সারা পৃথিবীতে বাঙালির সংখ্যা ২৯ কোটি। তারমধ্যে হিন্দু বাঙালির সংখ্যা ৯ কোটি।অর্থাৎ ৩১%। অথচ মাত্র একশো বছর আগেও হিন্দু বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এমনকি ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ও হিন্দু বাঙালি ছিল ৪৬%।
বিভাগোত্তর ৭২ বছরে হিন্দু-বাঙালি সংখ্যায় কমেছে ১৫%। দেশ ভাগের সময় পশ্চিম বঙ্গে হিন্দু ছিল ৮৩% ; এখন সেখানে হিন্দু ৬৬% । পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমার অনেক কারণ আছে। কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে এত হিন্দু পশ্চিম বঙ্গে গেল ; তা সত্ত্বেও সেখানে হিন্দু জনসংখ্যা হার এত ভয়ানক ভাবে হ্রাস পেল কেন ? পরবর্তী ৩০ বছর পরে কি হবে ? এসব নিয়ে কোন হিন্দু গবেষণা করছে না। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে, হিন্দুদের কেবল ধর্মশাস্ত্র নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য সংকট নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা-গবেষণা করতে হবে। অতীতের ভুলসমূহ থেকে শিক্ষা নিয়ে, জাতিকে কিভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায় ― সেটাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
মুসলিম লীগের সেই ডাইরেক্ট আ্যাকশনের বিশিষ্ট নেতা, জ্যোতি বসুকে নিয়ে, হিন্দুদের আবেগের শেষ নেই। কমিউনিষ্ট ভদ্রলোক বর্ণহিন্দুরা, জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে পাকিস্তান আন্দোলনের দাবিতে ধুতিকে লুঙ্গি বানিয়ে বহুত নাচ-গান করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ, এই কমিউনিষ্ট বর্ণহিন্দু গুলোর পশ্চাৎ দেশে এমন লাথি মেরেছে, এই বজ্জাত গুলোর নিম্নাঙ্গে কোন বস্ত্র ছিল না। এই বেইমান গুলো পশ্চিম বঙ্গে এসে সেক্যুলারিজম প্রচার শুরু করলো।
ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় এত বিশাল সংখ্যক রিফিউজির বোঝা নিয়েও, পশ্চিম বঙ্গকে ভারতের এক নম্বর রাজ্যে পরিনত করেছিলেন। কিন্তু কমিউনিষ্ট বেইমানরা পরিকল্পিত শ্রমিক আন্দোলন করে,কল-কারখানা সব ধ্বংস করে দিল। লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে গেল। বিশাল সংখ্যক হিন্দু যুবক-যুবতীর বিয়েই হলো না। যারাও বা বিয়ে করলো, তারা একটি বা সর্বোচ্চ দুটির বেশি বাচ্চা নিতে পারলো না। কমিউনিষ্ট বেইমানরা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় এলো। জ্যোতি বসুরা ক্ষমতায় এসে প্রথমে ইংরেজি শিক্ষা বন্ধ করে দিলো, তারপর বন্ধ করলো কম্পিউটার শিক্ষা। কমিউনিষ্টরা বললো, বাঙালি ছেলে মেয়েরা ইংরেজি ও কম্পিউটার শিখে, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে চাকরি পাচ্ছে, আমরা দলের জন্য কমরেড (সার্বক্ষণিক কর্মী) পাই না। সৃষ্টি হলো বিরাট সংখ্যক শিক্ষিত বেকার। এদের অনেকে বিয়ে করতে পারলো না ; অনেকে অধিক বয়সে বিয়ে করলো ঠিকই, কিন্তু সন্তান হলো না। পশ্চিম বঙ্গে হিন্দু জনসংখ্যা হার কি এমনি এমনি কমেছে ! হিন্দুরা বাবু মানুষ ; এরা সৌখিন ; পেটে ভাত নেই ; শরীর দুর্বল ; পরিশ্রমের কাজ করবে কিভাবে ! সুযোগ নিলো, প্রতিবেশী সম্প্রদায়। পশ্চিম বঙ্গের শ্রমঘন পেশা সমূহ একচেটিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দখলে চলে গেল। তাদের আয় রোজগার ভালো। ৮/১০ টা করে বাচ্চা। হিন্দু মেয়েদের বিয়ে হয় না ; উপযুক্ত পাত্র যদিও বা পাওয়া যায়, জাতপাতের কারনে সম্বন্ধ ফিরে যায়। আইবুড়ো হিন্দু মেয়েদের দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে গণ্ডায় গণ্ডায় সন্তান উপহার দিতে লাগলো প্রতিবেশী সম্প্রদায়। মাত্র তিন দশকের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গের জনবিন্যিস আমূল বদলে গেল।
হিন্দু নারীদের গর্ভে বিধর্মীর ঔরসে যে ভাগিনেয় সম্প্রদায় জন্মগ্রহণ করেছে, তারা মাতুল হিন্দু জাতিকে কংস মামার মতো ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। এই বিধ্বংসী ভাগিনেয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে একজন ব্রাহ্মণ পদবীধারী ভদ্রমহিলা। এই কুচক্রী মহলের বহুমুখী যড়যন্ত্র সহজ-সরল হিন্দুরা বুঝে উঠতে পারছে না। পশ্চিম বঙ্গে টাটা কোম্পানি কারখানা নির্মাণ করলো। ঐ কুচক্রী মহল প্রমাদ গুনলো। টাটা সফল হলে, পশ্চিম বঙ্গে অন্যান্য কোম্পানি এসে আরো কল-কারখানা করবে। হিন্দুরা যুবক-যুব মহিলারা তুলনামূলক অনেক শিক্ষিত, তাদের কর্ম সংস্থান হবে – তারা অধিক সংখ্যক সন্তান জন্ম দেবে – হিন্দুর সংখ্যা বাড়বে। কুচক্রী মহল প্রতিবেশী সম্প্রদায়কে বুঝলো, তোমরা ঐ টাটার কারখানায় কাজ পাবে না ; কাজ পাবে তোমাদের শত্রুরা। শত্রুরা কাজ পেলে তাদের শক্তি বাড়বে – তোমাদের দাপট কমে যাবে। কাজেই তোমাদের প্রধান কর্তব্য ঐ কারখানা ভাঙা। ঐ কারখানা যদি তোমরা না ভাঙো, তাহলে এরকম আরো অনেক কারখানা তৈরি হবে, তোমাদের শত্রুদের শক্তি দিনকে দিন বাড়তে থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিবেশী সম্প্রদায় টাটা কোম্পানির কারখানা ভাঙলো। এরপর আর ভারতের কোন কোম্পানি, পশ্চিম বঙ্গে কারখানা করার কথা মুখে আনতেও সাহস পায় নি। ইন্দোনেশিয়ার এক কোম্পানির মালিক এসে কোলকাতায় হোটেলে উঠেছিলেন ; সংবাদ পাওয়া মাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাগিনেয় সম্প্রদায়কে নিয়ে তাকে এমন ধাওয়া দিলেন, আর কোন বিদেশি বিনিয়োগকারী পশ্চিম বঙ্গে আসে না। বিনিয়োগ না হওয়ায় – কল কারখানা স্থাপিত না হওয়ায় পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়।
পশ্চিম বঙ্গে শুরু হয়েছে নতুন ষড়যন্ত্র। বর্ণহিন্দু পদবীধারী কিছু বেজন্মা, প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের সাথে মিলে আন্দোলন করছে – অবাঙালি হিন্দুদের পশ্চিম বঙ্গ থেকে তাড়াতে হবে। ১০% অবাঙালি হিন্দুদের যদি পশ্চিম বঙ্গ থেকে তাড়ানো হয়, তাহলে সেখানে হিন্দু সংখ্যা ৬৬% থেকে ৫৬% – এ নেমে আসবে। ষড়যন্ত্রকারীদের পরবর্তী লক্ষ্য মায়ানমারের রোহিঙ্গা, ইরাক – সিরিয়া – ইয়ামেন প্রভৃতি দেশের উদ্বাস্তুদের পশ্চিম বাংলায় ঢুকিয়ে, জন-বিন্যাস এমন ভাবে বদলে দেওয়া – যাতে হিন্দুর সংখ্যা ৫০% – এর নিচে নেমে আসে। কুচক্রীরা বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দানের বিরোধিতা করছে, কারণ বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের রাষ্ট্রহীন করতে পারলেও, পশ্চিম বঙ্গ হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে। পশ্চিম বঙ্গে যদি হিন্দু জনসংখ্যা ৫০% – এর নিচে নেমে আসে, তাহলে হিন্দুরা কাশ্মীরের মতো পলানোর পথ পাবে না ; কোথাও আশ্রয় পাবে না। আজ তৃণমূলের ভাগিনেয় সম্প্রদায় অত্যন্ত মিষ্টি ভাষায় ‘যত মত তত পথ’ – তত্ত্ব প্রচার করছে ; পশ্চিম বঙ্গে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে গেলে,কাশ্মীরের মতো একটাই আওয়াজ উঠবে, ‘হিন্দু তাড়িয়ে পাকিস্তানের সাথে সংযুক্তি চাই।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের আগাম ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের আগাম ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন।
Credit: Debashis Mukherjee