বর্ষায় প্রাচীনকালে ভারতের নগরগুলিতে সম্ভবত জল জমত না, নইলে সংস্কৃত বা পালি সাহিত্যে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হত। জল বেরিয়ে যাওয়ার অনেক জায়গা ছিল, যা সাধারণ বুদ্ধিতে বোঝা যায়। বন্যা হলে আলাদা ব্যাপার, তখন ভোগান্তি অবশ্যই, কিন্তু কিছুক্ষণের বৃষ্টিতে এই যে জল থই থই রাস্তা হয়, সেটা একান্তুই আধুনিক, পশ্চিমী, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফল।
দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর ইত্যাদি লেখার সময় রবীন্দ্রনাথের মনে কি বর্ষাকালে হাবুডুবু মধ্য কলকাতা ঘুরঘুর করছিল? কিন্তু আমার মতে অরণ্যে ফেরার দরকার নেই, প্রাচীন ভারতের নগর পরিকল্পনায়, হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়োর সময় থেকেই, নিকাশী ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ছিল (অবশ্য কেউ কেউ বলতে পারেন যে নগরায়ণের চাপ এতটা ছিল না, কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়, প্রাচীন যুগেও মহানগরী ছিল, তুলনায় আয়তনে ছোট হত হয়ত, কিন্তু জনঘনত্ব পাল্লা দেওয়ার মত)।
ভারতে প্রাচীনকালে সবাই গ্রাম্য ছিলেন, সবাই খদ্দর পড়ে চরকা কাটতেন, আর অরণ্যের মধ্যে আশ্রম করে গরুর দুধ দুইতেন, এ একটা গান্ধীবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী কুসংস্কার।
প্রাচীন নগর সভ্যতা ছিল আমাদের দেশে, বস্তুনিষ্ঠ সভ্যতা, ভাববাদী নয়, বস্তুনিষ্ঠ চিন্তাধারার ওপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা নগর সভ্যতা ছিল এই দেশে। সেটা হারিয়ে গেল, বড় ট্র্যাজেডি। কাদের জন্য হারালো? অনেকের জন্য।
ইন্দ্র থেকে বখতিয়ার খিলজি, পুরন্দর অনেকেকেই পাওয়া যাবে।
যাকগে, সে কথা থাক। প্রাচীন ভারতের নাগরিক বর্ষার কথা ভাবছি এখন। একটা টাইম মেশিন থাকলে কি চমৎকারই না হত।