পৃথিবীতে আরো একটি ধর্মরাষ্ট্র আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। মানব সভ্যতাকে যখন একটি মাত্র পরিচয় ‘মানুষ’ হতে হবে তখন এরকম বিভক্তি পৃথিবীকে আরো কিছুকাল ঘৃণা রক্ত সংঘাত ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না। বলছিলাম ইজরাইল পার্লামেন্টে ‘ইহুদী রাষ্ট্র’ হিসেবে ইজরাইলের পরিচয় সম্পর্কিত বিল পাশ করা বিষয়ে। কিন্তু এই দু:খের মধ্যে হাসির খোরাক জুগিয়েছে মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া দেখে! তারা বলছে ইজরাইল নিজেকে ‘ইহুদী রাষ্ট্র’ বানিয়ে সেখানে বসবাসরত আরব মুসলিম সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করা হবে…।
এরকম কথা শুনলে তো হাসি আসবেই। ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাদের বাপের সম্পত্তি তারাই বলছে এভাবে বিশেষ একটি ধর্মের পরিচয়ে রাষ্ট্র হলে সেখানে অন্য ধর্মের সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের শিকার হবে! ইসলামী কান্ট্রিগুলোর অনেকেগুলোর অমুসলিমদের কোন নাগরিত্ব দেয়া হয় না, কোথাও তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করা হয়েছে, কোথাও অমুসলিমদের প্রবেশই করতে দেয়া হয় না। সম্ভবত পৃথিবীতে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ এরকম পরিচয়ে ৫৪টি দেশ আছে। তারা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে জাতিসংঘের অনুমতি নিয়ে নিজেদের জন্য ওআইসি নামের ‘ইসলামী জাতিসংঘ’ তৈরি করে নিয়েছে। এতসব করেও একটা ‘ইহুদী রাষ্ট্রে’ কেমন করে তাদের আপত্তি হতে পারে?
বাংলাদেশের মত প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রে কেবল মাত্র ৯০ ভাগ মুসলিম হবার কারণে এখানে সংবিধানে বিসমিল্লাহ, সরকারী ভবনে কলেমা, বিমানবন্দরের নাম আরবী হরফে লেখা হতে পারলে ইজরাইল কেন হিব্রুকে তাদের সরকারী ভাষা করতে পারবে না? না না, ইজরাইলের এই ইহুদীকরণকে সমর্থন করার আমার কোন যুক্তি থাকতে পারে না, আমি বলছি আপনি মুসলিম আপনার কোন অধিকার নেই ‘ইহুদী রাষ্ট্র’ বিরোধীতা করার! আগাগোড়া আপনি ধর্মের প্রশ্নে ভন্ড বলেই ধর্মরাষ্ট্রের বিপদের কথা চেপে রাখেন। নইলে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কেন শঙ্কা প্রকাশ করেন আরব মুসলিমরা সেখানে বর্ণবৈষমের শিকার হবে?
সেক্যুলারিজম মানুষের ধর্ম বর্ণ জাতি পরিচয় নির্বিশেষে সমান নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করে জেনেই মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলেই ধর্মরাষ্ট্রের দাবী তোলে। তখন তারা ইসলামী শাসনব্যবস্থার কথা বলে। যাতে অমুসলমানরা মুসলমানদের মত সরকার পরিচালনা করতে না পারে। কারণ ইসলাম শিক্ষা দেয় অমুসলিমরা কখনই মুসলমানদের শাসক হতে পারবে না। মুসলমানদের অধীনে শর্তসাপেক্ষে তারা জিন্মি হিসেবে বসবাস করার অনুমতি পাবে বড়জোড়। কিন্তু যখন মুসলমান সংখ্যালঘু থাকবে তখন সেক্যুলারিজম ও সমান অধিকার চাইবে। মক্কা থাকা পর্যন্ত নবী মুহাম্মদ যার যার ধর্ম তার তার বলেছিলো। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছিলো। কারণ তখন তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন সংখ্যালঘু। মদিনাতে দলভারী হবার পরই তিনি বলেছিলেন তলোয়ারের ছায়ার নিচে হলো মুসলমানদের বেহেস্ত! এই শিক্ষাটাই তাই যে কোন ধার্মীক মুসলমান তার ধর্ম থেকে পায়। পৃথিবীর একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্রটি সৌদি আরব ইরান দুবাই কাতার ইত্যাদি ইসলামী দেশগুলোর মত যদিও নয়। ইহুদী ইজরাইলে মুসলমান এমপি রয়েছে। এসব ঐসব ইসলামী দেশগুলোতে কোন সুযোগ নেই। ২০ ভাগ আরব অইহুদী ইজরাইলের নাগরিক যারা সেখানে সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করে থাকে। তবু ধর্ম পরিচয় ইজরাইলকে যে চরিত্র দিয়েছে বা সামনে আরো দিবে সেটা পৃথিবীর জন্য সুখকর হবে না। যেমন পৃথিবীর ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ নামের ভাইরাসগুলো পৃথিবীকে মুসলিম ও অমুসলিম দুইভাবে বিভক্ত করে রেছেছে। কিন্তু কোন অধিকার নেই ইহুদী রাষ্ট্রের বিরোধীতা করার যারা এই সমস্ত ইসলামী রাষ্ট্রের সমর্থক।