“দেশ ভাগ এবং সেই মহাপাপের ফল ভোগী”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে অর্জুনের প্রশ্নের উত্তরে মহামতি ভীষ্ম বলেছিলেন, আমি যদি দেশটাকে দুই ভাগ করায় সম্মতি না দিতাম, প্রতিবাদ করতাম, তাহলে এই মহা সংগ্রাম হতো না, এতো মানুষ মারা যেতো না, এতো নারী বিধবা হতো না, সমাজে বিশৃংখলার সৃষ্টি হতো না।। আমার সেই মহাপাপের শাস্তি হিসাবে আমাকে এই শরশ্বজ্যায় শুয়ে থাকতে হবে ৬ মাস।
সত্যি ভাবলেও অবাক লাগে যে কুরুক্ষত্রের যুদ্ধে যে ১৮ অক্ষৌইনী সৈন্য (৫২ লক্ষ) মারা গেলো আর সারা গায়ে তীর বিদ্ধ অবস্থায় ভীষ্মকে যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়েছিলো সেটা কি নিদারুন অবস্থা। মহাভারতের স্ত্রী পর্বে লক্ষ লক্ষ বিধবা নারীর ক্রন্দন অসহনীয়, মর্মান্তিক। ভীষ্ম জ্ঞানী ছিলেন তাই নিজের কৃত পাপ স্বীকার করেছিলেন, দ্বায় নিজের ওপরে নিয়ে নিয়েছিলেন।
অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাও যে একটা মহাপাপ, তাতো হিন্দুদের জানা উচিত।
ভারতের এক তৃতীয়াংশ এক বিদেশী ঔপনিবেশিক শক্তির উত্তর সুরীদের দিয়ে “শান্তি” কিনতে চেয়েছিলেন দেশ ভাগের মুল হোতারা। কিন্তু এরা কোনোদিন নিজেদের “মহাপাপ” স্বীকার করেনি, কোনো দ্বায় ভাগ নেয়নি। বরং বুক চাপড়ে বলে চলেছে “আমরাই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছি”। দেশবাসীও তাদের মাথায় তুলে রেখেছে,অর্থ্যাত দেশ ভাগের সব পাপ দেশ বাসী ভাগ করে নিয়েছে। আর সেই পাপের ভাগী হওয়ার ফল দেশবাসী এই ৭০ বছর ধরে ভুগছে।
হিন্দুরা কোনোদিন বোঝার চেষ্টা করে নি যে এক খন্ড মাংস দিয়ে হিংসাশ্রয়ী প্রানীর (কুমীর হাংগর বাঘ ভালুক ইত্যাদি) ক্ষিদে মেটানো যায় না। তারা পুরোটাই গ্রাস করতে চায় ,আজ তারা সেটাই করছে, করে চলেছে।
ভারতের হিন্দুদের ওপরে যে অন্যায় করা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো জাতিকে সেই অন্যায়ের সামিল হতে হয়নি।
“হিন্দুরা রা আজ নিজ দেশে পরবাসী । দেশের ৮৪% থেকে কমে গিয়ে ৭৫% হয়ে যাওয়া হিন্দুরা আজ দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক,বিশেষ করে পশ্চিম বাংলায়। হিন্দুরা আজ ভীত সন্ত্রস্থ,কি জানি কখোন কি হয়,মনে সারাক্ষন এই উদ্বিগ্নতা।।
১৯৪৭ সাল থেকে ছিন্নমুল হিন্দুরা পুর্ব পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়ে চলেছে। আজো বিনা কারনে তাদের ওপরে যে অত্যচার হচ্ছে তা কোনো সভ্য দেশে হয় না। কয়েক লক্ষ “রোহিংগা” দের নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ, রাষ্ট্র সঙ্ঘ চিন্তিত। খুব ভালো।
কিন্তু আজ ২৫ বছর ধরে যে কয়েক লক্ষ “কাশ্মীরী হিন্দু” উদবাস্তু হয়ে দিল্লীর রাস্তায় পড়ে আছে, তাদের হয়ে কোনো বিদেশী মাতব্বর বা “মানবতাবাদী’ দের কোনো প্রচেষ্টা দেখিনি।
পুর্ব পাকিস্তান থেকে যে ৩ কোটি ২০ লক্ষ হিন্দু পশ্চিম বাংলায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছে,তাদের বেশীর ভাগ সম্পুর্ন নিজ চেষ্টায় ভারতে কিছু করে খাচ্ছে। কিন্তু ১৯৭৬ সালের পর যারা এসেছে তারা এখনো ভারতের নাগরিকত্ব পায়নি,হয়তো পাবেও না। অথচ ওই দেশ থেকে যে অনুপ্রবেশকারী এসেছে এবং প্রতিদিন আসছে তারা দিব্যি নাগরিকত্ব এবং অন্য সব সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। এরাই এখানে সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত, মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে হুমিকি দিচ্ছে। আর আমরা এর প্রতিবাদ করছি না।। এটা কি ? পাপ না মহা পাপ আমরা করে চলেছি।
আর এই সবের জন্য, সমাজ উচ্ছন্নে দেবার জন্য দ্বায়ী কে বা কারা ???? কেনো আমরা সেই “মহাপাপী” দের পুরষ্কৃত করবো, প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে, মুখ্য মন্ত্রী বানিয়ে, দলনায়ক বানিয়ে, ভারতরত্ন বলে আখ্যায়িত করে, জাতির পিতা বলে পুজো করে। পাপীদের পুজো করলেও ততোধিক পাপ হয়। সেই পাপের ফল ও ভোগ করতে হয়।
“ মনু সমহিতায় পরিষ্কার লেখা আছে, রাজা যদি অপরাধীকে শাস্তি না দেন (শাসন না করেন) তবে তিনি নিজে অপরাধী হন, পাপী হন।“
“অশাসিত্বা তু তং রাজা স্তেনস্যাপ্নোতি কিল্বিষম”।। (মনু সমহিতা, ৮ম অধ্যায়,৩১৬ তম শ্লোক)
গনতন্ত্রে সাধারন মানুষই রাজা। তারাই ভোট দিয়ে প্রশাসক/প্রতিনিধ নির্বাচিত করে,। সেধে সেধে সমাজ বিরোধী দুষ্কৃতিকারীদের নির্বাচিত করলে তাদের পুরষ্কৃত করা হয়, তাতে পাপ হয়। যারা প্রকৃত হিন্দু তাদের এটা করা উচিত নয়। “অহিন্দুরা” করতে পারে।