বিবিসি বাংলায় একটা নিউজ ছাপা হয়েছে যেখানে লেখা হয়েছে ইজরাইলের নারী প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতকে অস্ত্র দিয়ে গোপনে সহায়তা করেছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারতের সঙ্গে ইজরাইলের কোন রকম কুটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পক ছিলো। অপরদিকে ইজরাইলের প্রধান বন্ধু আমেরিকা তখন পাকিস্তানের সাহায্যকর্তার ভূমিকায়। এই অবস্থায় গোল্ডা মেয়ার ভারতকে অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যুদ্ধে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্ব রাজনীতির লাভ-ক্ষতির হিসাব, ভালো-মন্দ বাদ দিয়ে যে কোন বাংলাদেশীর তাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা দেশ ও ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ করবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। অস্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে যারাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে তারাই এদেশের সাধারণ মানুষদের কাছে ষড়যন্ত্রকারী, ইসলামের দুশমন, মুসলমানের দুষমন হিসেবে ঘৃণার পাত্র হয়েছে। এক্ষেত্রে একদম প্রথম নামটি ভারত। ইজরাইলের সহায়তার কথাটি বহুদিন গোপন ছিলো। সাংবাদিক গ্যারি জে বাস দিল্লির নেহুরু লাইব্রেরিতে ‘হকসার পেপার্স’ নামের নথি থেকে গোল্ডা মেয়ার ও ইন্দিরা গান্ধির সম্পর্কটি প্রমাণিত হয়। যেখানে বাংলাদেশের যুদ্ধে ভারতকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তার কথাটি যুক্ত রয়েছে। গোল্ডা মেয়ার সে হিসেবে প্রতিটি বাংলাদেশীদের কাছে বন্ধু হওয়ার কথা? অন্তত অন্য আর দশটা জাতির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে মাথায় রাখলে এটা মানতেই হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যে করি পরিমাণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিমুখ ছিলো সেটি ৭১-৭২ সালেই স্পষ্ট হয়েছে। আমাদের জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা এই সত্যকে ৭৫-এর পটপরিবর্তনকে দায়ী করে সত্যকে সত্য রূপে প্রকাশিত করেননি। আজকে বিপুল পরিমাণ মানুষ যে পাকিস্তানীদের সমর্থক, তাদের জঘন্ন গণহত্যা, ধর্ষণের বিষয়ে তারা উদাসিন কিন্তু ভারতের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা একটি লাশকে নিয়ে তারা ‘ফালানী দিবস’ পালন করে ঘটা করে! কেন সেটি অতি সাধারণ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের প্রতিক্রিয়া থেকেই বুঝতে পারবেন। নিচে বিবিসি বাংলার ফেইসবুক পেইজে এই সংক্রান্ত নিউজের কমেন্ট বক্সে প্রায় সাড়ে তিনশ কমেন্টের বেশির ভাগই পাকিস্তান ভাঙ্গার ক্ষোভে ফুসছে জনগণ। সেথান থেকে মাত্র কয়েকটি কমেন্ট সেম্পল হিসেবে এখানে দেয়া হলো। দেখুন একটা প্রজন্ম কেমন করে তাদের মুক্তিযুদ্ধকে মূল্যায়ন করে-
Nafiz Abdullah Nahiyan নামের একজন কমেন্ট করেন, ‘ আজ যদি যুক্ত পাকিস্তান থাকতো, তবে আমরা হতাম পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী।আমাদের বোন ফেলানীদের লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকতো না। বাঙ্গালী মুসলিমরাই ছিলো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ,সে হিসেবে ক্ষমতা পাওয়ার কথা তাদেরই।কিন্তু লোভী ভুট্টো,আর ভন্ড ইয়াহিয়ার কারণে পাকিস্তান ভেঙে গেলো।আমরা একটি ক্ষুদ্র অংশ পেলাম বটে,তবে চূড়ান্তভাবে ইন্ডিয়ার গোলামে পরিণত হলাম’।
HM Dilwar Hussain নামের একজন লিখেন, ‘ভারত আমাদের জন্মগত শত্রু আর পাকিস্তান আমাদের ভাই। দুই ভাই ঝগড়া করে আলাদা সংসার করতেই পারে। এতে দুষের কিছু নেই। তবে পাকিস্তান ভাইটি কাবিলের মতো আচরণ করেছিল, আর ইন্ডিয়া শয়তানের মতো। তবে আমরা বর্তমান প্রজন্ম শয়তান ও কাবিলের প্রতিনিধিত্ব থেকে মুক্তি চেয়ে নতুন সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়তে চাই’।
Imran Hasan লিখেন, ‘থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে… পাকিস্তান আর বাংলাদেশ কে আলাদা করাই ছিলো ভারত ইসরাঈলের মূল লক্ষ্য। পাকিস্তানের কিছু গাদ্দার এ প্রজেক্ট কে নিরহ বাংগালির উপর নির্যাতনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে’।
MD Erfan লিখেন, ‘১৯৭১ সালে ইজরাইল ইন্ডিয়াকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করাটা অবাকের কিছু নয় ৷ ভারত বর্ষ যখন বৃটিশরা ঘায়েল করেছিল তখন বিশ্ব নন্দিত আলেম এবং বৃটিশ আনদোলনের অন্যতম সিপাসালার মুফতি মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ: বলেন সাগরের গভীর তলে যদি দুটা মাছ জগড়া তরে সেখানেও ইহুদিদের হাত থাকবে৷ এবং বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা: বলেছিলেন পৃথীবিতে মুসলমান ছাড়া সব ধর্মই এক ধর্ম ৷ যেমনটি বর্তমান পরিলক্ষিত হয় ফিলিস্তিন মুসলমান থাকে মারতেছে খৃষ্টান ইহুদি সহ অন্যরা ৷ কাশ্মীর কে মারতেছে রেন্ডিয়ান জারজরা ৷ রাখাইন কে মারতেছে গৌতম বোদ্বের শিষ্যরা’।
ওছমান গনি ফরহাদ লিখেন, ‘তাহলে পাকিস্তান ভাঙ্গার পিছনে ইহুদী মুশরিক জোট একসাথে কাজ করেছে! বেকুবচোদা মুসলিমদের হুঁশ কখন ফিরবে’?
Nayem U Hasan লিখেছেন, ‘ ভারত তো সেই হারামীর বাচ্চা। যারা পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজদের হাত-পা ধরে কিছুটা সুযোগ গ্রহন করেছিলো, দেশ প্রেমিক বাঙ্গালী উপমহ্দেশের সাথে বেঈমানি করে। আর ইসরাঈল রাষ্ট্রটাইতো একটা অবৈধ জারজ রাষ্ট্র। তাই দুটির কাজে তো নস্টামি থাকবেই। আজকের বাংলাদেশেও যত নস্টামি, অপরাধ হচ্ছে, তার অর্ধেক ভারত আর অর্ধেক ইসরাঈলের। কুত্তা ও শুয়োরের বাচ্চারা এদেশটার বড় ক্ষতির মিশন নিয়ে নেমেছে’।
…তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের পাকিস্তান প্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোক লোটাস কামালের আফ্রিদী প্রেম, ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাংলাদেশী সেলিব্রেটিদের চরম ঘৃণামূলক কথাবার্তা বেরিয়ে আসাটা নিছক একটি ম্যাচের বিতর্ক ঘিরে নয়। মনের ভেতরের সাপ সুযোগ পেলেই হিস হিস করে উঠবেই। সেই শব্দ কেউ আড়াল করতে পারবে না!
Susupto Pathok