হিন্দুদের জড়ায় ধরে কানলে ভোট নষ্ট হবে। নোবেল প্রাইজও মিস হয়ে যাবে। সঙ্গত কারণেই তাই মানবতার এক চোখ কানা…।
রংপুরের ঠাকুরপাড়াতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করা বাড়িঘর আর ক্রন্দনরত মানুষগুলোকে দেখে সংখ্যাগরিষ্ঠরা বলছে, ঠিক আছে! উচিত শিক্ষা হইছে!… প্রথম আলো, বিবিসি’র ফেইসবুক কমেন্ট সেকশনে গেলে বমি আসবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতি ঘৃণা আর হিংসা দেখলে। তবু রাগটা আসছে হিন্দুদের উপরই বেশি…
নোয়াখালী দাঙ্গা যারা করেছিলো, শত শত হিন্দু নারীদের ধরে ধরে পাইকারী হারে যারা ধর্ষণ করেছিলো, ৫ হাজার হিন্দুকে জবাই করা হয়েছিলো, হাজারে হাজারে হিন্দুকে জোর করে ধর্মান্তকরণে বাধ্য করা হয়েছিলো, এসব যে দলের মাঠকর্মীরা করেছিলো তাদের মদদদাতা বড় নেতারাই পরে হয়েছিলো জাতির বাপ-মা। হিন্দুরা এদেরই ভোট ব্যাংক হয়েছিলো। ৭১ সালে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রথম টার্গেট ছিলো ‘কাফের হিন্দুরা’। যুদ্ধের আগে সেই ৬৪-৬৫ সালে যারা ৭১ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ হবে তাদের টার্গেটও ছিলো হিন্দুরা। ৬৪-৬৫ সালে পল্টন, গুলিস্তানে প্রায়শই একজন হিন্দুকে ‘ভারতের দালাল’ বলে গণপিটুনি দেবার নিউজ তখনকার সংবাদপত্রগুলোতে খোঁজ করলেই পাবেন। এইসব পিটুনিদাতারাদের ৯৫ ভাগই পরে স্বাধীনতাকামী হয়েছিলো। ‘গুটিকয়েক রাজাকার আল বদর’ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো সেটা তো আমাদের ইতিহাসসিদ্ধই। শরণার্থীদের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখই ছিলো হিন্দু। কারণ হিন্দুদের উপরই রাজাকার, আল বদর আর পাকিস্তানী সোলজারদের টার্গেট ছিলো। ৬০ লক্ষ বাঙালী মুসলমান শরণার্থী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলো। এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ ‘ভারতের দালাল’ ইহুদী ঘৃণার মতই মনে মনে পুষে রাখত বলাই বাহুল্য। তবু শরণার্থী হয়ে যাওয়া দেড় কোটি হিন্দু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ঠিক কিসের আশ্বাসে, কার আশ্বাসে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলো? এমন বোকামি কেউ করে!
নোয়াখালী দাঙ্গাকারী এবং প্রশ্রয়কারীরাই মুক্তিযুদ্ধে দুইভাগে বিভক্ত হয়েছিলো পাকিস্তানে থাকা আর না থাকা বিষয়ে। হিন্দুরা ছিলো গোণার বাইরে। তারা পূর্ব পাকিস্তানের কোন ফ্যাক্ট ছিলো না। পূর্ব পাকিস্তানের মহান নেতারা কখনো তাদের থাকতে ডেকে আনেনি। ৬৪-৬৫ সালে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া হিন্দুদের তারা কখনই ফেরত নিতে রাজি ছিলো না। বরং সেসব দেশত্যাগী হিন্দুদের সম্পত্তি ‘শত্রুসম্পত্তি’ বানিয়ে তারাও ভোগ করেছে। এখনো সেই মহান অসাম্প্রদায়িকরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তাই লাত্থি খেয়েও হিন্দুদের খুশির সীমা নাই! এরা কয়েক প্রজন্মের মানসিক দাসত্ব করছে …।
:[সুষুপ্ত পাঠক]