সাকিব আল হাসানকে নাকি ভারতের গণমাধ্যম হিন্দিতে প্রশ্ন করে কিছুতে মুখ থেকে হিন্দি বের করাতে পারেনি। সে কিছুতে হিন্দি বলবে না, যা বলার সে ইংরেজিতে বলবে। গভীর দেশপ্রেম? নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যেতো, কিন্তু…
আমি একটা তথ্য তুলে ধরি এদেশের মানুষের চরিত্র বুঝার জন্য। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ঢাকা স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো দর্শকে। খেলা চলছিলো পাকিস্তান জাতীয় দল বনাম কমনওয়েলথ একাদশের মধ্যে। সেদিন ঢাকার দর্শকরা কাদের সমর্থন জানাতে মাঠে গিয়েছিলো? যে জাতি মাত্র কয়েকদিন পরই স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করবে তাদের যদি সেই যুদ্ধের প্রতি নুন্যতম কোন সমর্থন থাকত তাহলে এরকম দৃশ্য কি ঘটা সম্ভব হতো? তাদের পক্ষে কেমন করে পাকিস্তান টিমকে সমর্থন জানাতে মাঠে যাওয়া সম্ভব? যদিও সেদিন ঢাকার দর্শকরা খেলা দেখা বাদ দিয়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছিলো যখন রেডিওতে শুনল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেছে।
বাংলাদেশী খেলোয়ারদের পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের প্রতি দুর্বলতা অনেক বেশি। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, রুবেল… প্রত্যেকেই মুসলমান হিসেবে পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের প্রতি অনেক বেশি নৈকট্য অনুভব করে। আমাদের দেশে হিন্দি, ভারত,- এই বিরোধীতাগুলি কখনই ধর্মনিরপেক্ষ থাকেনি। যে দেশের ক্রিকেটাররা তাদের টিমের লোগো টেপ মেরে ঢেকে রাখে হারাম মনে করে তাদের বাংলা প্রীতি সন্দেহজনক। সাকিবের ব্যক্তিগত ধর্মীয় চরিত্র এই সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ঐতিহ্য হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট থেকে মালমশলা নিয়েছে। ক্রিকেটাররা আমাদের সমাজ থেকেই উঠে আসে। যে দেশের মানুষ অন্ধ ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান বিষয়ে সাত খুন মাফ- তাদের মধ্য থেকেই ক্রিকেটার আসে। তাই মুশফিকুর রহিম একটা দলের টেস্ট ক্যাপ্টেন থাকার সময় কোন রকম শিষ্টতা ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারত খেলায় ভারতের পরাজয়ে বুনো উল্লাস তার ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করতে পেরেছিলো। ‘দাদাবাবুদের ধরায় দিবানে’ কতখানি ধর্মনিরপেক্ষ? ‘দাদাবাবু’ এরকম সম্বধন কারণ ভারতীয় ক্রিকেটারদের বেশির ভাগ হিন্দু বলেই তো।
আমাদের ক্রিকেটবোর্ড আইসিসির কাছে আবেদন জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশ সফরে বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা যখন মসজিদে নামাজ পড়তে যাবে তখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বোর্ড জানিয়েছে, বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা সবাই নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে তাই তাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। বোর্ড কিন্তু মুশফিকের লোগো বিকৃত করার বিষয়ে আজ অব্দি কোন শব্দ করেনি। কারণ বোর্ডে যারা বসে আছে তারাও মুমিন। লোগোটা যারা তখন অনুমোদন দিয়েছিলো তারা সম্ভবত এখনকার মত এতখানি ইসলামকে মাথায় রাখেনি। লোগো যদি এখন করা হতো নির্ঘাৎ এই লোগোতে বাঘের ছবি থাকত না। এমনকি বাঘ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সিম্বলও হতো না। এমন হতে পারে, ক্রিকেট বোর্ড নামাজে স্বার্থে, ফেরেস্তাদের আপত্তির কারণে লোগো চেঞ্জ করবে অচিরেই? অসম্ভব কিছু নয়। তবে যেদেশের খেলোয়াররা ধর্মীয়ভাবে এতখানি গোঁড়া তাদের বাংলাপ্রেম নিসন্দহে সন্দেহজনক! এদের কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলে উত্তর করে ‘আলহামদুরিল্লাহ’! কথায় কথায় যারা ‘ইনশাল্লাহ’ ‘মাশাল্লাহ’ ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ জাতীয় আরবী আওড়ায় তাদের হিন্দি বলতে না চাওয়াটা হিন্দির আধিপত্যবাদকে ঠেকিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা বলে মনে হয় না। এটি হচ্ছে পূ্র্ব পুরুষের ‘লড়তে লেঙ্গে পাকিস্তান’ জোশের বর্হিপ্রকাশ!
Susupto Pathok