একবার এক আধুনিক মেয়ে আমাকে বলেছিলেন, যাই বলেন, ইসলাম মেয়েদের দেনমোহন দিয়ে একটা আর্থিক নিরাপত্তা দিয়েছে। অন্যান্য ধর্ম থেকে এইখানে ইসলাম বেশ আধুনিক অগ্রসর- কি বলেন?
তখন ইন্টারনেট যুগ নয়। আজকের দিন হলে মোবাইল থেকেই তাকে ইসলাম কি বলে এ সম্পর্কে দেখিয়ে দিতাম। বাংলাদেশে নারীদের নিয়ে কাজ করেন এমন নারীদেরও দেখেছি তারা ইসলাম ধর্মকে অন্যান্য ধর্মের চেয়ে নারীবান্ধব মনে করে! যে দেনমোহর দান নিয়ে ইসলামিস্টরা গালভরা কথা বলে আদতে সেটা কিছুই না। নবীর মেয়ে ফাতিমার দেনমোহর ছিলো একটা জীর্ণ লোহার যুদ্ধ পোশাক! সুনান আবু দাউদ, বই ১১ হাদিস ২১২১, মোহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে সওবান নবীর (দঃ) এক সাহাবি থেকে বর্ণনা করলেন, আলী নবীর (দঃ) কন্যা ফাতেমাকে বিবাহ করে তাঁর সাথে সহবাস করতে চাইলেন। আল্লাহ্র নবী (দঃ) আলীকে নিষেধ করলেন তাঁর কন্যার সাথে সহবাস করতে যতক্ষণ না আলী ফাতেমাকে কিছু দিয়ে দেন। আলী বললেন, ‘আমার কাছে কিছুই নেই’। আল্লাহ্র রসুল (দঃ) বললেন: ‘তোমার যুদ্ধের পোশাক তাকে দিয়ে দাও।‘ আলী তাই করলেন এবং ফাতেমার সাথে সহবাস করলেন।
আলীর পরিত্যাক্ত যুদ্ধের বর্ম পোশাক দিয়ে ফাতিমা কি করবে? ইসলাম দেনমোহর নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে দেনমোহর যেন কখনই বেশি না হয় তার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সহি হাদিস থেকে জানা যায়, যে কেউ জায়গা জমি, কাপড়-চোপড় দেয়া থেকে কুরআন শিক্ষা এবং ইসলাম গ্রহণকেও মোহর হিসেবে ধরতে পারবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২০২-৩২০৯নং)। নবী মুহাম্মদ খয়বার আক্রমনের সময় তার নিজের ভাগে গণিমত হিসেবে ইহুদী সর্দারের স্ত্রী সাফিয়াকে পেয়েছিলেন। যৌনদাসী থেকে নবী তাকে বিয়ে করেছিলেন। সাফিয়ার মোহর হিসেবে তাকে মুক্তি দেয়াকেই ধার্য করা হয়েছিলো।
অর্থ্যাৎ দেনমোহর মুসলিম নারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। ইসলাম যেহেতু নারীর স্বাধীন জীবনযাপনকে সমর্থন জানায় না তাই একজন মুসলিম নারী লাখ টাকা দেনমোহর পেলেও তার নিরাপত্তা হিসেবে তা কোন কাজেই আসবে না। দেনমোহরকে ইসলাম ঠিক কি চোখে দেখে সেটা জানা থাকলে আর কেউ এটাকে নিরাপত্তা-ফিরাপত্তা জাতীয় প্রলাপ বকবে না। ইসলামের চোখে বিয়ে হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে নারীর যৌনাঙ্গ কেনা। নারীকে ফাও ‘ভোগ’ না করে আল্লাপাক অর্থের বিনিময়ে সেটি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এটি পতিতাবৃত্তির মতই কুৎসিত। দেনমোহর নারীকে মানুষ নয় সেক্সডল ছাড়া আর অন্য কিছু স্বীকৃতি দেয় না। সহি হাদিসে নবী মুহাম্মদ বলেন, ‘সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা পূরণ করা জরুরী, তা হল সেই বস্ত্ত যার দ্বারা তোমরা (স্ত্রীদের) গুপ্তাঙ্গ হালাল করে থাক’ (সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ১৫৪৭নং)।
আপনি আপনার স্ত্রীর জরায়ু অর্থের বিনিময়ে কিনে নিলেন- এটি পুরুষ হিসেবে আপনাকে গর্বিত করে না এবং একজন নারী হিসেবে আপনাকে মহান করে তোলে না। পৃথিবীর সব ধর্মের চোখে নারী কেবল যৌনসামগ্রী। ইসলাম খুবই চতুরভাবে এইসব অভিযোগ থেকে দেনমোহর জাতীয় ধাপ্পাবাজিতে মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। বরং আর সব ধর্মের মত ইসলামও নারীকে ‘মাল’-ই মনে করে। সুরা নিসা’য় দেখুন কি বলছে, আর যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই গ্রহণ করো না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচারণ দ্বারা তা গ্রহণ করবে? কিভাবে তোমরা তা গ্রহণ করবে, অথচ তোমরা পরস্পর সহবাস করেছ এবং তারা তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে?’’ (সূরা আন-নিসা (৪) : ২০-২১)।
এ যেন পতিতার সঙ্গে সদাচার করতে নির্দেশ দিচ্ছে! তাকে দেয়া অর্থ ফিরিয়ে নিও না। লোহার জামা হোক আর একটা রূপা আংটি- এটি ছিনিয়ে নিও না…। মহানুভবতার চূড়ান্ত!