~~~”দিল্লীর পিরামিড” ~~~
শুধু মিশরেই নয়, আমাদের এই ভারতেই ছিল এক পিরামিড, দিল্লীর বুকে। শুনুন তাহলে।
ডিসেম্বর মাস,১৩৯৮। কাবুল থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়ে তৈমুর লং ৩০শে সেপ্টেম্বর সিন্ধু পার হলেন। গোটা যাত্রাপথে চলেছে লুঠপাট। উন্মত্ত দানবের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছিল সব প্রতিরোধ। একের পর এক শহর দখল করতে থাকলেন। দিল্লীতে পৌঁছেও কোনওরকম প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি তৈমুরকে। দিল্লীর প্রতি রোষের পেছনে তৈমুরের রাজনৈতিক অজুহাত ছিল এটিই যে, সেখানকার মুসলিম সুলতানরা যথেষ্ট কাফের হত্যা করত না। তাই তার নির্দেশে লুঠতরাজ শুরু হল দিল্লিতে। লুঠতরাজের নামে যা আসলে ছিল ধ্বংসযজ্ঞই! কাফের ধরে কাটো। ধরে ধরে মানুষের মুন্ডু কাটল তৈমুরের সেনারা। আবালবৃদ্ধবণিতা.. তরোয়ালের কোপ কাউকেই রেহাই দিল না। ১৫ দিন ধরে চলেছিল সেই তাণ্ডবলীলা।
শরাফউদ্দিন ও মীর খুদের লেখা থেকে জানা যায়, তৈমুর বাহিনীর হাতে বলি হয়েছে কমপক্ষে একলাখ!
#তাজক-কি-তৈমুরী বা তৈমুর স্মৃতিকথনে নিজের ভাষায় দিল্লীর ঘটনার বয়ান করেছেন এভাবে – “মাসের ষোড়শ দিবসে এমন কয়েকটা ঘটনা ঘটল যার পরিণতিতে ধ্বংস হলো দিল্লী। তরবারির নিচে কাটা পড়ল অনেক #বিধর্মীর মস্তক। ভয়ানক একদল তুর্কি সৈন্য নগরীর কোনো এক ফটকের কাছাকাছি ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর ফুর্তি করছিল। এ সময় তাদের কেউ কেউ কাছের লোকজনের ঘরবাড়িতে হামলা চালায়, তাদের নারী এবং সম্পদ লুটপাটের চেষ্টা করে। খবর কানে আসামাত্র আমি শৃঙ্খলা বিধানের নিমিত্তে একদল সৈন্য পাঠাই সেখানে। এরপর আমার হারেমের কতিপয় মেয়েছেলে দিল্লী সম্রাজ্ঞী মালিকি জৌনার দুর্গ জাহান-পানাহ দর্শনের সাধ প্রকাশ করে। আমি একদল সৈন্যের পাহারায় তাদের নগরে পাঠাই। এরপর জালাল আহমেদ ও তার লোকজন নগরে গিয়ে সেখানকার বিজিত অধিবাসীদের ওপর আরোপিত কর আদায়ের কাজ শুরু করে। এছাড়া খাদ্যশস্য, তৈল, চিনি এবং ময়দা জোগাড়ের লক্ষ্যে আরও এক সহস্র সৈন্য নগরে প্রবেশ করে। এছাড়া আমার কাছে সংবাদ এলো, আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পালিয়ে বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ এবং স্ত্রী-পুত্র-পরিজনসহ একদল অভিজাত হিন্দু আশ্রয় নিয়েছে শহরে। তাদের ধরে আনার জন্য আরও কিছু সৈন্যসহ বেশ কয়েকজন সেনাপতিকে পাঠালাম নগরে। এতগুলো কাজ সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত তুর্কি সৈনিক তখন অবস্থান করছিল ভেতরেই। পলাতক হিন্দুদের ধরার জন্য সৈন্যরা যখন অগ্রসর হলো সে মুহূর্তে বিধর্মীদের কেউ কেউ তরবারি হাতে আক্রমণ করল তাদের। মুহূর্তের ভেতর জ্বলে উঠল সংঘাতের আগুন। সম্রাজ্ঞীর আদরের মহল থেকে শুরু করে পুরনো দিলি্লর প্রতিটি দুর্গ নেচে উঠল লকলকে আগুনের শিখায়। খুন আর ধ্বংসের নেশায় মাতোয়ারা হলো তুর্কি দল। সর্বনাশ থেকে পরিত্রাণের পথ নেই দেখে #বিধর্মীরা নিজের হাতেই আগুন দিল নিজের ঘরবাড়িতে। শত্রুর হাতে অবমাননার ভয়ে নিজেরাই পুড়িয়ে মারল নিজের বিবি-বাচ্চাদের। এরপর তরবারি হাতে ছুটে এলো যুদ্ধে আর মারা পড়ল মাছির মতো। হিন্দু বিধর্মীরা যথেষ্ট শৌর্যের পরিচয় দিয়ে লড়াই করে গেল। সারাদিন ধৈর্যসহকারে নগর ফটক পাহারা দিল সেনাপতিরা। সৈনিকদের নিবৃত্ত করল শহরে ঢুকতে। ওইদিন ছিল বুধবার। পরদিন বৃহস্পতিবার সারাদিন এবং সারারাত পর্যন্ত চলতে থাকা এই লুটপাট, ধর্ষণ, হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নেয় প্রায় ১৫ হাজার তুর্কি সৈনিক। শুক্রবার ভোর এলো। সৈন্যদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা নেই। আমার নির্দেশ ছাড়াই তারা সব ছুটে চলে গেছে নগর অভ্যন্তরে। প্রতিটি সৈন্যের হাতে খোলা তরবারি, চোখে খুন আর ধ্বংসের নেশা। যাদের খুন করা হলো না, তাদের ধরে আনা হলো বন্দি হিসেবে। পরদিন শনিবারও চলল এই জের। দিনশেষে প্রতিটি সৈন্যের ভাগে পড়ল নারী-শিশু মিলিয়ে শতাধিক বন্দি। এমনকি বাবুর্চির ভাগেও পড়ল কমপক্ষে কুড়িজন বন্দি। লুণ্ঠিত দ্রব্যের মধ্যে পাওয়া গেল বিপুল পরিমাণ রুবি, হীরা, চুনি, মুক্তা ও অন্যান্য দ্যুতি ছড়ানো দামি পাথর; সোনা-রুপার অলঙ্কার, আশরাফি বা বাদশাহি মুদ্রা, টাকা আর অমূল্য সিল্ক। দিল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন #ওলামা, #মাওলানা আর #সাঈদী ছাড়া সব নাগরিককে কতল করা হলো। দুর্ভাগ্যের লিপি মাথায় নিয়ে এভাবেই ধ্বংস হলো এ নগর। আমার কী কসুর, আমি তো তাদের বাঁচাতেই চেয়েছিলাম; কিন্তু #আল্লাহর_ইচ্ছা, এভাবেই ধ্বংস হবে দিল্লী।”
দিল্লী ছাড়ার আগে একটি ‘কীর্তি’ স্থাপন করে গিয়েছিলেন ওই লুঠেরা। দিল্লির প্রবেশদ্বারে তাঁর নির্দেশেই তৈরি হল এক #পিরামিড। অদ্ভূত সেই পিরামিড। পিরামিডের উপকরণ হাতের নাগালেই ছিল। কাফেরের কাটা মুন্ডু! হাজার হাজার মুন্ডু দিয়ে তৈরী হল “#দিল্লীর_পিরামিড”।
লুঠপাট সেরে পরের বছরের গোড়াতেই দিল্লি ছাড়লেন। ভারত ছেড়ে যাওয়ার পথে একই কায়দায় চলল আক্রমণ। মিরাটে গণহত্যার পর হরিদ্বার। তখন চলছিল #কুম্ভমেলা। কুম্ভমেলায় হরিদ্বারের গঙ্গা রক্তে লাল হল।
মেলা দেখে কাংড়া ও জম্বুতে গণহত্যা করে তৈমুর ফিরলেন নিজের দেশে।