আজ বড়দিন। যীশু খৃষ্টের জন্মদিন।
কয়েক দিন ধরে “আমার যীশু – তোমার যীশু” বা “আমার সান্তা – তোমার সান্তা” জাতীয় কিছু ব্যাঙ্গাত্মক পোষ্ট করেছি, আরো অনেকেই করেছে। কেউ ভাববেন না যে যীশু খৃষ্টের উদ্দেশ্যে ঐ সব লেখা। দুর্গাপুজো এলেই এক শ্রেণীর আঁতেল “আমার দুর্গা – তোমার দুর্গা” শিরনামে জ্ঞানগর্ভ বাণী বিতরণ করে, দোলের সময় জলের অপচয় নিয়ে লেকচার ঝাড়ে, দীপাবলিতে পরিবেশ প্রেমী হয়ে ওঠে, কালীপুজোয় পশুপ্রেমী সাজে। লেখাগুলো এসবের বদলা। যীশুকে মহামানব হিসাবে জেনেছি এবং নিজস্ব বুদ্ধি দিয়ে তা মানিও। যীশু মহামানব, যীশু অবতার স্বরূপ।
আমার ব্যাঙ্গ সেই সব লোকগুলোকে, যারা নিজেকে চেনে না, নিজের সম্পদের খবর রাখে না, নিজের ঐতিহ্যের মূল্য দেয় না; কিন্তু বিদেশের কিছু দেখলেই আহা উহু করে নেচে বেড়ায়। বাড়িতে তুলসী গাছ নেই, কিন্তু বাজার থেকে শীতের রাতে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে একখানা ক্রিসমাস ট্রি কিনে এনেছে। জীবনে বাড়িতে পিঠে বানাল না, কিন্তু ফ্লুরিজের কেক তার চাইই চাই। ক্রিসমাস উপলক্ষে ইউরোপে কত পাইন গাছ কাটা হয় তার খবর এরা রাখে!
যীশুর জীবন নিয়ে অনেকেই কাজ করেছেন। ভারতবর্ষীয় বহু মনীষীর অনুমান যীশু ভারতে এসেছিলেন, কাশ্মীরে হিন্দু ও বৌদ্ধ মতবাদে অনুপ্রাণিত হন। স্বামী অভেদানন্দের মতে হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রচারকরা এশিয়ার পশ্চিমতম ভূখন্ডে পৌঁছেছিলেন। ইউরোপেও তাঁদের মতবাদ চর্চা হত। সেই ভাবধারাই শুষ্ক ইহুদী জীবনে রসের সঞ্চার করেছিল। যার ফল খৃষ্টবাদ। সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে তৎকালীন ইহুদী সমাজে যীশু যে সহনশীলতা ও ক্ষমার আদর্শ এনেছিলেন তা হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রভাব ছাড়া কষ্টকর কল্পনা। তাঁর মতে মিশর অবধি হিন্দু-বৌদ্ধ প্রভাব ছিল। অর্থাৎ হয় যীশু ভারতে এসেছিলেন, অথবা ভারতীয়রা যীশুর ওখানে গেছিল। যোগাযোগ একটা হয়েই ছিল।
যীশু খৃষ্টান ছিলেন না, তিনি ইহুদী ছিলেন। খৃষ্টধর্মের প্রচার ও প্রসার তাঁর মৃত্যুর পরে। নানা অলৌকিকতা মিশেছে তাঁর জীবনীতে তখন। ধর্ম ব্যবসায়ীরা যীশুর নাম নিয়ে ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদ প্রসারে নেমে পড়ে। যার কার্যকলাপ এখনো চলছে।
ভারতবর্ষে খৃষ্টধর্মের বিশেষ কিছু দেওয়ার নেই, বরং নেওয়ার আছে। মহত্তম আদর্শ, উচ্চতম দর্শন ভারতেই জন্ম নিয়েছিল। মিশনারিরা বুঝেছিল যে ভারতীয় ধর্ম জীবনে প্রবেশ করতে গেলে দারিদ্র ও ছলনার আশ্রয় ছাড়া গতি নেই। তাই ছলনার আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে খৃষ্টধর্মের প্রসারের জন্য। সেই ভুল বোঝানো ও মগজ ধোলাই আজও চলছে। সেবার আড়ালে ধর্মান্তর চালিয়ে যাচ্ছে মিশনারিরা। এর সাথে ছিল শহুরে বুদ্ধিজীবিদের মগজ ধোলাই। যার ফল মধুসূদন, কৃষ্ণমোহন, রামগোপাল প্রভৃতির ধর্মান্তর। সমুদ্রপথে পর্তুগীজ দস্যুদের আক্রমনেও অনেক ধর্মান্তর হয়। বাংলাদেশের গোমস, রোজারিও ইত্যাদি খৃষ্টান পদবী সেই স্মৃতিই বহন করছে।