বেশির ভাগ হিন্দু শান্তি প্রিয় হতে পারে কিন্তু অসাম্প্রদায়িক নয়। যারা অক্ষরে অক্ষরে ধর্মীয় বিধি-বিধানকে মান্য করে চলে তারা গোড়া ধার্মীক। এদের কাছে বাকীরা স্রেফ মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ…। স্বধর্মীয়রা ব্রাহ্মণ, কায়স্ত্র, নমশুদ্র, চাড়াল এরকম বিভেদের দেয়াল… তাদের কাছে মানুষের কোন সংজ্ঞাই নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম থেকে দলবেধে লোকজনকে তাড়াতে ভালোবাসে। কেউ শাস্ত্র লঙ্ঘন করলে প্রাশ্চিত্ত না করলে এখনো গ্রামগঞ্জে হিন্দুদের একঘরে করা হয়। মুসলমানরা যেমন যে কোন প্রকারেই নিজের ধর্মের লোক ধরে রাখে, প্রয়োজনে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যেমন ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদ হয়ে যায় আর মুরতাদকে হত্যা করা জায়েজ। অপরদিকে হিন্দু পান্ডারা কোন হিন্দুকে তাড়িয়ে দিতে পারলে ধর্মনিষ্টতার স্বাদ অনুভব করে। খুলনার খান জাহান আলীর চাকর ছিলো আবু তাহের। সে ছিলো হিন্দু। খানজাহান আলী তাকে ব্লাকমেইল করে তার কথিত হিন্দুত্ব নষ্ট করার কথা প্রচার করলে ব্রাহ্মণরা তার গোটা পরিবারকে একঘরে দেয়। উপায়ন্ত না দেখে আবু তাহের ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যায়। খানজাহান আলী তাকে প্রচুর ক্ষমতা দিয়ে জাইগির নিয়োগ করেন। এই নওমুসলিম আবু তাহের পরবর্তীকালে একজন নিষ্ঠুর হিন্দু বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতি পান। বুঝাই যাচ্ছে আবু তাহের আসলে তার সাবেক সাম্প্রদায়ের উপর প্রতিশোধ নিয়েছিলো তার প্রতি অবিচার করার…।
হিন্দুদের জঘন্য জাতপাত এই একুশ শতকে এসেও এতটুকু কমেনি। বরং জাতপাত নিয়ে তাদের আছে চরম গর্ব। হিন্দুরা এখনো বিয়ে করতে স্বজাত, গোত্র মিলিয়ে পাজি দেখে শুভ দিন বাছাই করে বিয়ে করতে যায়। যারা এখনো স্বধর্মীয়দের মধ্যেই এতখানি কট্টর তারা ভিন্ন সম্প্রদায়কে কি চোখে দেখতে পারে অনুমান করা যায়। ভিন্ন সম্প্রদায়ের কথা বাদই দিলাম, কায়স্ত্র হোক আর বৈশ্য কিংবা শুদ্র- সব তো হিন্দু্ই- তাহলে এত বিভেদের প্রাচীর কেন? এই বিভেদের প্রাচীর মান্য করে নিজেকে কেমন করে অসাম্প্রদায়িক শান্তিবাদী বলে দাবী করবে? মানুষে মানুষে বিভেদ বিজায় থাকলে সংঘাত তো অবধারিত। ভারতে দলিত হিন্দুদের উপর যে নিপীড়ন তা তো পুরোটাই ধর্মীয় উৎস থেকে এসেছে।
একজন মুসলমান ব্যক্তি (প্রক্টিক্যাল ধার্মীক) কখনই অসাম্প্রদায়িক হতে পারে না কারণ তাকে কুরআন-হাদিসকে বিনা শর্তে বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে হয়। কুরআনে সুরা মায়দায় বলা হয়েছে, ‘আপনি অবশ্যই ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবেন’ (সুরা মায়দা, আয়াত-৮২)। এরকম আয়াত কুরআনে লেখা থাকবে যতদিন কুরআন পৃথিবীতে টিকে থাকবে। আর বিশ্বাসী মুসলমান এইসব আয়াত শুনে কেমন করে অমুসলমানদের ভালো চোখে দেখবে? এইভাবে যে হিন্দু ধর্ম কথা জেনে বিশ্বাস করে ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য এবং পদ থেকে শুদ্র বর্ণের উৎপত্তি সে কি করে তথাকথিত ‘ছোট জাতের’ শুদ্র হিন্দুকে নিজের সমকক্ষ মনে করবে?
হিন্দুরা এখন দলে দলে এসে মুমিনদের মত কি গলা ফাটাবেন এসব সহি হিন্দু ধর্মে নেই! কিংবা এসব এখন হিন্দুরা মানে না আমি হুদাই এসব লিখে আধুনিকমনস্ক হিন্দুদের আঘাত করছি…! মুমিনদের এই কাজকারবার কিন্তু তাদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে টেনে এনেছে। সংস্কার আর আত্মসমালোচনাই একটি জাতি সম্প্রদায় এবং সভ্যতাকে উন্নত করে। অপরাধ গোপন করে নয়…।