পদ্মিনী_জৌহর_এবং_কয়েকটি_কথা…!!!

#পদ্মিনী_জৌহর_এবং_কয়েকটি_কথা:
.
.
কখনো অপমানিত হয়েছেন?? সপাটে থাপ্পড় খেয়েছেন বিনা দোষে লোকের সামনে??
খাননি?? বেশ, আর পড়বেন না।
যদি খেয়ে থাকেন, তবে আপনার মোটামুটি দুরকম ইচ্ছা হবার কথা।
১. কুকুর যেমন প‍্যাটপ‍্যাট করে লেজ নাড়ায় তেমন নাড়ানো।
২. পাল্টা মারের ইচ্ছা।
.
২ নম্বরটা যদি হয়, এবং যদি বোঝেন আপনার পাল্টা মারার সিচুয়েশন নেই, এবং এই অপমানটা পাল্টা চলতেই থাকবে, তখন আপনার কি করতে ইচ্ছা হয়? সম্ভবত দুরকম।
১. পালিয়ে যাওয়া। পরে ক্ষমতা হলে প্রতিশোধ, অথবা লুকিয়ে থাকা।
২. নিজের মৃত‍্যু চাওয়া
.
ঠিক এই দ্বিতীয় কারণে পরাজিত যোদ্ধা বন্দী দাস হবার থেকে মরতে চাইত। ঠিক এই কারণে পরাজিত জীবনধারণের চেয়ে ক্ষত্রিয় পুরুষ মৃত্যু পছন্দ করত।
.
আপনার মনে আছে অলিন্দ যুদ্ধের কথা? বাদল বলে একটি ছেলে ছিল সেখানে। সে কি করেছিল জানেন? সে এরকম করেছিল যে, যখন দেখল যে সে এবার বৃটিশ গুর্খা বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়ে বন্দী হতে চলেছে, তখন সে সুইসাইড করল।
কি কাপুরুষ ভাবুন তো!
ও হ‍্যাঁ, শুধু বাদল নয়। বিনয় বলে আরেকটা ছেলে ছিল। সে মরার চেষ্টা করে ব‍্যর্থ হয়। মাথায় ফুটো হয়েও বেঁচে থাকে। তারপর ইতিহাস সাক্ষী থাকে ভয়ংকর কাপুরুষতার। বিনয়ডডাক্তারির ছাত্র। সে বোঝে যে সে সেরে উঠছে। তখন সে কাপুরুষতা করে। মেঝেতে আঙ্গুল ঘষে, সেই আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয় ব‍্যান্ডেজ সরিয়ে ক্ষতর মধ‍্যে। খুঁচাতে তাকে নিজের ক্ষত। সেপটিক হয়। বিনয় মারা যায়।
.
ওয়েল, মারা যাওয়াটা উৎসবের নয়। আনন্দের নয়। কষ্টের। প্রচণ্ড যন্ত্রণার। অসহায় হয়ে মৃত‍্যুকে বেছে নেওয়ার। বিনয়, বাদলের মৃত‍্যু অভিপ্রেত নয়। আমার কাছেও নয়, তাদেরও কাছেও নয়। তারা মরতে চায়নি। তারা জিততে চেয়েছিল। কিন্তু তার চেয়েও বেশী চেয়েছিল আত্মসমর্পণ না করতে। হ‍্যাঁ এটা চয়েজ। এটা তাদের চয়েজ। এই চয়েজটা রিটেল শপে করা চয়েজের নয়। এটা চয়েজের মাধ্যমে “আকাঙ্খিত বস্তুলাভ” নয়। সেলিব্রেশনের চয়েজ নয়।
এ চয়েজ, আক্রমণকারীর প্রতি তীব্র ঘৃণাপ্রকাশের চয়েজ। অনেক আশার স্বপ্নকে নিজ হাতে বলিদান করার চয়েজ।
.
জৌহরব্রত কোনভাবেই মহান কোন প্রথা নয়। যারা সেটাকে মহান প্রথা বলে সেলিব্রেট করে তাদের এলাকার সেক্স রেশিও দেখেই বোঝা যায় তারা কেন সেলিব্রেট করে। তারা বর্বর।
কিন্তু…
ধরুন কমলা একটি মেয়ের নাম। তাকে প্রতিরাতে হাতবদল হতে হয়। যন্ত্রণা অপমানের। নারীর সম্মান যোণীতে বলে নয়, একটি পুরুষকে ভরা হাটে ন‍্যাংটো করলে তার সম্মানও যায় বলে সে মনে করতে থাকে। ঠিক সেই সূত্রেই, কমলাদেরও যেখানে সেখানে ন‍্যাংটো হওয়া ভালো লাগত না‌ বলেই ভাবা যায়। তার উপর শারিরীক যন্ত্রণা। আগের দিন, পরিবারের সবাইকে খুন হতে দেখে পরের দিন থেকে বিছানা গরম করতে থাকা… করতেই থাকা…. মৃত্যুর আগে যার থেকে কোন মুক্তি নেই….
ধরা যাক পদ্মিনী তার পত্রবান্ধবী। সে জানত এই সমস্ত কিছু, যেমন বিনয় বাদলরা জানত আত্মসমর্পণের পরের ঘটনা… অথবা হয়তো এরা কেউ আসলে অপমানিত হয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি…
.
রক্তের গন্ধে ছুটে আসা হায়নার পালের ঝুলে পড়া জীভের ছিটকানো লালার সামনে থেকে উধাও হওয়া যন্ত্রণা মেশানো স্বপ্নের নাম পদ্মাবতী। জৌহর কোন গৌরব নয়, চয়েজ। অসহায় হয়েও আক্রমণকারীর বিজয়ী ইগোকে স‍্যাটিসফাই হতে না দেবার অনভিপ্রেত চয়েজ।
এটা গ্লোরী নয়। লজ্জা। লজ্জা বর্বরদের কাছে পরাজয়ের। লজ্জা নারীকে দুর্গা বানাতে না পারার। লজ্জা সমাজের।
পদ্মিনীর নয়। পদ্মিনীদের নয়।
তারা শহীদ। ইসলামী আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে সাধ‍্যমতো লড়াই করে যাওয়া বীরাঙ্গনা‌।
.
প্রীতিলতারা আত্মসমর্পণ করেন না। মৃত‍্যুকে বেছে নেন। সে মৃত্যু বেদনার। পটাশিয়াম সায়নাইড খাওয়ার পদ্ধতিটা গৌরবের নয়।
প্রীতিলতারাও যেমন ভীরু নন।

Via Diptarup Samyadarshi