একটি জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়া খুব সোজা। মেরুদণ্ডটা ভেঙে দিতে পারলেই হলো, কোনদিন আর যেন সেই জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় তাতে করে। একটি দেশ কিংবা জাতির মেরুদণ্ড তার ইতিহাস, তার সংস্কৃতি, তার বুদ্ধিজীবী শ্রেনীটিকে পঙ্গু করে দিলেই হয়, বাকিটুকু এমনিতেই হয়। ডোমিনোর মত একটা একটা করে ধসে যায় তার আত্মপরিচয়, নিজস্বতা। তারপর যেটুকু বাকি থাকে, ধর্মের আফিম আর স্বেচ্ছাচারী শাসন ক্ষমতার বদৌলতে সেটুকুকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে খুব বেশি সময় লাগে না।ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের সময় থেকে আধুনিক সময়ে রক্ষণশীল ওয়াহাবি ইসলামের স্বেচ্ছাচারি আগ্রাসন পর্যন্ত এই ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস একের পর এক সেই পতনের সাক্ষী হয়ে থেকেছে।
কিন্তু বারবার হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও সাধারণ মানুষের মাটির যে সংস্কৃতি, যে শেকড় তাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই মাটির সাথে বেঁধে রেখেছে, সেই সংস্কৃতি একসময় প্রতিরোধ ভেঙে মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়িয়েছে। অন্তত গত শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এমনটাই দেখেছি। তারপর এলো আধুনিক, রাষ্ট্রীয় যূথবদ্ধতার কাল। খনিজ সম্পদ, নিত্যনতুন আধুনিক অস্ত্র, আর সাম্রাজ্যবাদী জোটের দেখানো পথ দিয়ে এলো অন্য এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদ।
এই আধিপত্যে কাগজে কলমে রাষ্ট্রের দখল কি মালিকানা হাত বদল হয় না, এক চুলও নড়ে চড়ে না আধুনিক গণতান্ত্রিকতার মুখোশ।
রাতের আঁধারে কিংবা বন্ধ দরজার পেছনের লেনদেনের কারসাজিতে শুধু বিক্রি হয়ে যায় একেকটা দেশ, তাদের মানুষ, মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ।
এমনটা আমরা ঘটতে দেখেছি আফগানিস্তানে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। কিন্তু কখনো চরমতম দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি, আমাদের বাংলাদেশেও এমনটি ঘটবে, মুক্তচিন্তার ধ্বজাধারী তথাকথিত সেক্যুলার শক্তিটিই আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে রাতের অন্ধকারে পেট্রো ডলার আর ক্ষমতার লোভে আমাদেরকে বিক্রি করে দেবে ইসলামের অন্ধকারতম শক্তি ওয়াহাবিদের হাতে। আমাদের স্বাধীনতার মুক্তচিন্তার চেতনা বিক্রি করে কিনে আনবে মদিনা সনদ বাস্তবায়নের স্বপ্ন।