কর্নাটক

কর্নাটক হিজাবের জেদ নাকি জিহাদ.. ধর্মান্ধতার বিষ মেশালো কে? বিতর্কে মালালার প্রবেশ।-সুষুপ্ত পাঠক

কর্নাটক হিজাবের জেদ নাকি জিহাদ.. ধর্মান্ধতার বিষ মেশালো কে? বিতর্কে মালালার প্রবেশ মালালা ইউসুফজাইও টুইট করে কর্ণাটকের মুসলিম ছাত্রীদের সমর্থন করেছেন। তিনি তার এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘কর্নাটকের কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব এবং পড়াশোনার মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

ভারত বিরোধী শক্তি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সামাজিক কর্মীরা কর্ণাটকে হিজাব নিয়ে বিতর্কের ক্ষেত্রেও প্রবেশ করেছে, যারা নিজেদেরকে মুসলমানদের ঠিকাদার বলে। এক্ষেত্রে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাইও টুইট করে কর্ণাটকের মুসলিম ছাত্রীদের সমর্থন করেছেন। তিনি তার এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘কর্নাটকের কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব এবং পড়াশোনার মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

মালালা ভারতের নেতাদের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন

এই টুইটে তিনি আরও লিখেছেন যে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা ভয়ঙ্কর। কম-বেশি পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে নারীকে বস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। এবং মালালা ভারতের নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন করেন যে তারা যেন মুসলিম নারীদের অবহেলা বন্ধ করেন।

মালালা বলেন, শিক্ষার চেয়ে হিজাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ

মালালা ইউসুফজাই সেই একই সামাজিক কর্মী যিনি তালেবানের উগ্র চিন্তাধারার বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় বলেছিলেন যে মুসলিম মহিলাদের জন্য ধর্মের চেয়ে শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর পর ২০১২ সালে তালেবান সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু আজ একই মামলা বলে যে ভারতের ক্ষেত্রে শিক্ষার চেয়ে হিজাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বোরকা নিয়ে এর আগে কী বলেছিলেন মালালা?

2013 সালে, মালালা একটি বই লিখেছেন, নাম, আমি মালালা। এই বইয়ে, তিনি লিখেছেন যে বোরকা পরে হাঁটা একেবারে কাপড়ের শাটলককের মধ্যে বন্দী মহিলার মতো। আর যখন প্রচণ্ড গরম, তখন মনে হয় বোরকা পরা একজন মহিলা চুলার ভেতরে বসে আছেন। এই বইতে, তিনি আরও লিখেছেন যে তিনি তার স্কুলের রয়্যাল ব্লু ইউনিফর্মের সাথে খুব ভালোবাসতেন কিন্তু তালেবানরা তাকে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করেছিল, যা তাকে খুব দুঃখিত করেছিল। কিন্তু আজ সেই মালালা কর্ণাটকের মুসলিম ছাত্রীদের বলছেন যে স্কুলের ইউনিফর্ম না পরা তার অধিকার। এবং তাদের হিজাব পরে পড়াশোনা করতে দেওয়া উচিত।

কর্নাটক হিজাবের জেদ নাকি জিহাদ
কর্নাটক হিজাবের জেদ নাকি জিহাদ

নরওয়ের স্কুল-কলেজে বোরকা নিষিদ্ধ

এছাড়াও একটি বড় প্যারাডক্স রয়েছে যে নরওয়ে, যে নরওয়ে মালালা ইউসুফজাইকে তার কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছিল, একই নরওয়েতে 2018 সালে একটি আইন আনা হয়েছিল, যার অধীনে সমস্ত স্কুল এবং কলেজে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আপ অর্থাৎ নরওয়েতে মুসলিম মেয়েরা বোরকা পরতে পারবে না। সে কারণেই আজ আমরা মালালাকে জিজ্ঞেস করতে চাই কেন তিনি নরওয়েতে বোরকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি করেন না এবং তার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন?

এসব দেশের স্কুলে বোরকা পরা নিষিদ্ধ

তিউনিসিয়া, কসোভো, আজেবাজান এবং মিশরের মতো মুসলিম দেশগুলিতেও স্কুলে বোরকা পরা নিষিদ্ধ। কিন্তু মালালা এসব দেশ নিয়ে টুইট করেন না। বা তিনি আফগানিস্তানের মুসলিম ছাত্রীদের কথা বলেন না যারা হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্যে তাদের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। বার্মিংহামের এজবাস্টন হাই স্কুল এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মালালা কখনো বোরকা বা নেকাব পরেননি। কিন্তু ভারতে মেয়েদের বোরকা বা হিজাব পরার দাবিকে সে তাদের অধিকার বলছে।

কর্নাটক:  ব্যাপারেও পাকিস্তানের প্রবেশ

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি টুইট করেছেন যে ভারতে মুসলিম ছাত্রীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আর বিশ্ববাসীর উচিত এই বিষয়টি বিবেচনা করা। পাকিস্তানের অন্যান্য মন্ত্রীরাও একই ধরনের টুইট করেছেন। আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ টুইটারে তার প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে কর্ণাটকের মুসলিম ছাত্রীদের সমর্থন করেছেন। আজ পাকিস্তানের কাছে আমাদের প্রশ্ন, কেন আফগানিস্তানের মুসলিম নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলে না?

আফগানিস্তানে হিজাবের কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দেয়

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে আফগানিস্তানের ৩৫ শতাংশ মুসলিম মেয়ে তাদের স্কুলে যায়নি কারণ তারা মনে করে হিজাব না পরলে তালেবান সন্ত্রাসীরা তাদের হত্যা করবে। কিন্তু পাকিস্তান কখনোই আফগানিস্তানের কথা বলে না। আফগানিস্তানের মতো পাকিস্তান কখনোই চীন সম্পর্কে কিছু বলে না। চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় 2.5 শতাংশ মুসলমান। অর্থাৎ সেখানে প্রায় চার কোটি মুসলমানের বসবাস। কিন্তু চীনে মুসলমানদের লম্বা দাড়ি রাখার অধিকার নেই বা সেখানে মুসলিম নারীরা বোরকা বা হিজাব পরতে পারবেন না।

চীনে নিষিদ্ধ ২০টি মুসলিম নাম

এছাড়া চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দী কেন্দ্রে ১০ লাখ উইঘুর (উইঘুর) মুসলিমকে আটক করা হয়েছে। চীন মোহাম্মদ, জিহাদ, কোরআন, মক্কা, মদিনা এবং ইমামের মতো 20টি নামও নিষিদ্ধ করেছে। অর্থাৎ সেখানকার কোনো পরিবার যদি তাদের সন্তানের নাম মোহাম্মদ বা জিহাদ রাখতে চায়, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তান কখনোই এর জন্য চীনের ওপর কোনো প্রশ্ন তোলেনি।

মেয়েটি হিজাব পরে না
মেয়েটি হিজাব পরে না

কর্নাটক: প্রিয়াংকা গান্ধি বলেছেন, কে হিজাব পরবে, কে বিকিনি পরবে সেটা তার চয়েজ

মাদ্রাসাতে কোন মেয়ে যদি জিন্স টিশার্ট পরে পড়তে যায় তাকে কি মাদ্রাসা ঢুকতে দিবে? যদি না দেয় তখন আপনি কি বলবেন? বলবেন কোন আক্কেলে মাদ্রাসায় এই ধরণের পোশাক পরে গেছে? কারণ মাদ্রাসার ড্রেসকোড হচ্ছে চোখমুখ মাথা ঢেকে রাখা। এখন যদি কেউ সেখানে গিয়ে জিন্স টি-শার্টের দাবী তোলে কেউ কি তার পক্ষে বলবেন, জিন্স টি-শার্ট পরা মেয়েদের অধিকার? প্রিয়াংকা গান্ধি বলেছেন, কে হিজাব পরবে, কে বিকিনি পরবে সেটা তার চয়েজ। তাহলে মাদ্রাসায় কেন টি-শার্ট শর্ট স্কাট পরে পড়তে যাওয়া যাবে না? 

ভারতের বোরখা পরা নিষিদ্ধ না

ভারতের কোন রাজ্যেই মুসলিম নারীদের হিজাব বোরখা পরা নিষিদ্ধ করেনি। কিন্তু কুরাজনীতিতে সব ঢেকে গেছে। কুলিবারাল সব ঢেকে দিয়েছে। বলা হয়েছে স্কুল কলেজে ড্রেসকোডের বাইরে কেউ অতিরিক্ত পোশাক হিসেবে হিজাব বোরখা পরতে পারবে না। কেউ কি পুলিশে চাকরি করে দাবী করতে পারেন তিনি পুলিশের পোশাক পরবেন না? সবচেয়ে বড় কথা শ্রেণী কক্ষে সম্প্রদায় ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলকে একই মর্যাদায় আনার জন্যই ইউনিফর্ম পরানো হয়। শুধুমাত্র মুসলিমদের কাছ থেকে এগুলোর বিরোধীতা ছাড়া আর কোন ধর্ম সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আসে না।

কর্নাটক: মুসলিম আইডেন্টি প্রতিষ্ঠা 

স্কুল কলেজের বাইরে আপনি হিজাব পরেন বোরখা পরেন কে মানা করছে? যে মেয়েটি বোরখা পরে কর্নাটকে ‘আল্লাহ আকবর’ বলে ভাইরাল হয়েছে তার ছবিগুলিতে তার মুখ খোলা, তার চুল প্রদর্শিত- তাকে দেখে কি হিন্দু মুসলমান বলে আলাদা করা যাচ্ছে? তাহলে শুধুমাত্র কলেজে নিজেকে বোরখা পরিয়ে মুসলিম আইডেন্টি প্রতিষ্ঠা করতে কেন গেলো? পুরো বিষয়টিতে আছে ছক কষা হিসেব। প্রিয়াংকা গান্ধি দুম করে বলে দিলেন, হিজাব পরা মুসলিম মেয়েদের চয়েজ এখানে কেউ জোরখাটাতে পারবে না। অথচ কোথাও এরকম কোন নির্দেশনা কি দেয়া হয়েছে? হয়নি। ভারতে কি স্বাদে বাম-কংগ্রেসের ভোট কমে হিন্দুত্ববাদীদের ভোট বেড়েছে?

ফেইসবুকের কবি, মানবতাবাদী, ভামাতি, সেমি জামাতি সকলেই বোরখা পরা এই মেয়েটির প্রতিবাদকে বলছেন জুলুমের বিরুদ্ধে মজলুমের প্রতিবাদ! স্কুল ড্রেস মানব না, আইন মানব না, এর নাম মজলুম? খুবই আজব মডারেট মুমিন আপনি। ইরানে কোন নারী বিদেশমন্ত্রী সফরে গেলেও তাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে হলে হিজাব মাথায় দিয়ে বসতে হয়। ভারতের সুষমা স্বরাজ থেকে জর্মানির চ্যান্সেলর সকলেই মাথায় রুমাল বেধে বসতে হয়েছিলো। কোথায় গেলো তখন নারীর পোশাকের স্বাধীনতা?

কর্নাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পড়ার অধিকার এর পিছনে অন্য কিছু 
কর্নাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পড়ার অধিকার এর পিছনে অন্য কিছু 

কর্নাটক: হিজাব বিরোধী আন্দোলন

ফেইসবুকের কোন কবি, মানবতাবাদী কি ইরানী সৌদিদের এই রকম বাধ্যতামূলক ড্রেসকোডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন? কিছুদিন আগে বাংলাদেশের মৌলবীবাজারে একটি মেয়ে জিন্স পরায়, বিদেশে পরতে যাওয়ায় যখন মসজিদ কমিটি সেই পরিবারটিকে একঘরে করে রেখেছিলো তখন মজলুম দরদীদের কোন এক্টিভিটি কিন্তু দেখা যায়নি! যেমনটি কখনোই দেখা যায় না ইরানী হিজাব বিরোধী আন্দোলনের সময়। তিন তালাক বিলের পক্ষেও এরা স্বাগত জানায়নি। যখনই ফ্রান্সের স্কুলে বোরখা পরে বিতর্ক শুরু করে কোন মুসলিম মেয়ে তখনই এরা ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা তোলে।

মালালা কানাডাতে হিজাব পরে চাকরিতে গেলে চাকরি হারালে কানাডার বিরুদ্ধে বিদ্বেষের অভিযোগ না তুলে এখন ভারতের স্কুল কলেজে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে সওয়াল করছেন। মুসলিমদের তো ভারতে বিকল্প ব্যবস্থা আছেই। তারা বলছে লেখাপড়ার চাইতেও তাদের কাছে পর্দা সবার আগে। তাহলে তারা মাদ্রাসাতে কেন পড়তে যায় না? সেখানকার ড্রেসকোড তো বোরখা!…

কর্নাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পড়ার অধিকার এর পিছনে অন্য কিছু 

 

মাত্র দুইটি পয়েন্ট এর ভিতরে উত্তর আছে। 
১। যখন ছেলেরা জয় শ্রীরাম বলছিল তখন কিন্তু ওই মেয়ে বাইরে থেকে এসে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিতে থাকে। ছেলেরা কিন্তু ঐ মেয়ে সামনে গিয়ে জয় শ্রীরাম বলে নাই। বরং মেয়েটি ঐ ছেলেদের সামনে আসে। ভিডিওত দেখে পরিষ্কার, ভিডিও করার জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি ছিল। মেয়েটির বডি লঙ্গুয়েজ বলছে সে পূর্ব  থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।
২। মেয়েটি যে ছবি নেটে ভাইরাল হয়েছে তা, পরিষ্কার করছে মেয়েটি হিজাব পরে না, এখানে তার ফেজবুক প্রফাইলে গেলে বুঝতে পাবেন।  তার এই হিজাব পরা ও আল্লাহু আকবর’ বলার পিছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।

দেশকে অশান্ত করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।  পিজা খেতে, ঘুরতে হিজাব লাগে না? শুধু পড়তে হিজাব লাগে? কি বলবেন?

লেখা: সুষুপ্ত পাঠক Susupto Pathok ফটো: ©ইন্টারনেট

আমাদের পাশে থাকতে একটি লাইক দিয়ে রাখুন।-ধন্যবাদ

আর পড়ুন….

কর্নাটক কর্নাটক কর্নাটক কর্নাটক কর্নাটক কর্নাটক কর্নাটক কর্নাটক