“বেদে কি সতী দাহ প্রথা আছে ? কিভাবে এর উৎপত্তি ? আসুন জানা যাক !! ”
বেদ ভাষ্যকারগণদের মতে বেদে সতীদাহের উল্লেখ নেই। বরং স্বামীর মৃত্যুর পর পুনর্বিবাহের ব্যাপারেই তাঁরা মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে অথর্ববেদের দুটি মন্ত্র প্রণিধানযোগ্য:
অথর্ববেদ ১৮.৩.১ ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্। ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।। হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।
অথর্ববেদ ১৮.৩.২ (এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে) উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি। হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।। হে নারী!মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তব জীবনে ফিরে এস।পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।
বেদের অন্যতম ভাষ্যকার সায়ণাচার্যও তাঁর তৈত্তিরীয় আরণ্যক ভাষ্যে এই মতই প্রদান করেন।
এছাড়াও পঞ্চসতীর এক সতী কুন্তী,শ্রী রাম চন্দ্রের মা কৌশল্লা,কৈকেয়ী,সুমিত্রা,অভিমুন্য পত্নী উত্তরা কেউই পুনরায় বিবাহ না করলেও সতীদাহে যাননি।
তাহলে, কিভাবে এলো প্রাচীন ভারতের সতীদাহ প্রথা ??? (অবাক হবেন)
#সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি – #ঐতিহাসিক কারন –
১. #পুণ্যভুমি ভারতবর্ষে মুসলিম আক্রমণ ও নৃশংস অত্যাচার শুরু করে মুহহ্মদ বিন কাশিম। তার সঙ্গে রাজা দাহির সেন(সিন্ধু, পাকিস্তান) পরাজিত হলে ৭১২ খৃষ্টাব্দের ১৭ জুন দাহিরের দুই স্ত্রী সূর্যদেবী ও পরমল দেবী কাশিমের হাতে বন্দী হন। বন্দী অবস্থায় তারা সংবাদ পান যে, মুসলমানরা নারীদের যুদ্ধবন্ধীর মর্যাদা দেয় না। বরং তারা নারীদের স্বর্বসম্মুখে উলঙ্গ করে নানাভাবে লাঞ্ছিত অপমানিত করে ধর্ষণ করে। তখন তারা বিষপানে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। একজন সৈনিক খবর দেন মুসলমানরা মৃতদেহ কেও ধর্ষন করে। ধর্ম ও আত্মসম্মান রক্ষার্থে অতপর তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, স্বামীর সৎকার করার অনুমতি নিয়ে স্বামীর চিতায় আত্মহূতি দিবেন এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অগ্নিতে আত্মহূতি দেন। তৎপর হতে ভারতের হিন্দু নারীগন মুসলমানদের স্পর্শ হতে রক্ষা পেতে জহরব্রত বা স্বামীর চিতায় আত্মহূতি দিয়ে সতিত্ব , ধর্ম ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে থাকেন। এরপর হতে এ প্রথার নাম হয়ে দাড়ায় সতীদাহ প্রথা।
#সম্রাট আলাউদ্দিন রাজপুত রানা রতন সিংহের স্ত্রী পদ্মাবতীকে হস্তগত করতে গেলে রাজপুত সৈন্যরা বাধা দেয়। অতপর যুদ্ধ করতে করতে সকল পুরুষ মারা যাবার পর দূর্গের অভ্যন্তরে থাকা ১৪হাজার নারী সহ রানী পদ্মাবতী জহরব্রত উৎসব পালন করে মুসলমানদের হাত হতে রক্ষা পান। মুসলিম শাসন অবসানে প্রথাটি এমনি এমনি বিলু্প্ত হয়ে যায়। ২. ১৩০০ শতাব্দিতে অশিক্ষত আলাউদ্দিন খিলজী (সম্রাট জালাল উদ্দিন খিলজীর মৃত ভাইয়ের ছেলে ) ছিলেন ভারতের সম্রাট । তিনি সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য আরব থেকে কিছু ইসলামী আইন বিশ্বেষজ্ঞ আনয়ন করেন । সেই সময়ে অমুসলিম প্রজাদের জন্য ২টি কর আইনের জন্ম হয়
১ ) #নজর_এ_মরেচা ২ ) #নজর_এ_বেওয়া । ১ ) #নজর_এ_মরেচা – অমুসলিম প্রজাদের ছেলে বা মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পারমিশানের নেওয়ার জন্য কর । ২ ) #নজর_এ_বেওয়া – অমুসলিম প্রজাদের কোন নারী নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হইলে তাহাকে স্বামী বা পিতার গৃহে রাখিবার জন্য বার্ষিক কর । #এই দুই করের জন্য নির্দিষ্ট কোন অর্থের পরিমাপ ছিল না , সেই সময়ের পরগনার দেওয়ান বা কাজী যাহা ধার্য করিতেন
প্রজারা তাহাই দিতে বাধ্য থাকিত যাহারা সেই অর্থ দিতে অসমর্থ হইত, তাহাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতো বা সেই কন্যা বা বধুকে বাজেয়াপ্ত করে হাউলিতে চালান করা হতো । এই সকল নারীকে যে সুরক্ষিত বাড়ীতে রাখা হতো তাহার নাম “হাউলি “বা “হাভেলী” । #এই হাভেলীতে থাকা অবস্থায় সেই নারীদের যে বাচ্চা হতো সেই বাচ্চাদের নাম হতো “ নজরতরপের বাচ্চা”। সেই বাচ্চা ছেলে হলে তাকে ধর্ম শিক্ষা ও অস্ত্র শিক্ষা দিয়ে সেনাবাহীনিতে নিয়োগ দেওয়া হতো । আর মেয়ে বাচ্চা হলে তাদেরকে নর্তকী হিসাবে প্রস্তুত করা হতো । #নজরে বেওয়া সম্মন্ধ্যে আবার ভিন্ন কাহিনীও জনশ্রুতি হিসাবে কিংবদন্তি আছে যে , কুমারী ও বিধবাদের সন্তান সম্ভবা বা সন্তান প্রসব হলেই কেবল তাদেরকে এই কর প্রদান করতে হতো । আর না দিতে পারলেই সেই মা ও বাচ্চা সহ হাউলীতে পাঠানো হতো । পরিশেষে সেই বাচ্চা ছেলে হলে সৈনিক মেয়ে হলে নর্তকী হিসাবে ভবিতব্য নির্ধারন হতো । #এছাড়াও দীনেশ চন্দ্র সেন তার “বৃহৎ বঙ্গ পুর্বোক্ত” গ্রন্থ এবং “প্রাগুরু” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যে কোন রমনী ভাল নাচিতে ও গাহিতে পারিতেন তাহলে তার রক্ষে ছিল না । ময়মনসিংহ জেলার মুসলমান নবাবের নিযুক্ত এক শ্রেনীর লোক ছিল, যাদের উপাধি ছিল “সিন্ধুকী”। হিন্দু ঘরের রূপবতী ও গুনবতী রমনীদের ঠিকানা নবাব সরকারে জানিয়ে দেওয়াই তাদের কাজ ছিল । এর বিনিময়ে তারা বিস্তর জায়গীর পাইতেন” ।
#কুমারি মাতা হওয়া ও নবাবের লোলুপ দৃস্টির হাত থেকে বাচার জন্য শুরু হয়েছিল গৌরীদান প্রথা । আর বিধবা মাতা ও সুন্দরী বিধবাদের প্রতি মুসলিম জায়গীর ও নবাবের কুদৃস্টি / “নজরে বেওয়ার” হাত থেকে বাচার জন্য হিন্দু সমাজপতিরা সতীদাহ প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন বলেই জানা যায় ।