বাঁশের কেল্লায় ছড়ানো হচ্ছে, NTJ বা ন্যাশনাল তওহীদ জামাত শ্রীলংকায় একটা পটকা ফুটানোর ক্ষমতা রাখে না। শ্রীলংকার চার্চে হামলা চালিয়েছে আসলে বৌদ্ধ উগ্রপন্থিরা। যে কোন ইসলামিক সন্ত্রাসী ঘটনার পর মুসলমানরা যখন থমমত বিব্রত তখন তাদের মুখের ভাষা জুগিয়ে দেয় বাঁশের কেল্লা, পিনাকী, সলিমুল্লাহ খান আর হিন্দু কমিউনিস্ট লিবারালরা…। বাঁশের কেল্লা জামাত শিবিরের ফেইসবুক পেইজ। জামাত ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন কাজেই তাদের এখন ঈমানী দায়িত্ব হয়ে পড়েছে মুসলিমদের দোষ গোপন করা। কিন্তু হিন্দু কমিউনিস্টদের কি দায় ইসলামিক সন্ত্রাসীদের দোষ গোপন করার?
আশ্চর্য হয়ে দেখলাম ভারতের সিপিআই-এমএলের সর্বভারতীয় মহিলা শাখার প্রধান কবিতা কৃষ্ণান টুইটারে পোস্ট করেছেন, শ্রীলংকার গির্জায় হামলার জন্য দায়ী আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা। ক্রাইস্টচার্চেও সাদা খ্রিস্টানরা দায়ী ছিলো। ন্যাশনাল তওহীদ জামাতের দুইজন সদস্য এই হামলার জন্য দোষী এটা ছড়িয়ে পড়ার পরও শ্রীলংকায় হামলার জন্য বৌদ্ধরা, ভারতীয় র’ এবং মোসাদের হাত আছে- এই দাবী থেকে সরে আসছে না ‘ইসলামের বন্ধুরা’। কাস্মিরে হামলার পরও দেখেছি এটা নরেন্দ্র মোদী ঘটিয়েছে বলে সরব বাম ও লিবারালরা। জইশ-ই মুহাম্মদ দায় স্বীকার ও হামলাকারী একজন মুসলিম কাস্মিরী প্রমাণিত হবার পরও ভোটের আগে আগে কেন কাস্মিরে হামলা চালিয়ে মোদীকে সুবিধা করে দেয়া হলো সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো। নি:সন্দেহে এই ঘটনা মোদীকে সুবিধা করে দিতে পারে ভোটের হাওয়ায়, কিন্তু জইশ-ই মুহাম্মদ বা কাস্মিরের ইসলামিক চরমপন্থি দলগুলো কি মোদী বা বিজেপির বেনামি সংগঠন?
আরবী নামের মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ডের কমিউনিস্টদের ইসলামিস্টদের প্রতি তাদের গোপন সহানুভূতিটা বুঝা কঠিন কিছু নয়। এমনকি তাদের মুসলিম জাতীয়তাবাদী হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ‘আহমদ ছফা বিক্রেতা’ সলিমুল্লাহ খান শুরু থেকে শ্রীলংকার ঘটনায় সেখানকার বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের উত্থানকে সামনে এনেছেন। তারপর আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব বিস্তার করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মত দিয়েছেন। পুরো বিশ্লেষণে ন্যাশনাল তৌহীদ জামাতের কোন সম্পর্ক নাই। হামলাকারী জাহরান হাশিমের বহু বক্তব্য অনলাইনে পাওয়া যায় যেখানে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কোন মুসলমান জাতীয় সংগীতের সামনে মাথা নত করতে পারে না। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইহুদীদের বেঁচে থাকার অধিকার থাকলেও শাসন করার অধিকার কেবল মুসলমানদের…। এই ইসলামিক জিহাদী শ্রীলংকায় গির্জায় বোমা হামলায় পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হবার পরও কিছুতে এই ঘটনায় ইসলামের কোন হাত খুঁজে পাবে না ‘ইসলামের বন্ধুরা’।
আহমদ ছফাকে বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখক মনে করা হয়। তিনি নিজে মনে করতেন বাংলাদেশের কোন ‘ইসলামিক মৌলবাদী’ নেই! বাংলাদেশে যেটা আছে সেটা হচ্ছে মধ্যযুগীয়তা যার সঙ্গে আসলে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তবে তিনি মনে করতেন ভারতে ‘হিন্দু মৌলবাদে’ গিজগিজ করছে এবং সেখানকার রাজনীতিতে তারাই ভূমিকা রাখছে। অথচ আহমদ শরীফকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করে বাংলাদেশের মোল্লারা তার মাথার দাম ঘোষণা করেছিলো সেসময়ই। কোলকাতার কিছু সাংবাদিক আহমদ ছফার ইন্টারভিউ নিতে আসলে ছফাকে তারা জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বা মৌলবাদী বাধা কি এখানে আছে?’ ছফার সাফ জবাব ছিলো, ‘না সেরকম আমি কিছু মনে করি না’। স্বাধীন চিন্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন বাধা আছে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে ছফা বলেন, ‘মৌলবাদের যে উপাদান সেটা বাংলাদেশের সোসাইটিতে নেই। বাংলাদেশে পাঁচজন লোক খুঁজে পাবেন না, যে আরবি জানেন। পাঁচজন লোক পাবেন না, যে সংস্কৃত জানেন। কিন্তু আপনাদের দেশে তা ভুরিভুরি পাবেন। মৌলবাদ প্রথম জন্মায় ধর্মগ্রন্থ থেকে। বাংলাদেশে তার কোন অবস্থান নেই। এখানে যা আছে তা মধ্যযুগীয়তা। মধ্যযুগীয়তা আর মৌলবাদকে এক করে দেখা ঠিক হবে না। ভারতবর্ষে মৌলবাদ জন্মাচ্ছে সরাসরি ধর্মগ্রন্থ থেকে। যেমন, রাম মন্দির, রাম মন্দির ছিল কিনা ঐতিহাসিকরা কোন কথা বলতে পারছেন না।‘ (স্বাধীন বাংলা সাময়িকী, কলকাতা বইমেলা ’৯৯ সংখ্যা)।
ছফার মত লেখক ভারতের ‘হিন্দুদের কাছে’ কি নিজেদের মৌলবাদকে ঢেকে রাখতে চেষ্টা করেননি? ২০০১ সালে মারা যাবার আগে কি তিনি বাংলাদেশের সমাজে ইসলামিক মৌলবাদীদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেননি? ছফা ভারতে হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ থেকে মৌলবাদ জন্মাতে দেখছেন কিন্তু তিনি কুরআন থেকে মৌলবাদ জন্মাতে দেখেননি! কি যুক্তি আরবী না জানলে কেউ মৌলবাদী হতে পারবে না! ছফার একনিষ্ঠ শিষ্য সলিমুল্লাহ খান মুসলিম জাতীয়তাবাদী। শিষ্য গুরুর মধ্যে নিজেকে দেখেছিলেন বলেই না তার শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন। যে কোন ইসলামিক হামলার পর খুব ভারিক্কি চালে আমাদের যারা অর্থনীতি, পৃথিবীর শ্রেণী সংগ্রাম, চমেস্কি-দেরিদারদের অমুক বই তমুক বিতর্ক শিখে আসতে ছবক দেন তাদেরই দেখি নিউজিল্যান্ড হমলার পর লুঙ্গি খুলে সাদা খ্রিস্টানদের ধুয়ে দিচ্ছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদের পিছনে মুসলিম শাসনের কোন প্রভাব তত্ত্ব নিয়ে তো দেখি না কেউ হাজির হয়েছে। আরবী নামের কোন কমিউনিস্টকে আমি বিশ্বাস করি না। যখন তারা ফুল হাতে নিয়ে আসে তখনো না। কারণ তাদের গোপন মুসলিম জাতীয়তাবাদ কাজ করে কিনা আমার জানা থাকে না। কিন্তু অমুসলিম লিবারাল-অসাম্প্রদায়িকদের ‘ইসলাম তোষণ’ হেতু কি? কবিতা কৃষ্ণাণের মত বামপন্থিদের মুসলিম সন্ত্রাসীদের আড়াল করতে চাওয়া পিছনের কাহিনী কি?