‘ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই নাই’- পৃথিবীতে বাংলা ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষাতে এরচেয়ে ভাল করে ক্রিমিনাল মাইন্ডিং অল্প কথায় প্রকাশ পেয়েছে জানা নেই। পৃথিবীর যেখানেই মানুষের উপর ট্রাক, ভ্যান, লরি উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে- ওমনি কিছু লোক রাস্তায় নেমে প্লেকার্ড ধরে বলছে, আমরা মুসলমান কিন্তু সন্ত্রাসী নই!
ক্ষত-বিক্ষত নিথর শরীরগুলো, নিস্পাপ শিশুর লাশ, স্বজনদের কান্নার রোলে ভারি হওয়া বাতাসে যখন শোকে মুহ্যমান সকলে, ওমনি একদল বলা শুরু করছে- ইসলাম শান্তির ধর্ম! ইসলামে ‘অহেতুক’ রক্তপাতের কথা বলা নেই…। এরাই পশ্চিমের ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র আর উদার সমাজ ব্যবস্থায় নিজেদের জন্য শরীয়া শাসনের দাবী করে। নিজেদের কমিউনিটিতে পশ্চিমাদের উদার সংস্কৃতির বিষেদাগার করে। মসজিদে জমায়েত হয়ে ইউরোপীয়ানদের ‘বেহায়াপণার’ জন্য আল্লার গজব কামনা করে। এখন এরাই শান্তির সাদা পায়রা হয়ে গেছে নিমিষে!
বার্সেনোলায় ভ্যান জিহাদের একজন বাংলাদেশী জিহাদীর সংপৃক্ততার কথা জানা যাচ্ছে। সে দরিদ্র ছিলো না। বাংলাদেশে থাকলে হয়ত কোন আইটি ফার্মে চাকরি করত। মিনি বাসে করে অফিসে যেতো। কিন্তু ইংলেন্ডের বসবাসরত সাইফুল সুজনের রীতিমত আইটি ফার্ম ছিলো। পিৎজা সপের সেলসম্যান নয়। ইংলেন্ডের উপরতলার লোক বলা চলে। সেই লোক ইসলামী খেলাফতের অংশ হিসেবে জিহাদের যোগ দিয়েছে। কারণ সে বিশ্বাস করে ইসলাম কায়েম করার জন্য মুসলমানদের কাছে আল্লাহ তাদের জীবন ক্রয় করে নিয়েছেন। বিনিময়ে তাদের দেয়া হবে অফুরান্ত বেহেস্তি সুখ আর সম্ভোগ। প্রত্যেক মুসলমানের কাছে এই পৃথিবী হচ্ছে আল্লার পথে জিহাদ করার ক্ষেত্র। এখানে আল্লার শাসন কায়েম করার অর্থ হচ্ছে আল্লার পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়া। সাইফুল সুজনের মত কোটি কোটি ধর্ম প্রেমী, ইসলাম প্রেমী মুসলমান ইসলামের এই শিক্ষা বা বিশ্বাসের কারণে তাদের উন্নত জীবন, ক্যারিয়ার, সুখি পরিবার, অর্থবিত্ত সব কিছু তুচ্ছ হয়ে যায়। সব কিছু ফেলে জিহাদের ময়দানে যাবার জন্য পাগল হয়ে পড়ে। জিহাদের ময়দানে গিয়ে আল্লার রাস্তায় শহীদ হলে সব পাপ ধুয়ে মুছে নিস্পাপ হয়ে বেহেস্ত নিশ্চিত। এরকম শটকাট পদ্ধতিতে পরকালের প্যাকেজ থাকতে কে আর বসে থাকবে। ইউরোপের মসজিদগুলোতে সময় পেলেই এসব বয়ান দেয়া হয়। একটা সন্ত্রাসী হামলার পর সেই মসজিদের ইমামই হয়ে যান শান্তির দুত। গণমাধ্যমের কাছে বলেন, তারা ভীত! গুটি কায়েক সন্ত্রাসীর কারণে তারা এখন ঘৃণার শিকার হবেন…।
মুসলমানদের রক্ষা করতে হবে ইসলাম থেকে। কুরআন আর হাদিস থেকে। খ্রিস্টানরা বহু আগে তাদের ধর্মের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে। ইহুদীরা ধর্ম ছেড়ে ব্যবসা আর জ্ঞান তাপসে মন দিয়েছে। হিন্দুরা এখনো তাদের ধর্মের কিছু কুসংস্কারকে লালন পালন করে চললেও তাদের ধর্মে জিহাদ নেই বলে রক্ষে। বরং বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে মার খেয়ে বেচে থাকা জাত হিসাবে হিন্দুরাই টিকে আছে।
সারা পৃথিবীতে আল্লার ঘর হচ্ছে সন্ত্রাসীদের শলাপরামর্শের জায়গা। নতুন জিহাদী রিকুটেরও অন্যতম স্থান। আমাদের জীবদ্দশাতেই দেখতে পেলাম ইসলামের অন্যতম শর্ত নারীদের পর্দাকে শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে মুসলিম দেশগুলো। পর্দার নামে বোরখা, নেকাপ পড়ে জিহাদের বোমা মারা ঠেকাতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এইসব পোশাক নিষিদ্ধ করছে। একইভাবে দেখেছি যেসব মসজিদ জিহাদের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বা জিহাদীদের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাজেই এটা নিশ্চিত আগামীতে নিরাপত্তার কারণে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর সবখানে মসজিদের উপর বিধিনিষেধ আসবে। মসজিদ নির্মাণ করতে সরকারী কঠোর নিয়ম-কানুন মানতে হবে। কোথাও কোথাও অনুমতি মিলবে না। এসব মুসলিম অধ্যুষিত দেশে হলে কোন রা হবে না। তবে কথাকথিত অমুসলিম দেশে হলেই একশ্রেণীর বাম চেতনাবাজ, মডারেট মুসলমানরা ‘ইসলাম বিদ্বেষী ইসলাম বিদ্বেষী’ বলে চেচিয়ে গলা ফাটাবে। যদিও আশার কথা, এই কন্ঠগুলো দ্রুত নিস্পভ হয়ে পড়বে খোদ সাধারণ মুসলমানরাই যখন বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে এইসব কড়াকড়িকে নিরব থেকে তাদের সম্মতি জানাবে…।