ওম

ওঁ বা ওম কে, কেন শব্দের জননী বলা হয়?-দুরর্ম

ওঁ বা ওম কে, কেন শব্দের জননী বলা হয়? আজ আমি এমন একটি ‘শব্দ’ নিয়ে আলোচনা করবো যা আমরা প্রতিনিয়ত উচ্চারণ করি। কিন্তু মানে জানি না। আমি বাংলায় ব্যাখ্যা করছি বাঙ্গালী বন্ধুদের কথা ভেবে। 

কাহিনীর শুরু এই ভাবে, এক ব্রাহ্মণ সন্যাসী একটি পাথর বিক্রি করতে যায় জোহুরীর কাছে। জোহুরী পাথরটি দেখেন। অবাক হয়ে যান। সন্যাসীকে জিজ্ঞাসা করেন এই মহামূল্যবান পাথর কোথায় পেলেন।
সন্যাসী বলেন ওনার গুরুজী দিয়েছেন ওনাকে। জোহুরী বলেন এ এক অমূল্য পাথর। এর মূল্য ওতো দিতেই পারবেন না। আচ্ছা আচ্ছা শহরের জোহুরীরাও দিতে পারবে না।
ক্ষুব্ধ সন্যাসী ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসেন। গুরুদেবকে পাথরটি ফিরত দেন। জিজ্ঞাসা করেন — ” এই পাথরটি মহামূল্যবান জেনেও আপনি আমাকে কেন দিলেন? “

গুরুদেব মুচকি হাসলেন। বললেন এই পাথরের মত অনেক জিনিস আছে আমরা মূল্য জানি না। অথচ সেই জিনিসগুলি আমাদের চেনা জানা পরিশরের মধ্যে। এই রকমই একটা জিনিস “ওম”। কি আমরা এর মানে জানি? মূল্য জানি এর? অতি অবশ্যই হিন্দুদের জিজ্ঞাসা করছি। আগে দেখুন।

ঋষি প্রজাপতি সর্বজ্ঞানে গুণান্বিত বলে প্রতিষ্ঠিত। যাঁর কাছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আছে। একদিন দেবতা কার্ত্তিক ঋষি প্রজাপতির আসেন। “ওম” শব্দের অর্থ জানতে চান। হতচকিত ঋষিবর। কোন উত্তর ছিল না। ক্রোধান্বিত হন দেব সেনাপতি। বন্দী করে নেন ঋষিবরকে।

শুরু হল চরম অঘটন। স্বর্গ – মর্ত্য – পাতাল রসাতলে জাবার যোগার। ফুল খেলা বন্ধ করে দিল। গান আর গান না পাখী। ফল দেয় না গাছ।

বিভিন্ন ভাষায় ওম
বিভিন্ন ভাষায় ওম

সৃষ্টি বিলুপ্ত হওয়ার জোগাড়। সমস্ত দেব দেবী সংকট মোচনকারী শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন। অবশেষে আশুতোষ শিব অবতীর্ণ হলেন ময়দানে। পুত্র কার্ত্তিককে জিজ্ঞাসা করেন ঋষিবরকে কেন বন্দী করেছে। দেব সেনাপতি খুব তাৎপর্যপূর্ণ উত্তর দিলেন। —

“যাঁর কাছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর থাকার কথা তিনিই “ওম” শব্দের মানে জানেন না। এবার পুত্র সরাসরি পিতাকেই জিজ্ঞাসা করেন — “কি আপনি এর মানে জানেন”?

মুচকি  হাসলেন সর্ব ভুতেষু । বললেন আমি তোমার কাছে জানতে চাই পুত্র। দেব সেনাপতিও হারবার পাত্র নয়। —- ” আমি বলতে পারি, কিন্তু আপনাকে আমার শিষ্যত্ব নিতে হবে “। হাসলেন দেবাদিদেব। বললেন “মানলাম তোমাকে গুরু”।

দারুণ ইন্টারেস্টিং না।  পুত্র গুরু, আর পিতা হয়েছেন পরম শিষ্য। “ওম” শব্দের মধ্যে তিনটি অক্ষর আছে।
‘অ’ – ‘ও’ – ‘ম’।
অ+ও = ও
ও+ম = ওম।
যে কোন ব্যক্তি যে কোন ভাষারই হোক না মুখ খুললেই ‘অ’ বেড়িয়ে আসে। ‘অ’ এর সঙ্গে ‘ও’ জুড়ে ‘ও’। ‘ও’ এর সাথে ‘ম’ জুড়লে “ওম” পাই।
মুখ খুললেই ‘অ’ এবং বন্ধ করলে ‘ম’। আর মাঝে ‘ও’। এইজন্যই সব ভাষার মধ্যে “ওম” বিচরণ করছে। “ওম”  ঈশ্বরের প্রতীক। মান্ডূ উপনিষদ হিসাবে —
‘অ’ — অভিব্যক্তি,
‘ও’ — স্বপ্নাবস্হার প্রকাশ,
‘ম’ — প্রাপ্তি।
মানূ “ওম” মানে সমস্ত গুণের প্রকাশ। ঈশ্বরের অদ্ভুত রূপ। “ওম” মানে সত্যম – শিবম – সুন্দরম। “ওম” মানে ঈশ্বরের আরখধোনা।
এবার বলুন যে কোন মন্ত্রের আগে “ওম” কেন প্রয়োগ হয়? মানে — “ওম নমঃ শিবায়”, ” ওম বাসুদেবায়”, “ওম নমঃ নারায়ন”, “ওম ভগবতে” ইত্যাদি।
কোন কঠিন কাজ শুরু করার আগে “ওম” দিয়ে শুরু করা হয়। দৈনিক জীবনে কথোপকথনে “ওম” ব্যবহার করা হয়। যেমন  “হরি ওম”।
এবার বলুন ঋষি প্রজাপতির কি হল? কি হবে? সদা শিব যেখানে অবতীর্ণ হয়েছেন সমাধান তো অবশ্যম্ভাবী। প্রজাপতি মুক্ত হলেন।
ভগবান ও মনুষ্যকে “ওম” শব্দের অর্থ জ্ঞাত করার জন্যই মহাদেবের এই লীলা। মুচকে হাসলেন পালন কর্তা বিষ্ণুও।
“ওম”
—- ” গণেশায় নমঃ”
—– “নমঃ শিবায়ঃ “
—– ” নমঃ নারায়ন “
—- ” নমঃ বাসুদেবায়”
—- ” দেবী দুর্গায় নমঃ”
—- ” কালিকায় নমঃ”
—- “কার্তিকেয় নমঃ”।
” ওম শান্তি, ওম শান্তি, ওম শান্তি। “
ওমকারের গৌরব বৈদিক কবিতার অনুরূপ ধর্মতত্ত্ব, পুরাণ এবং আগামা সাহিত্যে সর্বত্র পাওয়া যায়। কইভাবে, ওমকারের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায়ের সর্বত্র দেখা যায়।

ওম এর গুরুত্ব 

ওম তিনটি শব্দে দিয়ে গঠিত যা ত্রিদেব ব্রহ্মা , বিষ্ণু এবং মহেশ প্রতিকি এবং ত্রিলোক ভুরভুবা: স্ব: ভুলোক ভূয়া: লোকা এবং স্বর্গের লোকা। 

 

উপকারিতা 

পদ্মাসনে বসে এটি জপ করা মনকে শান্তি এবং একাগ্রতা দেয়, বিজ্ঞানীরা এবং জ্যোতিষীরা বলেছেন যে দাঁত, নাক, জিহ্বার সমস্ত কিছুই ওম এবং একাক্ষরী মন্ত্র পাঠ করতে ব্যবহৃত হয়  যা হরমোনীয় ক্ষরণকে হ্রাস করে এটি ঘটে এবং গ্রন্থিযুক্ত ক্ষরণ হ্রাস করার মাধ্যমে, এই শব্দটি অনেক রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করে এবং দেহের সাতটি চক্রকে জাগ্রত করে (কুণ্ডলিনী)। সুত্র

উচ্চারণের পদ্ধতি: খুব সকালে উঠে ওম শব্দটি উচ্চারণ করুন। পদ্মাসন, অর্ধপদমাসন, সুখসানা, বজ্রসনে বসে উচ্চারণ করা যায়। এটি সময় অনুসারে 5, 7, 10, 21 বার উচ্চারণ করা যায়। ॐ জপ মালা দিয়েও করা যায়।
এর সুবিধাগুলি: এটি শরীর এবং মনকে একাগ্র করতে সহায়তা করবে। হৃদস্পন্দন এবং প্রচলন স্থির করে। এর ফলে মানসিক অসুস্থতা দূর হয়। কাজের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর উচ্চারণ এবং শ্রোতা উভয়ই উপকৃত হয়। এর উচ্চারণে বিশুদ্ধতা যত্ন নেওয়া হয়।
 
আরো পড়ুন