এক অমানুষকে আমি চিনি যে ঢাকায় একটি গার্মেন্টেস এ চাকরী করে,স্ত্রী এবং সে মিলে প্রতি মাসে ৩২ হাজার টাকা আয় করে!
একে দেখলাম রোহিঙ্গাদের জন্য মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার ঘোষণা দিয়েছে! বললাম যুদ্ধে যাবার আগে আপনার বাসায় দুজন রোহিঙ্গা আশ্রয় দিন।সে বললো ‘একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমি দুজন মুসলিম ভাই বোনকে আশ্রয় দেবো,খরচ চালাবো,আল্লাহতালা আমাকে সেই তৌফিক দিয়েছে,আমার ঘরে এখন মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা!’
এবার ধৈর্য রাখতে না পেরে বললাম,এই শুয়োর তোর ৬৫ বছর বয়সী বাপ কেন এই বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে খায়?গত ৬ বছর যাবত তুই কেন তোর বৃদ্ধ বাবা মাকে একটা টাকা সাহায্য করিস না? তোর বাপ মা কি অমুসলিম?
উত্তর দিতে পারলোনা,তারপর এরা যেভাবে পালিয়ে যায় সেভাবেই গেলো!
এটা মাত্র একটা উদাহরণ,এই যে যারা অত্যাচারিত সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে ‘মানুষ’ যুক্ত না করে ‘মুসলিম’ যুক্ত করে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম’ হিসেবে চিহ্নিত করে কান্নাকাটি করছে এরাই হলো এই পৃথিবীর অশান্তির কারণ!
বেলুচিস্তানে নিয়ম করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেলুচ নারীদেরকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে,তারপর ইচ্ছেমতো ধর্ষণ করছে অনেককে হত্যাও করছে।তাছাড়াও এই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত সাধারণ বেলুচ নারী পুরুষ শিশুদের হত্যা করে যাচ্ছে!
সৌদিআরব পাশের দেশ ইয়েমেনের সাধারণ মানুষদের উপর ধারাবাহিক বর্বরতা চালিয়েই যাচ্ছে।ইয়েমেনের চারপাশ দিয়ে খাদ্য সাহায্য অন্যান্য সাহায্যের পথ বন্ধ রেখেছে এই সৌদিআরব,ফলে কয়েকলক্ষ সাধারণ মানুষ সেখানে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে,না খেয়ে মারা যাচ্ছে শিশুরা।অন্তত চার থেকে পাঁচ লক্ষ শিশু খাবার না পেয়ে কঙ্কালের উপর চামড়া জড়িয়ে কেবল প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছে!তাছাড়া সৌদিআরব এর নিয়মিত বিমান আর স্থল আক্রমণে প্রতিনিয়ত মরছে সাধারণ ইয়েমেনের মানুষগুলি!
এই যে তুরস্ককে যারা এখন বিরাট মানবতাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে দেখছে,এই তুরস্কই নিয়মিতভাবে কুর্দিদের হত্যা করছে,এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই যাচ্ছে তারা নির্মমভাবে!
বাংলাদেশের মুসলিমরা কোন কথা বলছে এই হত্যাগুলির বিরুদ্ধে? বলছে না।
মায়ানমার রোহিঙ্গার সাধারণ মানুষদের হত্যা করছে বলে বাংলাদেশের এরা মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত নাকি!মুসলিম হত্যার জন্য যদি মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে হয় তাহলে একই কারনে সৌদিআরব পাকিস্তান তুরস্কের বিরুদ্ধেও যুদ্ধে যেতে হবে! কেউ কি যাবে এরা বা যেতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে?
কখনোই যেতে চাইবে না,কারন এদের কাছে মুসলিম মুসলিমদের মারলে কোন সমস্যা নেই কিন্তু কোন অমুসলিম পায়ুপথ দিয়ে বাতাস ছাড়লেও এরা যুদ্ধ ঘোষণা করে! ভাবছেন এরা মায়ানমারেরর বিরুদ্ধে এই যে ক্ষোভ বা যুদ্ধ ঘোষণা এগুলি মুসলিম প্রীতির জন্য হচ্ছে?
একেবারেই না,আসলে এদের ভেতর মানবপ্রেম এমনকি মুসলিমপ্রেম বলে কিছুই নেই,এদের ভেতর আছে শ্রেফ অমুসলিমদের প্রতি বা নিজ ধর্মের নানান গোত্রের একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ হিংসা হিংস্রতা!এরা মুসলিম প্রীতির জন্য মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেনা,এমনকি মায়ানমার সরকারের বর্বততার বিরুদ্ধেও এরা যুদ্ধ ঘোষণা করছেনা।এদের যুদ্ধ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে শুধুইমাত্র অমুসলিম বিদ্বেষীতা প্রকাশের সুযোগ আসার কারনে।
এদের ভেতর যদি রোহিঙ্গাপ্রেম বা মুসলিমপ্রেম থাকতো তাহলে এরা যুদ্ধ ঘোষণার আগে নির্মমভাবে দিন কাটানো সাধারণ রোহিঙ্গাদের দু একজনকে নিজ বাড়িতে এনে আশ্রয় দিতো।
মুসলিমদেরকে সবার মতো মানুষ না ভেবে কেবল মুসলিম ভাবা এবং অমুসলিমদের প্রতি বা নিজ ধর্মের ভিন্ন গোত্রের প্রতি ভয়াবহ হিংসা বিদ্বেষ হিংস্রতা ধারণ করে নিজেদের অসুস্থ করে রাখার ফলেই মূলত সারা বিশ্বে মুসলিমরা আজ ঘৃণার পাত্র অবহেলার পাত্র হয়ে গিয়েছে! নিজেরা নিজেদের হত্যা করছে এবং অন্যরাও তাদের হত্যা করার সুযোগ পাচ্ছে,তাদের ভূখণ্ড দখল করার সুযোগ পাচ্ছে।
এই হিংসা হিংস্রতা বিদ্বেষীতা পরিহার করে যতদ্রুত সম্ভব নিজেদেরকে কেবলই মুসলিম না ভেবে অন্যান্য সবার মতো মানুষ ভাবতে না পারলে আগামী পাঁচ দশকের ভেতর একটিও মুসলিম প্রধান দেশ আস্ত থাকবেনা,সবগুলিই ইরাক আফগান লিবিয়া সিরিয়ার মতো পোঁড়া মাটিতে পরিণত হবে!
লেখক, নাহিদ এনাম।