আশির দশকে ভারতে প্রথমবার #রামায়ণ এর মতো হিন্দু ধার্মিক সিরিয়াল দূরদর্শনে সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল আর নব্বইয়ের দশক আসতে আসতে #মহাভারত ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট টেলিভিশনে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছিল। যখন রবিবারে দুরদর্শনে রামায়ণ শুরু হত, দেশের অলিগলি জনশূন্য হয়ে যেত। নিজের আরাধ্যকে টিভিতে দেখার এমন ভক্তি উৎসাহ ছিল যে, রামায়ণ ধারাবাহিকে রামের চরিত্রে অভিনয়কারী অরুন গোবিল যদি সামনে এসে যেতেন তো ওনার পা ছোঁয়ার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যেত।
তখন সময়ে ধার্মিক ধারাবাহিকগুলো নব্বইয়ের দশকে হওয়া রাম জন্মভূমি আন্দোলনের পক্ষে পরিবেশ তৈরিতে প্রমুখ ভূমিকা পালন করেছিল, কিন্তু ধর্মকে আফিমের নেশা বলে আখ্যায়ক কম্যুনিস্টদের এটা সহ্য হচ্ছিল না। নব্বইয়ের দশকে কম্যুনিস্টরা এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করে যে এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এক সম্প্রদায়ের প্রভূত্বকে এডভান্টেজ দেওয়া দুরদর্শনের মত রাষ্ট্রীয় চ্যানেলে কিভাবে হতে পারে ? এতে নাকি হিন্দুত্ববাদী পরিবেশ তৈরি হয়, যা ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিপদ
এই কারনে তৎকালীন সরকার তখন সময়ে টিপু সুলতান আকবর দি গ্রেট আলিফ লায়লা আর খ্রিষ্টানদের জন্য “দয়া সাগর” এর মত ধারাবাহিকের সম্প্রচার দূরদর্শনের শুরু করতে হয়।
সত্তর দশকের শেষদিকে যখন মোরারাজী দেশাইয়ের সরকার ছিল আর লাল কৃষ্ণ আদবানী তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রতি বছর কেবিনেট মিনিষ্ট্রির এক মিটিং হত যেখানে বিরোধী দলও অংশগ্রহণ করত। একবার বৈঠকের শুরুতেই এক বরিষ্ঠ কংগ্রেসি নেতা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন ” এইযে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টায় আকাশবাণীতে যে ভক্তি সংগীত প্রচার করা হয়, তা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিপদজনক। এটা অবিলম্বে বন্ধ করা হউক।” বড়ই জটিল তথা বিচিত্র দাবী ছিল ওনার।
এর কিছু বছর পর বারানসির হিন্দু ইউনিভার্সিটির নাম থেকে ‘হিন্দু’ শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবিও উঠেছিল। দাবী উঠেছিল বিদ্যালয়গুলোতে রামায়ণ আর হিন্দু প্রতীক আর পরম্পরাও নষ্ট করার। সরস্বতী বন্দনা তো কংগ্রেসের শাসনকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মহারাণা প্রতাপের জায়গায় আকবরের ইতিহাস পড়ানো…. তা কংগ্রেস সরকারেরই দান। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের লগো ‘প্রদীপ’ এর বদলে ‘চাঁদ তারা’ রাখার প্রস্তাবও কংগ্রেসেরই ছিলো
ভারতীয় গনতন্ত্রে সেই প্রতিটি পরম্পরা বা প্রতীক যা হিন্দুত্বের প্রভূত্বকে দর্শাত, তা-ই সেকুলারবাদীদের মতে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিপদ। কোন সরকারী অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্বলন করারও বিরোধিতা এরা করে এসেছে। এদের মতে প্রদীপ প্রজ্বলন করে কোন কাজের উদ্বোধন করা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধ কাজ। ফিতা কেটে উদ্বোধন করলে নাকি দেশে একতা আসে।
এরা এটা ভূলে গেছে যে, এই দেশ অতীতেও হিন্দু রাষ্ট্র ছিল, আজও আছে আর ভবিষ্যতেও হিন্দু রাষ্ট্রই থাকবে। আজও ভারতের সংসদের মূখ্যদ্বারে “ধর্ম চক্র প্রবার্তায়” অংকিত আছে। রাজ্যসভার মূখ্যদ্বারে অংকিত আছে “সত্যং বদ – ধর্মম চরঃ”। ভারতীয় ন্যায়পালিকার ঘোষ বাক্য “ধর্মঃ রক্ষতি রক্ষিতঃ” আর সর্বোচ্চ বিচারালয়ের আধিকারিক বাক্য “যতো ধর্মঃ ততো জয়ঃ” অর্থাৎ যেখানে ধর্ম সেখানেই জয়। আজও দুরদর্শনের লোগো “আল্লাহ্ হু আকবর” বা “বিসমিল্লাহ্” নয় “সত্যম শিবম সুন্দরম”-ই আছে। এরা ভুলে গেছে যে, আজও দেশের সেনাবাহিনীতে বিমান, জাহাজ বা অস্ত্রশস্ত্রের উদ্বোধন নারিকেল ভেঙ্গেই করা হয়, বোম ফাটিয়ে নয়। এরা এটাও ভুলে গেছে যে, ভারতের আর্থিক রাজধানী স্থিত বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে আজও দীপাবলির দিনে লক্ষ্মী গণেশের পূজোই হয়। এই কম্যুনিস্টরা ভুলে গেছে যে রাজ্যগুলিতে কম্যুনিস্টের ৩৪-৩৫ বছর শাসন ছিল বা আছে সেই পশ্চিমবাংলা আর ত্রিপুরা সেখানে আজও ঘরে ঘরে মাঁ দূর্গার পূজো হয়। এরা ভূলে গেছে এই ধর্মনিরপেক্ষ দেশের রাজধানী দিল্লীর রামলীলা ময়দানে স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি ভগবান শ্রীরাম আর লক্ষ্মণের আরতি আরাধনা করেন। আর এই সব পরম্পরা এই ধর্মনিরপেক্ষ দেশে আজও পালিত হয়।
ধর্মকে আফিম বলে আখ্যায়িত করা এইযে কম্যুনিস্টরা “তোমরা ধর্ম জানো না কারন তোমরা নিজেরাই একেকটা “আফিম” আর এই সনাতন ধর্মের দেশে তোমাদের ভণ্ডামি আর বেশিদিন চলবে না।”