“বাঙ্গালী হিন্দুরা আর কবে শিখবে?”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
মানুষ শেখে চার ভাবে। দেখে ,শুনে, ঠেকে আর ‘আপ্ত্য জ্ঞানে’ (Intuitive Knowledge).
আপ্ত্য জ্ঞানের যুগ শেষ হয়ে গেছে বহু দিন—মুনি ঋষিরা সেই আপ্ত্য জ্ঞানের দ্বারাই সব জ্ঞান লাভ করেছিলেন।তার জন্য সাধনা করতে হয়।সাধনার যুগ শেষ।
দেখে শেখা, শুনে শেখা এবং ঠেকে শেখা এমন একটি বিষয় যে আজ যা ঘটলো কাল তা অতীত। অতীতের বিষয় কে বলে ‘ইতিহাস’। পড়া শুনা করে, নানা গুনীজনের থেকে শুনে, নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যাপার গুলোকে বিচার করে দেখা থেকে যে শিক্ষা লাভ করা যায়, সেই শেখাকে বলে অভিজ্ঞতার দ্বারা শেখা।
কিন্তু, সব মানুষের বুদ্ধির দৌড় সমান নয়। তিক্ত অভিজ্ঞতাও আমরা বেমালুম ভুলে যাই, আমাদের লোভ, লালষা, অন্যের দ্বারা মগজ ধোলাই এবং পরিস্থিতি, আমাদের জীবনের সব তিক্ততাকে “সামান্য বিষয়” বা “একবার হয়েছে আর কেনো হবে” এই রকম অবিমৃষ্যকারি ভাবনা ভেবে আমরা বিপদ গ্রস্থ হই। ভুলে যাই, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই স্বাভাবিক নিয়ম।
মুশকিল হলো, ভারতের হিন্দুরা ইতিহাস লেখে না, পড়ে না। পুরানো দিনের ঘটনা গুলোকে বেশীর ভাগ ধর্মের মোড়কে মুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন রামায়ন, মহাভারত, ১২০ খানি পুরান ইত্যাদি। বাঙ্গালী হিন্দুরা আবার ধর্মকে “সমাজের জঞ্জাল” বলতে অভ্যস্ত, তাই ওগুলো বুজরুকি বলে দূরে সরিয়ে রাখে। ভারতের, বিগত ১০০০ বছরের ইতিহাস লেখা হয়েছে “বিদেশী আরবী, পারসী, মোঘলাই এবং তুর্কি শাসক গোষ্টি” দের বেতন ভুকদের দ্বারা এবং পরবর্তি কালে ব্রিটিশদের দ্বারা। হাল আমলের ইতিহাস লেখা হয়েছে মুলত ‘বিদেশী মতবাদ পুষ্ট বামপন্থী ঐতিহাসিকদের দ্বারা এবং ৫৫ বছর ধরে ভারত শাসন করা একটি পরিবারের তোষামোদ কারী দ্বারা। মুক্ত চিন্তার এবং নিরপেক্ষ চিন্তার ঐতিহাসিক যারা আমাদের ইতিহস লিখেছেন,তাদের লেখা ব্রাত্য করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে যে ইতিহাস পড়ানো হয় তার ৮০% বিকৃত এবং কচি মন গুলোকে বিভ্রান্ত করার এক সুকৌশল।
বাংলার বাইরে তবুও ‘তুলসীদাসী রামায়ন, মহাভারতের এবং পুরানের কাহিনী নিয়ে আলোচনা, পড়ানো ইত্যাদির প্রচলন আছে। বাংলায় সেই প্রথা এক কালে থাকলেও আজ তা অবলুপ্ত।
বাঙ্গালী হিন্দু তাই ‘ইতিহাস জানে না’। “All is well” ভাবধারার বাঙ্গালী আজ ‘Ostrich’ হয়ে বালিতে মুখ গুজে ‘সোসাল মিডিয়া, পেটোয়া খবেরের কাগজ,নিউজ চ্যানেল থেকে শিক্ষা লাভ করছে। ইতিহাস জানে না ,তাই শিয়রে সমন কেও চিন্তে পারে না। ঘর ভেদী বিভীষন , ময়ুরপুচ্ছ ধারী “রাজনৈতিক নেতা’ এবং “হিন্দুদের একমাত্র পরিত্রাতা’ বলে কাউকে কাউকে “হিন্দুদের দেবতা” মেনে নিয়ে “চোকের ওপরে ঠুলি পরে, কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা চলবে ঘোড়ার মতো”।।
যুগে যুগে এটাই হয়েছে। তাই, সমস্ত ভারত ‘বিদেশী আরবী/তুর্কি এবং ইংরেজদের হাতে চলে যাওয়ার আগে এই বাংলা গেছে আগে। পশ্চিম ভারত থেকে পুর্ব ভারতের যা দুরত্ব, দক্ষিন ভারতের দুরত্ব তার থেকেও খুব বেশী নয়। দক্ষিন ভারত কে পদানত করতে ‘আঊরংগজেব’ কে ২৬ বছর দিল্লী থেকে গিয়ে দাক্ষ্যিনাত্যে পড়ে থাকতে হয়েছিলো। তাও সব দখল করতে পারে নি। বাংলা দখল করার ইতিহাস তো এক লহমার অতীব লজ্জাকর।
বাঙ্গালী হিন্দুরা চীনকে নিজের বলে ভাবতে ভালোবাসে, সিরাজদৌল্লা তাদের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামী। তীতুমীর তো একেবারে স্বদেশী বীর। রক্ত পিপাসু সুলেমান করনানীর ৫০০০ হাজারী মনসবদার প্রথমে হিন্দু ব্রাহ্মন হলেও এবং পরে ধর্ম পরিবর্তন করলেও, বাঙ্গালীই তো ছিলো। দেশ ভাগের এক প্রধান হোতা এই বাংলার (কলকাতার পার্ক সার্কাসের) সুরাবর্দী ছাড়া আর কেউ নয়।। তার প্রশাসনই তো মুসলীম লীগ নেতা জিন্নার “ডাইরেক্ট একশান” এ মদত দিয়ে দেশ ভাগের ব্যাবস্থা পাকা করেছিলো ? মহান উদার নেতা ফজলুল হক সাহেবই মুসলীম লীগের ‘লাহোর সম্মেলনে ‘ভারত ভাগের প্রস্তাব তোলেন”। তাহলে অন্যকে কেনো দোষ দেই।
আজ পশ্চিম বংগে যা চলছে, তার ফলশ্রুতি যদি “বৃহত্তর বাংলাদেশ” গঠনের মধ্য দিয়ে ভারতের মধ্যেই পরিকল্পিত “মোগলীস্তান” এর সুচনা হয় তাহলে কাকে দোষ দেবেন??? বর্তমান প্রশাসক বৃন্দ, সহযোগী জুড়িদার বামপন্থীদের না দক্ষিন পন্থী বিজেপি কে????????
আমি দোষ দেবো, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়া বাঙ্গালী হিন্দুদের……।