নেতাজী — দ্য রিয়্যাল ফাদার অফ দ্য ন্যাশন (জাতীর প্রকৃত জনক)
(পর্ব – 1)
———————————————————————-
আমাদের প্রাণের মানুষ নেতাজী —– নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস। তাঁকে নিয়েই আজ লিখতে বসেছি। জানি খুব কঠিন কাজ। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ওনার মত ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা বিশাল বড় চ্যালেন্জ। চেষ্টা করব তথ্য ও’ প্রমানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করার। ত্রুটি মার্জনা করবেন ও’ সংশোধন করে দেবেন —- এই আশায় রইলাম।
নেতাজীর জন্ম – কৈশোর – শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছি না। আপনারা সবাই জানেন। তাঁর কর্ম ও’ রাজনৈতিক জীবন থেকে শুরু করছি। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজী হলেন এক বর্ণময় ব্যক্তিত্ব। 1921 সালে সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে যোগ দিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। গুরু হিসাবে পেলেন — দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে। ওনার হাতেই নেতাজীর স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতে খড়ি। স্বামী বিবেকানন্দের মানস পুত্র তিনি। নিয়ম করে ধ্যান করতেন। এক জায়গায় তিনি বলেছিলেন —- “আজ যদি স্বামী বিবেকানন্দ জীবিত থাকতেন, তাহলে ওনার কাছেই দীক্ষা নিতাম “।
দেশবন্ধুর অধীনে চলতে থাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের পাঠ। অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। পরে দেশবন্ধুর স্বর্গাবাসের পর কলকাতার মেয়র হন নেতাজী। 1925 এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য তাঁর কারাবাস হয়। মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয় তাঁকে। এখানে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। প্রায় 20 বছরে 12 বার গ্রেফতার হয়েছেন নেতাজী। জনপ্রিয়তা মধ্য গগনে। ইংরেজদের নজরে চক্ষুশূল তিনি। তাঁকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন কারাবাসে রাখা হয়। 1930 সালে তাঁকে নির্বাসিত করা হয় ইউরোপে। 1931 এ পিতার মৃত্যু ও’ তাঁর সৎকারের জন্য তাঁকে কিছুক্ষনের জন্য কলকাতায় আসার অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে জনপ্রিয়তায় গান্ধীকে ছাপিয়ে গেছেন তিনি। পরপর দুবার (1938, 1939) জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। প্রমাদ গুনল গান্ধী! নেতাজী থাকলে তাকে কেউ তেল লাগাবে না। শুরু হল রাজনীতি — নোংরা রাজনীতি। ট্রাম কার্ড খেলল গান্ধী। প্যারালাল তৈরী করল নেহেরু ও’ জিন্না। সভাপতি নেতাজীকে সাইড লাইন করার জন্য শুরু হল সব রকমের অসহযোগ! 1939 এ জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নেতাজী। তৈরী করলেন “অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক”।
1939 এ শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। বিচক্ষণ নেতাজী বুঝলেন — লোহা গরম, এখনই চোট মারতে হবে। ইংরেজ বিশ্ব জুড়ে চাপে আছে। এখনই ফায়দা ওঠাতে হবে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এক সামরিক বাহিনী গঠন করার উদ্যোগ নিলেন। দেশ ত্যাগ করলেন মহামানব। ব্রতী হলেন বৃহত কর্মক্ষেত্রের জন্য। আফগানিস্তান, রাশিয়া হয়ে জার্মান পৌঁছলেন তিনি। বার্লিনে মুক্ত ভারতীয় গড়ে তোলেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতার জন্য হিটলারের কাছে সাহায্য চান তিনি। কিন্তু হিটলারের উদাসীনতায় মনোবল ভেঙ্গে যায়। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র নন নেতাজী। 1943 এ জার্মান ত্যাগ করেন। জার্মান সাবমেরিনের সাহায্যে জাপান পৌঁছান তিনি।
জাপানে জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বোস “ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি” গঠন করেছিলেন। 1943 এ সেনাবাহিনীর কম্যান্ড নেতাজীকে দেন রাসবিহারী বোস। নারী বাহিনী (রানী লক্ষ্মীবাঈ কম্ব্যাট) সমেত প্রায় 85,000 সেনা ছিল এতে! এই বাহিনীর কতৃত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে —- “মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার”। অক্ষ শক্তির 9 টি দেশ একে স্বীকৃতি দেন। পরে এরই নাম হয় — ” আজাদ হিন্দ ফৌজ “—। এই বাহিনীর লক্ষ্য ছিল ভারত থেকে ইংরেজ উচ্ছেদ করা। ডাক দিলেন —– “দিল্লি চলো” —-! এই আহ্বানে বেশ ভাল রকম শোরগোল পরে যায়। 1943 এর 21 শে অক্টোবর নেতাজী পূর্ব এশিয়ার সমবেত প্রতিনিধিদের সমক্ষে স্বাধীন ভারত সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহন করেন। 23 শে অক্টোবর ব্রিটেন ও’ আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন।
আজাদ হিন্দ ফৌজ ও জাপানি সেনা মিলিতভাবে ভারত অভিযান করবে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে জাপানী সেনাপতি টেরাউটির আপত্তির জন্য মিলিত বাহিনীর ভারত অভিযান সম্ভব হয় নি। টেরাউটির বক্তব্য ছিল ভারতীয়রা জাপানীদের মত কষ্ট সহিষ্ণু নয়। তাই জাপানী সেনা ভারত আক্রমনে যাবে —- ভারতীয় বাহিনী সিঙ্গাপুরে থাকবে। বিচক্ষণ নেতাজী তা মেনে নেন নি। শেষে ঠিক হয় একটি ভারতীয় রেজিমেন্ট জাপানী সৈন্যদের সঙ্গে মিলিতভাবে যুদ্ধ করবে —– যদি যুদ্ধক্ষেত্রে জাপানীদের সমকক্ষ হয়। গান্ধী, আজাদ ও’ নেহেরু থেকে বাছাই করা সৈন্যদের নিয়ে
” সুভাষ ব্রিগেড” গঠিত হয়।
1944 সালে জানুয়ারিতে “সুভাষ ব্রিগেড” রেঙ্গুনে পৌঁছায়। সিদ্ধান্ত জাপান – ভারত মিলিতভাবে যুদ্ধ করবে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ভারতীয়রা স্বতন্ত্র ভাবে যুদ্ধ করতে পারবে। যুদ্ধ পরিচালিত হবে কালান ও’ হাকা কেন্দ্র থেকে। গেম প্লান হিসাবে “সুভাষ ব্রিগেডকে ” তিনটি ব্যাটেলিয়ানে ভাগ করা হয়। প্রথম দলটি কালদান নদীর উভয় তীর দিয়ে অগ্রসর হয়। পলেতোয়া ও’ দলেৎমে অধিকার করে। 64 কিলোমিটার ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়ে। দখল করে নেয় ব্রিটিশ ঘাঁটি — ম’উডক। দুর্ভাগ্য বশত এখানে খাদ্য ও’ অস্ত্র সরবরাহে প্রতিকুল অবস্থা দেখা দেয়। বাধ সাধে জাপানী সেনা। কিন্তু ভারতীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্যাপ্টেন সুরযমলের অধীনে এক প্লাটুন জাপানী সেনা রেখে যান। এদিকে ইম্ফলের পতন হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় “সুভাষ ব্রিগেডের” বাকী দুটি দল কোহিমায় অবস্থান নেবে। এখান থেকে ব্রহ্মপুত্র পার বা়লায় প্রবেশ করা সহজ হবে ষষষ। গান্ধী ও আজাদ ব্রিগেড দুটিও ইম্ফলের দিকে অগ্রসর হয়। 21 শে মার্চ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেন —- ব্রিটিশ মুক্ত ভারতীয় অঞ্চলে নেতাজীর নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে। অনেক বাধা – বিঘ্ন, অস্ত্র – শস্ত্র ও খাদ্যের অভাবেও আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতবর্ষের 241 কিমি দখল করে নেন।
এই ঘোষনার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলে আমেরিকা ও’ ব্রিটিশ। জাপান আক্রমনের উদ্যোগ নেয়। তার ফলে জাপানীর জাপানী সৈন্যের সিদ্ধান্ত বদল হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজ এক সময় আত্ম সমর্পন করতে বাধ্য হয়। তবুও আজাদ হিন্দ ফৌজ — তথা নেতাজীর এই বৃহত প্রচেষ্টা ব্রিটিশ সরকারকে হেলিয়ে দেয়। ব্রিটিশ বুঝে নেয় নেতাজীর জন্যই তাদের রাজপাট ভারতবর্ষে আর বেশীদিন সুরক্ষিত নয়!
এবার আমার প্রশ্ন ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে মুখ্য ভূমিকা কার —- নেতাজী না গান্ধীর! ভারতের স্বাধীনতার দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমন্ট এটলি। 1956 এ তিনি ভারতে এসেছিলেন। তৎকালীন পশ্চিম বঙ্গের গভর্নর মিঃ পি বি চক্রবর্তীর সঙ্গে গেস্ট হাউসে রাত কাটান। মিঃ চক্রবর্তী প্রশ্ন করেছিলেন মিঃ ক্লেমন্ট এটলিকে — “কি কারণে আপনারা এত দ্রুত ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন “? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন — “নেতাজীর সামরিক কর্মকান্ডের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও’ নৌ বাহিনীর মধ্যে ব্রিটিশ রাজের প্রতি বিদ্রোহ দানা বাঁধছে। তারা আর অনুগত থাকছে না”।
মিঃ চক্রবর্তী :- “গান্ধীর অহিংসা আন্দোলনের ভূমিকা কতটুকু”? মিঃ এটলি :- ” মি – নি – মা – ল (সা – মা – ন্য)। সুতরাং ইংরেজ নিজে স্বীকার করছে গান্ধী নয় — নেতাজীই প্রধান কান্ডারীই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনে। বড় দুর্ভাগ্য আমাদের ওই গান্ধীকেই আমরা জাতির জনক বানিয়ে দিয়েছি। জাতির আসল জনক কেবল ও কেবলমাত্র নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস —- আর কেউ নয়।
গর্জে ওঠ বাঙ্গালী! নেতাজীকে যদি সত্যিই শ্রদ্ধা কর তবে ওনাকে প্রকৃত জাতির জনক সম্মান দেওয়ার জন্য আন্দোলন কর। আর এটাই হবে আমাদের প্রাণের নেতাজীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলী।
# চলবে —