন্দুকুশ এবং তার মাঝে মাঝে গিরিপথ। এই গিরিপথ গুলোর খবর জেহাদিদের কাছে ছিলো, বিশেষ করে ব্যাবসায়ীক ব্যাপারে (সিল্ক রুট), অনেক দিন আগে থেকেই।

কে না এসেছে ভারতবর্ষে ? সাসানিদ, সামানিদ, কুষান,তুর্কী, সুবুক্তিগীন, তার পুত্র মাহমুদ,ঘোরী, মোঙ্গল। মোঘল, পাঠান,খলজী, দুরানী। ভারত মাতাকে ধর্ষন করতে এরা সবাই এসেছে— “এই ভারতের মহা মানবের সাগর তীরে”(ভারতবর্ষ কবিতারবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) এই মহা পুন্য কর্ম করতে এরা সবাই প্রথমে ঘাটি গেড়েছে বর্তমান আফগানিস্তানে যা কিনা, পুরান, রামায়ন, মহাভারতের কম্বোজ, কেকয় (কৈকেয়ীর কেকয়) এবং গান্ধার (গান্ধারীর গান্ধার) রাজ্য

গান্ধার রাজ্য” মহাভারত আগে না ঋকবেদআগে নিয়ে বিচার করতে বসে লাভ নেই। কারন এক দল পন্ডিত তো মহাভারতকে গাজাখুরি গল্প বলে ঊড়িয়েই দেন। তাদের সংগে এই তর্ক যুদ্ধে যাবার কোনো প্রয়োজন দেখিনা,কারন কোনো প্রমান আমার কাছে নেই। আমি জানি মহাভারতের সময় ৫০০০ বছর আগে। পন্ডিতেরা বলেন, বেদের সংকলন হয়েছে ৩০০০ বছর আগে, অর্থ্যাত আলেকজান্ডারের ভারতে আসার মাত্র ৬০০ বছর আগে। তাহলে দন্ধ তো লেগেই গেলো।
মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্র গুপ্ত এবং কৌটীল্য আকেকজান্ডারের সমসাময়িক। তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে যে ঋকবেদের সুক্ত গুলো যারা লিখেছিলেন তারা চন্দ্রগুপ্তের মাত্র ৬০০ কি ৭০০ বছর আগেই সেই ভোলগা নদীর তীর থেকে এতো দূরে এসে যাযাবর জীবন থেকে বেরিয়ে,ঘোড়াদের ঘাস খাওয়ানো বন্ধ করে,ক্ষত্রিয় সেজে, বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বিগ্রহ করে, ভারতে বসবাস কারী সমস্ত আদিবাসীকে মেরে আর্যাবর্তপ্রতিষ্ঠা করেন ? (স্কুলের ইতিহাসে আর্য্যদের ভারত আক্রমন পড়ে বড়ো হয়েছি তাই এখন এই সব ভাবতে বড়ো অদ্ভুত লাগে।

মনে হয় গাজা খেয়ে কারা লিখছেন,সনাতনিরা না হিন্দু বিদ্বেষীরা )। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য যদি আলেকজান্ডারের সমসাময়িক হন, তাহলে মৌর্য্য বংশের আগে নন্দ বংশভারতে (মগধ) রাজত্ব করেছে বহুদিন ধরেই। তা সেই নন্দ বংশইতিহাসে তো এমন টা লেখা থাকবে যে ওদের বাপ ঠাকুরদারা ঘোড়া চরাতে চরাতে ভারতে এসে পড়েছিলো এবং সেই যাযাবর জীবন ছেড়ে ক্ষত্রিয় শৌর্য বীর্য পেয়ে সারা ভারত জয় করে আর্য্যসেজে বসে গিয়েছিলো।
মুশকিল কি জানেন??? মিথ্যা বলা বা লেখা যাদের ব্যাবসা, তারা নানা সময়ে নানা কথা বলে এবং লেখে। একের সংগে অন্যের , আগের সংগে পরের দন্ধ লাগবেই ,আর সব মিত্যা প্রমানিত হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। ঋক বেদেই প্রশংষা করা আছে গান্ধার রাজ্যএর পশম শিল্পের কথা। তাহলে গান্ধার রাজ্য ঋক বেদ লেখার আগেই বর্তমান ছিলো। যযাতির বংশধর, ‘অরুদ্ধপুত্র গান্ধারএই রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

এই বংশের রাজা দ্রুহু, ঋকবেদের সমসাময়িক এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন। তাহলে এই দাঁড়ায় যে, গান্ধার রাজ্য ঋকবেদের থেকেও পুরানো। তক্ষশিলা এবং পুষ্কলাবতী এই দুটি শহরের নামকরন অযোধ্যার রাজপুত্রভরতএর (শ্রীরাম চন্দ্রের ভাই) দুই ছেলে তক্ষক এবং পুষ্কর এর নামে। তক্ষক হিন্দুকুশ পার হয়ে উত্তরাপথ অঞ্চলে (পামীরের উত্তরে) তার রাজ্য স্থাপন করেন, তার নামেই ছিলো ‘তক্ষক খন্ড’ বা বর্তমান “তাসখন্দ’ (তক্ষক খন্ড=তকসক খন্ড=তাসখন্দ) উজবেকিস্তানের রাজধানী।
নুরিস্তান
নুরিস্তান
পুষ্কর বর্তমান রাজস্থানের ‘পুষ্কর হ্রদ/তীর্থ’র আশ পাশ অঞ্চলে তার রাজধানী স্থাপন করেন। তাহলে দাড়ালো এই যে, গান্ধার রাজ্য বহু প্রাচীন এবং সেই রাজ্যের বাসিন্দারা বিষয় বৈভবে, শিল্প  কলায় (গান্ধার কারুকার্যের বিশদ প্রশংষা বহু লেখায় আছে এবং নানা সংগ্রহ শালায় তার নজির রাখা আছে) পুরানো সময়েই অতি উন্নত ছিলো। বিখ্যাত ব্যাকারন কার ‘পানিনি’ তার ‘অষ্টাধ্যায়ী’ পুস্তকে প্রাচীন গান্ধার এবং পরবর্তী সময়ের গান্ধার রাজ্যের কথা বিস্তারিত লিখে গেছেন।

 

এই রাজ্য সিন্ধু নদী বিধৌত ছিলো। তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন সময়ের অতি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। পানিনি এবং কৌটীল্য (চানক্য) দুজনেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যা লাভ করেছিলেন। বর্তমান কাশ্মীর (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর সহ), পাকিস্তানের পেশোয়ার (পুরুষ পুর), রাওয়ালপিন্ডি জেলা এবং আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশ নিয়ে এই বিশাল রাজ্যের বিস্তৃতি ছিলো।

 

মগধের রাজা বিম্বিসার, খ্রীষ্টপুর্ব ষষ্ট শতব্দীতে রাজত্ব
করেছেন। পানিনি তার অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন  যে,গান্ধারের এক রাজা ‘পূক্ষসতী’ তার সমসাময়িক ছিলেন । পৌরানিক প্রশস্ত রাস্তা যা কিনা হিন্দুকুশের ওপরদিয়ে ছিলো, তার নাম পুরানে আছে ‘উত্তরাপথ’ নামে।

সেই রাস্তা গান্ধার রাজ্যের মধ্য দিয়েই গিয়েছিলো। সেই জন্য ব্যাবসা বানিজ্যের এক বিখ্যাত কেন্দ্র হিসাবে গান্ধার অতিবিখ্যাত ছিলো। যারা বলেন,রামায়ন,মহাভারত বা পুরান (পুরানো দিনের ইতিহাস= সনাতনি ইতিহাস) সব মিথ্যা, তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন। সেটা হলো, এতোগুলো মিথ্যা কথা ,বেশ বহু হাজার বছর ধরে কি করে চলে আসছে ???? সনাতনি  হিন্দু দের ইতিহাস তো লেখাই আছে ,পড়ে আছে আমাদের সামনে। একটু পড়ে দেখলে, বিচার করলে ক্ষতি কি????

নাকি, ভারতবর্ষ থেকে হিন্দু নাম  টাই মুছে দেবার চক্রান্তের টাই ধরন যে, শুধু তাদের ধর্ম পরিবর্তন করলেই চলবে  না, ওদের উন্নত সভ্যতার ইতিহাস টাও মুছে দিতে হবে?????? কিন্তু পারবেন কি?????? সনাতনি ইতিহাস সত্যের ইতিহাস। অনেকটা সময় চলে গেছে, হয়তো কিছু অদল বদল ঘটেছে। তাই বলে সব টাই অস্বীকার করে তাকে একেবারে মুছে দেওয়া  যাবে না। মিথ্যার ঝুড়ি দিয়ে সত্যকে চাপা দেওয়া যায় কিছু দিনের জন্য, চিরদিনের জন্য নয়।। 

লেখক-ড: মিনাল কান্তী দেবনাথ, UK