ভারতে কি মুসলিম কমিউনিটিতে একজনও প্রগতিশীল মানুষ নেই যিনি মুসলিমদের হয়ে কথা বলতে পারেন? ভারতের মুসলিমদের নেতৃত্ব কেন মসজিদের মোল্লারা দেয়? ভারতে মুসলিমরা ভাল নেই, তারা বিপন্ন… এ কথা লিখে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধিকে চিঠি লিখেছে দিল্লি মসজিদের ইমাম বুখারী। ফতোয়াবাজ নারী নিপীড়নকারী, তিন তালাক, বহু বিবাহর মত কুখ্যাত বর্বর আইন চাওয়া ক্রিমিনাল মাইন্ডের এইসব মোল্লারা কেন ভারতের মুসলিমদের হয়ে বার বার কথা বলে?
আমি ঠিক বুঝতে পারি না ভারতের মুসলিমরা আসলে প্রকৃতপক্ষে কাদের হাতে বিপন্ন? মাত্র ক’দিন আগে বারেলি এলাকার শাহি ইমাম মুফতি মহম্মদ খুরশিদ, মুফতি আফজল রিজভি এবং শিরান রাজা খান নিদা খান নামের একজন মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে, যে বা যারা নিদা খানের মাথার চুল কেটে আনতে পারবে তাকে পুরুষ্কৃত করা হবে! নিদা খান হচ্ছেন সেই মহিলা যিনি মুসলিম পুরুষের তিন তালাক দেবার অধিকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ভারতের মুসলিম নারীরা ইসলামের শরীয়তী আইনে যে মানসিক শারীরিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, ভারত জুড়ে তিন তালাক, পুরুষের চার বিবি রাখার অধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া থেকে বুঝা যায়। ইমাম বুখারীরা হিন্দুত্ববাদীদের হাতে মুসলিম হত্যা নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে আর মুসলিম নারীরা এইসব ইমাম বুখারীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে। ইমাম বুখারী রাহুলের কাছে চিঠি লিখেছে ভারতে মুসলিমরা বিপন্ন। এই ‘বিপন্ন’ প্রায় প্রজাতীটি কোন বুকের পাটায় ভর করে একজন নারীর মাথার চুল কেটে আনার ঘোষণা দিতে পারে? কেমন করে এইসব বিপন্নদের ভয়ে তসলিমা নাসরিনকে কোলকাতা থেকে বের করে দেয়া হয়? যখন তখন ফতোয়া দিয়ে মাথার দাম তুলছে, টিভি শোতে নারীদের গায়ে হাত তুলছে…। উপমহাদেশে সংখ্যালঘুদের যে কনসেপ্ট আমাদের জানা এর সঙ্গে এসব মেলানো যায় না। আমরা কি বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে কোন হিন্দু পুরোহিতকে এভাবে কাউকে হত্যা উশকানি দিতে কখনো দেখেছি?
নি:সন্দেহে ভারতে মুসলিম পরিচয়ে মানুষ নিগৃহীত হয়। সমকালীন ভারতীয় লেখকদের লেখা থেকেও সেটা স্পষ্ট জানা যায়। কিন্তু তাদের হয়ে কেন কথা বলবে মুসলিমদেরই শরীয়া আইনে নিপীড়নকারী মোল্লা মুফতিরা? রাহুল গান্ধি বলেছেন, কংগ্রেস মুসলিমদের দল। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করতে গিয়ে কখনো কি বলতে পারবে আওয়ামী লীগ হিন্দুদের দল? এ কথা বললে আওয়ামী লীগের ভোট শূন্যে নেমে যাবে। কিন্তু ভারতে এরকম উক্তি করা থেকে বুঝা যায় ভারতে সেক্যুলার মাইন্ডের মানুষই সবচেয়ে বেশি। রাহুল গান্ধি বলেন আর নরেন্দ মোদি এরাই সবাই পলিট্রিশিয়ান- এরা ভোটের জন্য সবার পা ধরতে পারে, পাবলিক যেটা বেশি খায় তারা সারাদিন সেটাই জাবর কাটে। যদি ‘মুসলিমদের দল’ বললে ভোট কমে যাবার ভয় থাকত তাহলে রাহুল কোনভাবেই ঝুঁকি নিতো না। এটাই ভারতকে নিয়ে আশ্বস্ত হওয়ার বিশেষ কারণ। গোটা উপমহাদেশে ভারতে সেক্যুলারিজমকে শক্ত ভিত্তির উপর টিকে থাকতে হবে। এটা না হয়ে ভারত যদি ‘হিন্দু পাকিস্তান’ হতে যায় তাহলে গোটা উপমহাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশ পাকিস্তান ধর্মীয় মৌলবাদে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এভাবেই একশ বছর পর হলেও গোটা উপমহাদেশ ফের এক হয়ে যাবে।