দুবছর আগের ঘটনা স্মরন করিয়ে দিতে সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তের লেখা থেকে এই পোষ্ট ….
ভেবেছিলাম লিখব না । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে দু চার কথা না লিখলেই নয় । আমি ব্যাক্তিগত জীবনে রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত শিষ্য । মিশনের কোনো সন্যাসীকে দেখে আমি দীক্ষাগ্রহণ করিনি । সারদা মা-র প্রতি অবিমিশ্র শ্রদ্ধা এবং ভক্তির কারণেই মিশনে আমার দীক্ষাগ্রহণ । আমার দীক্ষাগুরু প্রয়াত স্বামী আত্মস্থানন্দজি মহারাজ ।
তাঁর প্রতিও আমার শ্রদ্ধা অসীম ।
স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত একশো বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটির কোনো রকম বিচ্যুতি আমাকে কষ্ট দেয়, ক্ষুব্ধ করে । গত কয়েকবছর ধরে রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যকলাপে এই ক্ষোভ এই দুঃখটা বাড়ছিলই । গতকাল স্বামীজির চিকাগো ভাষণের স্মরণ অনুষ্ঠানে যা হল তারপর এই ক্ষোভটা প্রকাশ করা উচিত বলেই আমি মনে করি । রামকৃষ্ণ মিশন কখনো কোনো রাজনীতিতে জড়াবে না — স্বামী বিবেকানন্দের এটাই নির্দেশ ছিল । এই নির্দেশ মেনে রামকৃষ্ণ মিশন কখনো জড়ায়নি রাজনীতিতে ।
কিন্তু স্বামী সুহিতানন্দ স্বামী সুবীরানন্দদের রামকৃষ্ণ মিশন স্বামীজির সেই নির্দেশ থেকে ক্রমেই দূরে সরে এসেছে । বিচ্যুত হয়েছে । গতকাল বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদ্যন্ত একটি রাজনৈতিক ভাষণ দিয়েছেন । তাকে আমি দোষ দিই না । তার মতো একজন মধ্যমেধার রাজনীতিকের নত্বষত্ব জ্ঞান না থাকারই কথা । তদুপরি তিনি বলেছেন কন্যাকুমারী নাকি রামকৃষ্ণ মিশনের থেকে দখল করে নেওয়া হয়েছে ।
এরপর বেলুড় মঠ দখল করে নেওয়া হবে । আমার প্রশ্ন মিশনের যে ব্ৰহ্মজ্ঞানী সন্যাসীরা কাল মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন তারা কি করছিলেন । মুখ্যমন্ত্ৰী না জানতে পারেন কিন্ত এই ব্রহ্ম জ্ঞানীরা তো জানেন একনাথ রানাডের প্রচেষ্টায় কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ শিলা খৃস্টান মিশনারিদের দখলদারি মুক্ত করে সেখানে গড়ে উঠেছিল বিবেকানন্দ স্মারক ।
মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যাভাষণের প্রতিবাদ করবেন না স্বামী সুবীরানন্দ, ? যদি না করেন তাহলে কি ধরে নেব তাদেরও এই রাজনীতিতে সায় আছে । মুখ্যমন্ত্ৰী অভিযোগ করেছেন রামকৃষ্ণ মিশনকে নাকি ভয় দেখানো হয়েছে । রামকৃষ্ণ মিশন পরিষ্কার বলুক কারা তাদের ভয় দেখিয়েছে । যদি বলতে না পারে তাহলে তারা এটা অন্তত বলুন বেলুড় মঠ বা রামকৃষ্ণ মিশন কারো রাজনীতি করার জায়গা নয় ।
সুবীরানন্দরা এটা বলতে পারবেন না ।
সুবীরানন্দরা এটা বলতে পারবেন না ।
কারণ তারাই রামকৃষ্ণ মিশনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার ছাড়পত্র শাসক দলকে দিয়েছে । দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি কয়েকবছর যাবত মিশনের বরিষ্ঠ সন্যাসীরা শাসকদলের মনোরঞ্জন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । শাসকদলও মিশনের সন্যাসীদের পাশে বসিয়ে ক্রমাগত রাজনৈতিক বক্তব্য রেখে চলেছেন ।
গত বছর উইম্বলডনে ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিতে স্মারক উন্মোচন করতে গিয়ে স্বামী সুহিতানন্দ বলে এসেছিলেন এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বীকৃতি জানানো হল । অথচ উনি খুব ভালো মতই জানতেন ওই স্মারক প্রতিষ্ঠার পিছনে রামকৃষ্ণ মিশন বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো অবদানই ছিল না । লন্ডন নিবাসী বাঙালিদের উদ্যোগেই ওই স্মারকটি বসেছিল ।
আমি এও জানি শুধুমাত্র শাসকদলের পছন্দের ব্যক্তি নয় বলে নিবেদিতার এক জীবনীকারকে মিশনের একটি অনুষ্ঠানে বক্তার তালিকায় রেখেও বাদ দিয়ে দেওয়া হয় । স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের কয়েকজন গেরুয়া ধারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন । তিনি আমাদের সকলের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত । এই তথাকথিত সন্যাসীদের হাত থেকে রামকৃষ্ণ মিশনকে বাঁচাতেই হবে ।