আমার বিরুদ্ধে এক মুসলিমের অভিযোগ ও তার দাঁত ভাঙা জবাব
হিন্দু ধর্মের উন্নয়নে আমি অনেক বছর ধরে লেখালেখি করি। যারা আমার লেখা নিয়মিত পড়েন তারা জানেন আমি হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে খারাপ ধারনাগুলো দূর করতে লেখালেখি করি। আমার লেখাগুলো পড়ে আপনারা আমাকে অবতার, ভগবান ইত্যাদি মন্তব্য করেছেন। সাত্ত্বিক খাবার, ইসকন বিরোধীতা, রামকৃষ্ণ মিশন বিরোধিতা সহ দুই একটি বিষয় ছাড়া আমার বেশির ভাগ লেখাই গ্রহন করে আপনারা আমাকে কৃতার্থ করেছেন। এই পোস্টে আমি আমার বিরুদ্ধে Omar Faruk এর করা অভিযোগের জবাব দেব। পাশাপাশি আমি অন্যান্য হিন্দুভাইদের অভিযোগের ও জাবাব দিতে চেষ্টা করব। প্রথমে সেই মুসলিমের অভিযোগগুলো দেখা যাক
১। আপনি খুঁজে খুঁজে গাঁজা খাওয়ারও উপকারিতা বের করেন। আপনি “শিবের গাঁজা খাওয়া” নামের একটি লেখায় বলেছেন গাঁজার ৯৫% উপকারিতা ও মাত্র ৫% অপকারিতা আছে। গাঁজার উপকারিতা আর গাঁজা খাওয়ার উপকারিতা বিষয় দুটি যে এক না তা আপনি আপনার অন্যান্য পোস্টের মত খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। অথচ ইসলাম বা অন্যান্য ধর্মের কোন ভাল দিক আপনার চোখে পড়ে না।
২। আপনি মহাভারতের ঐশ্বরিক কাহিনী, যেগুলো সচরাচর ঘটে না, সেগুলো খুব সহজে বিশ্বাস করেন, তার পক্ষে যুক্তি দেখান, কিন্তু ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মের কাহিনীকে আপনি আজগুবি কাহিনী মনে করেন, সেগুলো বিশ্বাস করতে চান না, সেগুলোর পক্ষেও যুক্তি থাকতে পারে তা মনে করেন না। উদাহরণ স্বরূপ আপনার এক লেখায় বাবা ছাড়া মেরীর গর্ভে যীশুর জন্ম হয়েছে এটা আপনি মানতে পারেননি।
৩। আপনি আপনার যুক্তির ভুল ধরার সুযোগ দেন না। আপনি মুসলিমদেরকে আপনার যুক্তির ভুল তুলে ধরে কমেন্ট করার সুযোগ দেন না। আপনি ভয় পান কারন তাহলে তারা আপনার যুক্তির ভুল ধরিয়ে দেবে। এই জন্যই আপনি ফেসবুকে পেজও খুলেন না।
৪। আপনি নিজেকে হিন্দু ধর্মের অবতার, ভগবান, দেবতা মনে করেন। আপনি এক পোস্টে আপনার প্রতি আপনার ফেসবুক ভক্তদের করা ঐসব ছেলে-মানুষী কমেন্ট গর্ব করে প্রচার করেছেন। আমি সকল ধর্মকেই শ্রদ্ধা করি। আমি মনে করি স্রষ্টা একজনই। কেউ তাকে আল্লাহ্ ডাকে, কেউ ডাকে ব্রহ্ম বা অন্যান্য নামে। কিন্তু আপনি তা মানতে চান না। আপনি নিজেকে অবতার, ভগবান বলে পরিচয় দিয়ে সনাতন ধর্মকে অপমান করছেন, সাথে সাথে আপনি নিজেকেও হাসির পাত্র করছেন। আপনি নিজেকে সাধারণ হিন্দু পরিচয় দিয়ে কাজ করলে ভাল ফলাফল পাবেন। আপনার মধ্যে আত্মগর্ব, আত্ম-অহঙ্কার, ভিন্নমতের মানুষের প্রতি চরম ঘৃণা রয়েছে। এইজন্য ফেসবুক আপনাকে ব্লক করে, আপনার একাউন্ট বন্ধ করে দেয়। এসব খারাপ গুন যদি বর্জন করতে না পারেন তাহলে আপনি ধর্ম শিখাতে গিয়ে অধর্ম শিখিয়ে ফেলবেন, ধর্মরক্ষা করতে গিয়ে ধর্মের ক্ষতি করে ফেলবেন।
এই ছিল ঐ মুসলিমটির মন্তব্য। কমেন্টে তার প্রশ্নের স্ক্রিনশট দিয়েছি। এবার দেখুন আমার জবাব।
১। তার প্রথম প্রশ্ন ছিল আমি খুঁজে খুঁজে গাঁজা খাওয়ারও উপকারিতা বের করি, অথচ অন্যান্য ধর্মের কোন ভাল দিক আমার চোখে পড়ে না। তার মনে রাখা উচিত ছিল আমি শুধু হিন্দু ধর্মের প্রচারক। তাকে আমি প্রশ্ন করতে চাই, আপনি কি কখনো কোন জাল-মুড়ি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে সে কেন আইসক্রিম বিক্রি করে না? সুতরাং এটা একটা আবালময় প্রশ্ন।
২। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল আমি মহাভারতের ঐশ্বরিক কাহিনী, যেগুলো সচরাচর ঘটে না, সেগুলো খুব সহজে বিশ্বাস করি, তার পক্ষে যুক্তি দেখাই, কিন্তু ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মের কাহিনীকে আমি বিশ্বাস করি না। এটাও প্রথম প্রশ্নের মত আবাল যুক্তি। আমি যদি অন্যান্য ধর্মের কাহিনী বিশ্বাস করি তাহলে হিন্দু থাকব কেমনে? সুতরাং এটাও একটা আবাল প্রশ্ন।
৩। তৃতীয় প্রশ্ন ছিল আমি আমার যুক্তির ভুল ধরার সুযোগ দেই না। আসলে প্রত্যেক যুক্তির একটা পাল্টা যুক্তি থাকে। কেউ তা শুনতে চায় না। আমিও চাই না। যুক্তি দিয়ে ধর্ম হয় না। কথায় আছে, ভক্তির কাছে যুক্তি অর্থহীন। কেউ যদি ইসলাম ধর্মকে যৌক্তিক ধর্ম হিসেবে তুলে ধরে তাহলেও আমি ইসলাম গ্রহন করব না। কারন দিন শেষে আমিও যুক্তির উপর ভক্তিকে প্রাধান্য দেই। আপনারা বলতে পারেন তাহলে আমি কেন একটি পোস্টে বলেছিলাম যে, “কেউ যদি আমার পোস্টের ভুল ধরে ইসলাম ধর্ম যে হিন্দু ধর্মের চেয়ে সেরা তা প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি মুসলিম হয়ে যাব”। একথা বলেছি আপনাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য। কারন বেশিরভাগ হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিমদের যুক্তির কাছে হেরে।
৪। চতুর্থ প্রশ্নতো প্রশ্ন নয়, যেন ইতিহাস। একসাথে অনেকগুলো অভিযোগ। প্রথম অভিযোগ আমি নাকি নিজেকে অবতার, ভগবান, দেবতা মনে করি। কিন্তু আপনারা জানেন এটা আমার কথা নয়, এটা আপনাদেরই কথা। এটা বলতে আমি আপনাদের বাধ্য করিনি, অস্ত্র ধরিনি, আপনারা আমার লেখাপড়ে আমাকে অবতার, ভগবান, দেবতা মনে করেছেন। এটা আমার পরিশ্রমের ফল। সবাই প্রশংসা চায়, আমিও চাই। আপনারা আমার সাথে আছেন বলেই আমি লেখি। এখনও কেউ যদি আমার লেখা চুরি করে আমার নাম উল্লেখ না করে পোস্ট করে তাহলে আমার প্রচুর রাগ হয়। কারন একটা লেখা লিখতে আমাকে কয়েক দিন পরিশ্রম করতে হয়। এরপর সে বলেছে ইসলাম আর হিন্দু ধর্মের স্রষ্টা নাকি একজনই। স্রষ্টা যদি একই হত তাহলে এখনও কেন হিন্দুর ঘরে শিশু জন্ম নেয়? সুতরাং ইসলাম আর হিন্দু ধর্মের স্রষ্টা একজনই এটা আমি মনে করি না। এটা সেকুলারদের কথা। এটা আমি বিশ্বাস করি না।
এবার আমার হিন্দু ভাইদের অভিযোগের জবাব দেই
প্রথম অভিযোগ সাত্ত্বিক মানে নিরামিষ খাবার আমি এটা বিশ্বাস করি না। সাত্ত্বিক মানে কি এটা নিয়ে আমি বহুবার পোস্ট করেছি এবং বহুবারই গালাগালির সম্মুখীন হয়েছি। নিরামিষ খাবারের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমি নিরামিষ খাবারের সম্পূ্র্ণ বিরুদ্ধে, এই বিষয়টি আমার বিভিন্ন লেখায় অনেকবার প্রকাশ করেছি, আমার এসব লেখা পড়ে ঐ দিব্যজ্ঞানীরা আমাকে পরামর্শ দেয়, আপনি গীতার অমুক অমুক শ্লোক পড়ে দেখেন, সেখানে বলা আছে সাত্ত্বিক, তামসিক রাজসিক খাবারের কথা, এছাড়াও অমুক শ্লোকে দেখেন, সেখানে বলা আছে, কৃষ্ণকে পত্র পুষ্প ও ফল নিবেদন করার কথা, ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রথম কথা হলো, নিরামিষ খাবারের এই নিয়ম হিন্দু ধর্মের কোনো বৈশিষ্ট্য নয়, এটি জৈন মতবাদের একটি বৈশিষ্ট্য; এই জৈন মতবাদ থেকে এটি চৈতন্যদেব এর বৈষ্ণব মতবাদে অনুপ্রবেশ করেছে, যে বৈষ্ণব মতবাদের মূল বৈশিষ্ট্যই হলো কান্নাকাটি করা, এজন্যই তাদের কাছে নিরামিষ খাবার আদর্শ; কারণ অপরের হাতে বিশেষ করে মুসলমানদের হাতে ব্যক্তিগত বা সামাজিকভাবে মার না খেলে আপনি কাঁদবেন কিভাবে ? আমি প্রমাণ করে দেখিয়েছি রাম সীতা হরিণের মাংস খেয়েছেন। আপনারা অনেকেই জানেন, স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগোতে যে বিশ্ব ধর্মসম্মেলন হয়েছিলো, তাতে যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। সেই সময় চার বছর তিনি আমেরিকায় ছিলেন, সেই সময় যাদের বাড়িতে তিনি আশ্রয় পেয়েছিলেন, তারা যা খেতো, স্বামীজীকেও তাই খেতে হতো। তারা গরু শুয়োর সহ যা খাওয়া যায়- সবই খায়, স্বামীজীকেও সেই চার বছর সেই সব খাবারই খেতে হয়েছিলো। তিনি কখনো নিরামিষভোজীও ছিলেন না, মাছ মাংস খেয়ে গেছেন জীবনের শেষ পর্যন্ত। শাস্ত্র না পড়েই যারা মনে করেন যে, হিন্দু ধর্মে নিরামিষ খাবারের কথা বলা আছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করছি, আপনার কি মনে হয়, হিন্দু শাস্ত্র সম্পর্কে স্বামীজীর কম জ্ঞান ছিলো ? স্বামীজী জানতেন যে, হিন্দু শাস্ত্রে কোথাও নিরামিষ খাবারের কথা বলা নেই, তাই তিনি নিরামিষ খেতেন না, শুধু তাই নয়, স্বামীজী আরো জানতেন যে, নিরামিষ খাবারের কুফল কতটা, তাই তিনি বলেছেন, “নিরামিষ আহার হিন্দু জাতির পতন ও হাজার বছরের পরাধীনতার অন্যতম কারণ।”
আমার বিরুদ্ধে অনেক হিন্দু ভাইরা অভিযোগ করেন আমি ইসকন বিরোধী। আমি তাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই ইসকন এই হিন্দু সমাজের উন্নয়নে কি করেছে? তারা বলবে ইসকন ইউরোপ-আমেরিকায় এই করেছে, সেই করেছে। নিজের দেশেই হিন্দুরা অত্যাচারিত আর ইনকন কাজ করছে বিদেশে। আমার পানির পিপাসা লেগেছে, সে আমাকে পানি না দিয়ে বলছে ইসকন অন্য দেশে পানি বিলাচ্ছে। দরকার নাই ঐসব ইসকনের। আর রাম-কৃষ্ণ মিশনতো জন্ম থেকেই হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। হিন্দু ধর্মের ধ্বংসের জন্য এমন কোন কাজ নাই যা রামকৃষ্ণ মিশন করেনাই।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
জয় হিন্দ।