জিহাদ মুসলমানদের, জিহাদে ইন্ধন সবার।

জিহাদ মুসলমানদের, জিহাদে ইন্ধন সবার
©Mufti Masud
আহমদ শফী দাবি করেছে, সহশিক্ষায় গুনাহ হয়, এতে ধর্ষণ বাড়ে। আমাদের প্রতারক ভন্ডরা আহমদ শফীর কথা আজকে জানতে পারছে! অথচ আজ থেকে কুড়ি বছর আগে মাদ্রাসায় পড়ার সময়ই আমাদের শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হামিদের কাছ থেকে আমি শুনেছি, ‘সহশিক্ষা মানে হচ্ছে সহবাস শিক্ষা।

’ স্কুলের সহশিক্ষায় খুব সমস্যা, কিন্তু মাওলানা আব্দুল হামিদ যে আমাদের ক্লাসমেট ইমরানকে ধর্ষণ করতো তাতে কোন সমস্যা ছিল না! সহশিক্ষায় যদি ধর্ষণ বাড়ে তাহলে আহমদ শফীর কাছে জানতে ইচ্ছে হয়, কওমি মাদ্রাসায় এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন? মাদ্রাসায় যেসব শিশুরা তাদের শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষিত হচ্ছে সেটা কি সহশিক্ষার ফল? নাকি বেপর্দার ফসল? ছেলেদের জন্য তাদের হুজুর থেকে পর্দা করার কোন বিধান ইসলামে আছে?

কল্পনার রথে চড়ে আজ থেকে ৮৫ বছর আগে ফিরে যান, যখন আহমদ শফী ছিল একটি শিশু। আহমদ শফী নামের শিশুটাকে তার বাবা জোর করে মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছে। পড়াশোনায় মনোযোগ নেই, তাই তাঁকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে পেটাচ্ছে তাঁর শিক্ষক। শফীর কৃষক বাবা স্থানীয় ওয়াজ মাহফিলে হুজুরের কাছ থেকে শুনেছে, ছেলেকে মাদ্রাসায় দিলে ছেলে বাপেরে তো বটেই, তার পুরো চৌদ্দগুষ্টিকে টেনেহিঁচড়ে বেহেশতে নিয়ে যেতে পারবে। বেহেশতের লোভে শফীর বাবা শফীকে মাদ্রাসায় দিয়েছে। শফী মাঝেমাঝেই বাড়িতে এসে তার মা’র কাছে গায়ে কান্নাকাটি করত; বলত, আমি মাদ্রাসায় পড়ব না, আমি স্কুলে পড়তে চাই। শফীর বাবা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে শিশু শফীকে পেটাচ্ছে, কারণ সে কোনভাবেই তাঁর বেহেশত মিস হতে দিতে চায় না। হয়তো শফী যে মাদ্রাসায় পড়েছে সে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিল স্থানীয় কোন হাজী সাহেব, যে হাজী সাহেব সোহরাওয়ার্দীর দলের স্থানীয় নেতা। হাজী সাহেবের স্ত্রীও হাজী সাহেবা। শিশু আহমদ শফী সবসময় তার হুজুরকে ভয় পেত। শফীর বাবা হয়তো সোহরাওয়ার্দীর দলের স্থানীয় নেতার বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিল। হয়তো একদিন সে নেতাকে বলেছিল, ‘হাজী সাহেব দোয়া করবেন, আমগো শফীরে মাদ্রাসায় দিছি। পোলা আলেম হইয়া আমারে তো নিবই, আপনারেও বেহেশতে নিয়া যাইবো ইনশাআল্লাহ।’ ধর্ষক, ভূমিদস্যু ও গরীবের উপর অত্যাচারী হাজী সাহেবের চোখের সামনে ভেসে উঠল বেহেশতের নরম নরম হুর। গফুর মিয়ার বিধবা স্ত্রী সমিরন্নেছা যার শরীর অতি নরম, যাকে প্রথমদিন হাজী সাহেব ধর্ষণ করার পর এখন নিয়মিতই তার সাথে সহবাস করে; তারচেয়েও বেশি নরম হচ্ছে আল্লাহর বেহেশতের হুর। হাজীর বৌ আগে হাজীর জাউরামি নিয়ে কথা বললেও হজ্ব করার পর পর্দা-পুশিদা করে বলে আর এখন সেসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না।
হাজী সাহেব শফীর বাপের মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘চিন্তা কইরোনা সলিমুদ্দিন, এই বছর আমি ওমরায় যাইতাছি। তোমার পোলার লাইগা আল্লাহর ঘরের গিলাফ ধইরা দোয়া করমু।’ শফির বাপ বলল, ‘পোলাডারে মাঝে মাঝে শয়তানে ধরে, মাদ্রাসায় যাইতে চায় না। পাশের হিন্দু পাড়ায় মেলা হইতাছে। হেদিন গিয়া দেহি মেলায় গিয়া ও হিন্দুগো দোকান থিকা নারকেল নাড়ু কিনা খাইতাছে। কন, এইসব কি সইজ্য করন যায়?’ হাজী সাহেব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘মাদ্রাসার হুজুররে আমি আরো বেশি লাঠি কিন্না দিমু। মাদ্রাসার পোলাপানগো মাথায় শয়তান ভর করে বেশি। পিটাইলে শয়তান দূর হইয়া যাইবো। আর অই হিন্দু মালাউনগুলারে কি কমু কও! অগো ধর্মই কো শয়তানি আর বজ্জাকিতে ভরা। হেইদিন নেতারে কইলাম, আপনি হুকুম দিলেই মালাউনগো মাইরা গাঙ্গে ভাসাইয়া দিতে পারি। নেতায় কয়, না ওইটা করা যাবে না। এখন কাফের ইংরেজদের শাসন। আগে যেকোনভাবে মুসলমানদের জন্য একটি দেশ বানাতে হবে, তারপর মালাউনগো কি করা যায় ভাবা যাবে’
শফীর বাবা খুব খুশি, নেতা পার্টির গোপন আলাপের কথা তার মতো উম্মী লোকের কাছে আজ বলেছে! নেতাকে কিপ্টামি ও লুচ্চামির কারণে শফীর বাপ পছন্দ না করলেও আল্লাহ, রাসুল ও ইসলামের প্রতি নেতার ভক্তি শ্রদ্ধা তাঁকে অনেক সময়ই মুগ্ধ করে।

মাদ্রাসায় পড়তে না চাইলেও ভয়ে বাধ্য ছেলে আহমদ শফী একদিন অনুভব করল, তাঁর পাশে তার হুজুর শুয়ে আছে। কোরবানির ছুটিতে সবাই বাড়িতে গেলেও হুজুর দু‘তিনজন ছাত্রকে মাদ্রাসায় রেখে দেয়। ছেলেদের কেউ মাদ্রাসায় না থাকলে মাদ্রাসার মালামাল হেফাজত, লজিং বাড়ি থেকে হুজুরের খানা নিয়ে আসা ও হুজুরের খেদমত কে করবে? যে ছেলেটা ছুটির সময়েও মাদ্রাসায় থাকে তার বাপের খুশি আরো বেশি – ছেলে হুজুরের খেদমত করে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফিরদাউসে সিট বুকিং দিয়ে ফেলেছে যেন! আজ শফী ভয় পেলেও হুজুরকে ‘খারাপ কাম’ করতে দিতে চায় না। ভয়ে ভয়ে বলে, ওস্তাদজী, এইডা তো খারাপ কাম! হুজুর শিশু শফীকে প্রচন্ড ভয় দিল, ‘ওস্তাদের কথা না শুনলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবি। তোর বাপ-মাকে জিন দিয়া ধরাইয়া দিমু। বদ জিন তোর বাপ-মায়েরে মাইরা ফালাইবো!’ শফী তার বাবা-মায়ের চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে রাজি হয়ে গেল।
সারারাত যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকলো শিশু আহমদ শফী। পরদিন সকালবেলা আহমদ শফী বাথরুম করতে গিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছে। দীর্ঘদিন এভাবে শিশু আহমদ শফীর উপর হুজুরের লৈঙ্গিক দংশন চলতে থাকলো। কিতাবখানায় পড়ার সময় আহমদ শফী যখন ক্লাসের বড়ভাই তখন সে তার জুনিয়র ছেলেদের সাথে সেই আচরণ করতে থাকলো যেটি তার শৈশবে তার সাথে করেছিল হুজুর। শফীর পড়াশোনা শেষ, স্থানীয় রাজনীতিবিদ যিনি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি, তার অনুমোদনক্রমে আহমদ শফীকে মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। ক্রমেই আহমদ শফী বড় হুজুর হয়ে যেতে থাকলো। একপর্যায়ে দেশের বড় হুজুর হয়ে গেল আহমদ শফী। হয়ে গেল না বলে বরং বানানো হয়েছে বলা উচিত। যতটা বড় হুজুর সে তারচেয়ে বেশি বড় হুজুর তাকে বানিয়ে ফেলল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো, আর সাথে সহযোগী হিসেবে থাকলো সাংবাদিকেরা। বিএনপি-জামাত শফীকে ‘জাতীয় মুরুব্বী’ ঘোষণা করে জাতীয় মুরুব্বির সাথে কোন বেয়াদবি না করতে সরকারকে সতর্ক করল! আওয়ামী লীগ শুরুতে সামান্য বেয়াদবি করলেও পরে বেয়াদবি প্রত্যাহার করে তাঁকে কুর্নিশ করে জাতীয় মুরুব্বী স্বীকার করে নিল।

বলুন তো, আহমদ শফীদের মতো উগ্রবাদী তৈরি করতে রাজনীতিবিদদের কি ভূমিকা? বলুন তো, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের রাজনীতিবিদদের মোল্লাদের ব্যাপারে কি ভূমিকা? আহমদ শফী জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় দীক্ষা পেয়েছে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে। আমাকে বলুন, ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার রক্ষাকর্তা কারা? জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অভিযোগে যদি জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হয় তবে দেওবন্দকে কেন নয়? দেওবন্দ জাকির নায়েকের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে! আর যদি ভারতের কোন সরকার দেওবন্দ নিষিদ্ধ করে তবে মুসলিমরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামুক বা নামুক, মডারেট হিন্দুরা, বামপন্থীরা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়বে না? এমনকি যদি কংগ্রেস ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসের বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে দেওবন্দ নিষিদ্ধ করে তাহলে হিন্দুত্ববাদী বিজেপিই তখন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
জিহাদ মুসলমানদের, জিহাদে ইন্ধন সবার।
Scroll to Top