মুসলিম বিশ্বের অমুসলিম ও জাতিগত নিপীড়নের কোন রেকর্ড তাই থাকে না!
লিখেছেন: Susupto Pathok
মিয়ানমার, ভারত, ইজরাইলকে বাংলাদেশে এসে শিখে যাওয়া উচিত কেমন করে সংখ্যালঘু নির্যাতন করতে হয়! কেমন করে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলা যাবে অথচ বিশ্ববাসীর চোখে কিছুই পড়বে না- এরকম কোর্স বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের কাছে শেখা উচিত তাদের! ওআইসি সম্মেলনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে মুসলিম দেশগুলো সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশে গত চারমাসে ২৫০টি বড় ধরণের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে যার বেশির ভাগই মিডিয়াতে প্রচার হয়নি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুরো বছর জুড়ে ৮০৬টি ঘটনা ঘটলেও এই বছর চার মাসেই ২৫০টি ঘটে গেছে! এরমধ্যে ‘এই চার মাসে হত্যার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ২৩ জন৷ হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০ জন৷ হত্যার হুমকি পেয়েছেন ১৭ জন এবং শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৮৮ জন৷ ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫ জন৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে ৩১টি, বাড়ি ঘর ও জমি জমা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন ১৬২ জন, দেশত্যাগের হুমকি পেয়েছেন ১৭ জন৷ ১০৪ জন ধর্মান্তরিত হয়েছেন, ২৯টি মন্দির ও মঠে হামলা হয়েছে, ৪৩টি মুর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি৷ এর বাইরে অপহরণ, ধর্মস্থান দখল, মূর্তি চুরির মতো ঘটনারও অভিযোগ করা হয়েছে৷ (সূত্র: ডয়েচ ভেলে)।
সিরাগঞ্জ-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন ৩৫ শতক হিন্দু সম্পত্তি সাক্ষর জাল করে দখল করেছে। সাংবাদিক প্রবীর শিকদার যিনি নিজেকে প্রবলভাবে আওয়ামী লীগার ও প্রধানমন্ত্রীকে বোন সম্বন্ধ করে থাকেন, তার উপর হামলা নির্যাতন নিপীড়ন করে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর। প্রবীর শিকদার সংখ্যালঘুদের জমিজমা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করার পর তার উপর রাষ্ট্র স্বয়ং নিপীড়ন শুরু করে দেয়। আমরা সব সময় ইজরাইলের ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে তাদের উচ্ছেদ করার কথা শুনি। তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের জন্য সোচ্চার হই। কিন্তু বিশ্ববাসী কি জানে বাংলাদেশে কত শতাংশ হিন্দু মালিকানাধীন ভূমি থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ করা হয়েছে? ইজরাইলীদের অবৈধ বসতির কথা বিশ্ববাসী জানে কিন্তু বাংলাদেশের আদিবাসী পাহাড়ীদের নিজ ভূমি থেকে বের করে দিয়ে স্যাটেলার বাঙালী মুসলিমদের অনুপ্রবেশ করার কথা কেউ জানে না! রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতনের কথা হলিউড বলিউডের তারকাও জানে কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা কেউ জানে না! বাংলাদেশের লেখক-বুদ্ধিজীবীরা কেউ সংখ্যালঘু নির্যাতন, আদিবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে কিছু লেখে না। যেহেতু তারা নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেয় তাই তাদের নজর রোহিঙ্গা, কাস্মির, ফিলিস্তিন নিয়েই পড়ে থাকে। ভারতে ‘হিন্দুত্ববাদের’ সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের চান্দি গরম হয়ে উঠে। ইজরাইলী দখলদারীত্বে তাদের বুক ফেটে যায়। আশ্চর্যজনক যে সারা পৃথিবীতে সংখ্যালঘু নির্যাতনগুলোর জন্য তারা ধর্মীয় মৌলবাদী মানসিকতাকে দায়ী করলেও বাংলাদেশে ঘটা ঘটনাগুলোর জন্য নাকি রাজনৈতিক অথনৈতিক কারণ থেকে শুরু করে হেগেল দেরিদার চমস্কি মার্ক্সের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের চশমা দিয়ে দেখতে হবে। তাহলেই নাকি আমরা দেখতে পাবো এসবের জন্য ফ্যাসিবাদী ভারত ইজরাইল আমেরিকা ইউরোপ ইহুদীনাসারারা দায়ী!
মুসলিম বিশ্বের অমুসলিম ও জাতিগত নিপীড়নের কোন রেকর্ড তাই থাকে না!