“ভাষাতাত্বিক যুক্তি -আর্য্য/বৈদিক সভ্যতা ভারতভুমি থেকেই উদ্ভুত”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
আমাদের ভাবতে হবে, আমরা ঋক বেদ, রামায়ন,মহাভারত,পুরান এই সব বৈদিক সাহিত্য গ্রন্থে যা ইতিহাস আছে সেটাকে গ্রহন করবো না শুধু মুনি ঋষিদের কল্পনা প্রসুত মিথ্যা কথা বলে একদিকে সরিয়ে রাখবো ? বৈদিক সাহিত্যের সংগে পাশ্চাত্যে পরিচয় করান যে ভদ্রলোক তিনি হচ্ছেন ম্যাক্স মুলার। এই জার্মান পন্ডিত ,তার সীমিত সংষ্কৃত ভাষা জ্ঞান দিয়ে যা বুঝেছেন তাই বলেছেন। তার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা রেখেই বলা যায়, তিনি সত্য কি সেটা সঠিক বোঝেন নি।
ভাষাতত্ব বিদ না হয়েও যে কথাটি বলা যায় সেটি হলো, একটি ভাষা যেখান থেকে উদ্ভুত হয় সেই দেশ বা অঞ্চলে তার প্রচলন থেকেই যায়।বর্তমান পৃথিবীতে বেশ কিছু ভাষা আছে যার ব্যাবহার সেই অঞ্চলে প্রায় না থাকলেও উৎপত্তি কোথায় তা নিয়ে দ্বিমত নেই। ল্যাটিন, হিব্রু, রোমান, গ্রীক কোথায় উৎপত্তি তা কে না জানে ?
বৈদিক সাহিত্যের ভাষা ‘সংষ্কৃত’। বর্তমানে ভারতে তার প্রচলন খুব বেশী না থাকলেও পন্ডিতেরা কি বলবেন বৈদিক ভাষার উৎপত্তি পামীর পর্বত গ্রন্থীর ওপারে ক্যাস্পিয়ানের আশপাশে বা ভোলগা নদীর অববাহিকায়, ভারতবর্ষে নয় ? পন্ডিতেরা দাবী করেন আর্য্য জাতি ওখান থেকেই ভারতে প্রবেশ করে। প্রশ্ন এটাই, আসবার সময় কি তাদের জ্ঞাতি গোষ্টি সবাইকে নিয়ে চলে এসেছিলো না কিছু সমগোত্রীয় মানুষ জন সেই দেশ বা অঞ্চলে রয়ে গিয়ে ছিলো ?
পর্যবেক্ষন বা যুক্তি এটাই বলে যারা রয়ে যায় তারা তাদের ভাষা এবং জীবন শৈলী ধরেই রাখে, আর যারা অন্যত্র চলে যায় তাদের ভাষা, জীবন শৈলী পরিবর্তিত হয়ে যায়। রয়ে যায় সামান্য কিছু মিল। যেখান থেকে আর্য্যরা এসেছিলো বলে দাবী করা হয় সেই সব দেশের ভাষা কি সংষ্কৃত না সংষ্কৃতের সংগে কিছু মিলিঝুলি ভাষা ? লিথুয়ানিয়াতে গেলে দেখা যায় (লেখকের এক বিশেষ বন্ধু লিথুয়ানিয়ান) তাদের ভাষার সংগে বেশ কিছু মিল আছে সংষ্কৃতের। ইরানীদের ভাষা পারসী। সংষ্কৃতের সংগে বেশ মিল, যেমন মান+হুশ=মানুষ (বাংলা/সংষ্কৃত), আবার হুশ+মান=হুশমান (পারসী)
এটা কি করে হলো ? পন্ডিতেরা বলেন “ইন্দো-ইরানী ভাষা/জাতি, ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষা/জাতি। নৃতাত্বিক বা ভাষাতাত্বিক দিক দিয়ে ভাবলে এটাই সঠিক যে, বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টারা তাদের সভ্যতা, সংষ্কৃতি, ভাষা, জ্ঞান বাহক হিসাবে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পারস্য (ইরান), ককেশাস পেরিয়ে ককেশীয়ানদের কাছে (ইউরোপীয়ান)। কালে কালে সেই ভাষার সংমিশ্রন হয়েছে, সংষ্কৃতি সংমিশ্রিত এবং পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু, বৈদিক ভাষা সংষ্কৃত ভারতেই ছিলো । বিভিন্ন অঞ্চলে তার কিছু পরিবর্তন হয়েছে এবং প্রায় ১৬ টি আঞ্চলিক ভাষায় রুপান্তরিত হয়েছে। সংষ্কৃত জ্ঞান ভান্ডার, পুথি, গুরুকুল, ঋষিদের আশ্রম, বিশ্ববিদ্যালয় , মঠ মন্দির কেন্দ্রিক বৈদিক সাধনা কেন্দ্র গুলি আরবী, তুর্কি বর্বরদের দ্বারা ধংস হয়ে গিয়ে সেই সংষ্কৃত আজ নিজ দেশেই অপাংতেয় হয়ে লুপ্ত হবার পথে এসে দাড়িয়েছে। বৈদিক আর্য্য এবং বৈদিক/ সাংষ্কৃতিক আর্য্যরা আজ নিজ ভুমেই উচ্ছ্বন্নে চলে যাচ্ছে।