“মনু এবং মনু সমহিতা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
(৩) তৃতীয় পরিচ্ছেদ
মনু কে ছিলেন???? এই মনু বিরোধীরা কি বলতে পারবেন?? মনুর কাল কি এই ‘পতিত ব্রাহ্মন শ্রেনীর উত্থানের সময় থেকে, অর্থ্যাৎ, হাজার বছরের কাছাকাছি??
শাস্ত্রে ‘মন্বন্তর’ বলে একটা শব্দ আছে। এক ‘মনু’র সময় থেকে অন্য ‘মনু’র পরিবর্তনের নাম মন্বন্তর। বলা হয় মনুকে সৃষ্টি কর্তা সৃষ্টি করেছিলে এবং তাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন তার সৃষ্টিকে রক্ষা এবং লালন পালনের জন্য। তাহলে এও দাড়ালো, সৃষ্টির আদি থেকে নানা মনু এসেছেন, তাদের প্রত্যকের সময় কাল আছে এবং সেই ‘মনু’ একটি উপাধি মাত্র।
ঋৄক বেদের ৮ম মন্ডলের ৩০-৩ শ্লোকে মনুর প্রশংষা করে উল্ল্যেক আছে। সুতরাং মনু বেদের আমলের থেকেও প্রাচীন। সায়ানাচার্য তার লেখার দুটো শ্লোকে (৩-৩৪-৪ এবং ৩-৫৭-৪) মনুকে ‘আদি পিতা’ হিসাবে উল্ল্যেখ করেছেন। এই শুধু নয় বিভিন্ন সনাতনি গ্রন্থে ‘মনু’ কে মানব জাতির জনক বলে শ্রদ্ধা করা হয়েছে। ‘বৈবষ্বত্য মনু’ র উল্ল্যেখ রয়েছে ‘শতপথ ব্রহ্মন’, অথর্ব বেদ এবং শ্রী গীতায় (৪র্থ অধ্যায়ের ১ম শ্লোকে শ্রী কৃষ্ণের উক্তি)।
তৈতিরীয় উপনিষদ, ছান্দগ্য উপনিষদ এবং ‘তন্ড মহা ব্রহ্মন’ মনুকে ‘Naturopathy’ চিকিৎষা বিদ্যার জনক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ছান্দগ্য উপনিষদ বলেছেন সৃষ্টিকর্তা আদি মনুকে সমস্ত জ্ঞান প্রদান করেন এবং অন্যান্য মনু সারা সৃষ্টিকে সেই বিদ্যা,জ্ঞান ভান্ডার বিতরন করেন। প্রজাপতি ব্রহ্মা প্রথমে এক লক্ষ শ্লোকে সমস্ত জ্ঞান ভান্ডার রচনা করেন, পরে মনু মানুষের কল্যানে সেই শ্লোক সংক্ষিপ্ত আকারে মানবের আচরন বিধি ( Human code of conduct) হিসাবে সংকলিত করেন, যার নাম “মনু সমহিতা”। মুনি নারদ এবং অন্যান্য ঋষি ও মুনি মানুষের মাঝে মানুষের কল্যানে সেই আচরন বিধি লোকায়িত করেন ।